Out Stealing Horses এক অন্য গল্প গাঁথা
ঋতব্রত ঘোষ
Out stealing horses স্ক্যাণ্ডিনেভিয়ার ছবি, রিলিজ হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই বছরই বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে রৌপ্য ভল্লুক সম্মানে ভূষিত হয়। পরিচালক – হ্যান্স পীটর মোল্যাণ্ড। পের পেটারসনের লেখা একই নামের উপন্যাস থেকে তৈরি চলচ্চিত্র এটি। উপন্যাসের নামটি দ্ব্য্যর্থবোধক। আক্ষরিক অর্থ বাদ দিলে out stealing horses-এর আরেকটি অর্থ হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই কোডটি ব্যবহার করা হত মানুষ অথবা অস্ত্র বা অন্য সামগ্রী নরওয়ের বাইরে পাচার করার সময়। এই দুই অর্থের ব্যাখ্যান আপনি এসেছে গল্পের ফ্ল্যাশব্যাকে।
কাহিনী সূত্রপাতের সময়কাল জার্মানী অধিকৃত নরওয়ের ৪০এর দশক এবং তৎপরবর্তী সময়। তখন গল্পের নায়কের বয়স ছিল ১৫ বছর। সে তার বাবার কাছে ছুটি কাটাতে এসেছিল। পাহাড়ের নীচে একখানা গ্রাম। চারদিকে গগনভেদী গাছের জঙ্গল। তার বাবা গাছ কেটে লগ্ বানাতো, লগের ঢের লাগানোর পর একদিন সময় বুঝে ছেড়ে দিত নদীতে। ভাসতে ভাসতে কাঠের লগ্ গুলি নদীপথে পৌঁছত গিয়ে নীচে উপত্যকার বর্ধিষ্ণু বাণিজ্যকেন্দ্রে, সেখানে ওই লগের সওদা হত। বাবার ব্যাঙ্ক একাউন্টে টাকা জমা পড়ত। বাবা বোধহয় তার হিসেবও রাখত না। বাবার সঙ্গে ছিল দুই সাগরেদ। এদের মধ্যে একজনের নাম ধরা যাক, ওলাভ। অন্যজনের নাম পাওয়া যায় না গল্পে। সে ছিল জন্-এর বাবা, জন্-এর যমজ দুই ভাই ছিল, লারস্ এবং অড, লোডেড বন্দুক নিয়ে খেলতে খেলতে লারস্ অড্-কে অসাবধানতা বশত গুলি করে মেরে ফেলে, সে কথা নায়ক জানত। জন্ এই ছবির নায়কের বন্ধু। তারা একসাথে মিলে ঘোড়া চুরি…..সে কথায় পরে আসছি। গল্প আরেকটু এগোক।
লোকালয় থেকে দূরে, বহু দূরে, ট্রণ্ড নামে এক বিপত্নীক বৃদ্ধের একাকী জীবন নিয়ে তৈরি হচ্ছে ছবি। গল্পের নিরিখে তার বয়স বছর ৬৭। এক পথ দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী মারা যায় কয় বছর আগে, তারপর থেকে এই স্বেচ্ছা নির্বাসন সে নিজেই বেছে নিয়েছিল। দুর্ঘটনায় চালকের আসনে ছিল বলে অল্পের জন্য বেঁচে যায় সে, দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে অবশ্য বাঁচাতে পারে নি। বিড়বিড় করে তাকে বলতে শোনা যায় – I don’t feel guilt. Only loss. মিলেনিয়ম-শেষ-হয়ে-আসা আসন্ন সময়। টিভিতে ভেসে উঠছিল Y2K বাগ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা। ট্রণ্ড ভাবে, আজকের রাতটায়, শতাব্দীর শেষ রাতে একা একা প্রচুর মদ্যপান করবে সে। তারপর, মৃতপ্রায় কিন্তু মৃত নয়, এই অবস্থায়, পোঁদ উল্টে ঘুমাবে অনেক বেলা অবধি।….. অপমানিত বালক ট্রণ্ড আর কখনো ফিরে যায় নি বাবার কাছে, বাবার সাথে তার আর কোনোদিন দেখা হয় নি। সিনেমাটি দেখতে দেখতে আরো এক অপমানিত বালকের প্রসঙ্গ মনে পড়ছিল। নবারুণ লিখেছিলেন অনন্য রায়কে নিয়ে – “প্রথিতযশা প্রৌঢ় হবার চেয়ে অপমানিত বালক হওয়া ভালো।” ঋত্বিক ঘটকের যুক্তি তক্কো গপ্পো ছবিতে নকশাল নেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অনন্য। ওই ছবির সহকারী পরিচালকও ছিলেন। তিনি ছিলেন এক অপমানিত বালক। সব খুইয়ে আজ একলা ট্রণ্ড হয়ত ভাবে তার বাবা যেমনটা বলেছিল, “You decide when it will hurt.” অতীত জীবনের সাথে কোনো বোঝাপড়া নয়, নয় কোনো সমন্বয়। এ এক অন্তহীন পথ চলা, জাগতিক বেড়াজালের ঘেরাটোপ এড়িয়ে।