পৌরাণিক যুগেও মহামারী
পিনাকী চৌধুরী
যুগে যুগে, কালে কালে বারে বারে হানা দিয়েছে মহামারী। ‘ মড়ক’ শব্দটির ধাতু হল ‘ মৃ’ , যার অর্থ হচ্ছে মরণ। অতিমারি বা মহামারী এসে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে নিয়ে গেছে, জনপদ খাঁ খাঁ করেছে! মড়কের কথা রয়েছে বিষ্ণুপুরাণে , ঠিক তেমনই মড়কের উল্লেখ্য রয়েছে বৃহৎসংহিতায়।
মনসামঙ্গল কাব্যের একটি ছত্রে রয়েছে ” মোর দেশে পরদল আইল মহামার !” বাস্তবে মহামারী যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন সত্যিই যেন জীবন অর্থহীন ও জীবনযাপন দু্ঃসহ মনে হয় ! ঠিক যেমনটি বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার কারণে আমাদের জীবনে যে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে ! কিন্তু মহামারীর কবলে পড়েও যাঁরা বেঁচে যান , তাঁদের কি অবস্থা হয় ? বলাইবাহুল্য যে, জীবনের চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করাটা তাঁদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়ায় । কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল তখন মাৎস্যন্যায় প্রবল হয় ! কিন্তু তাঁদের জীবিকার কি হবে ? নড়বড়ে হয়ে যায় তাঁদের সমস্ত সত্তার ভিত! এক অলৌকিক বিস্ফোরণে মানুষের ভিতরের সেই জ্বলন্ত অঙ্গার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়! দিশেহারা হয়ে পড়েন !
এবার আসা যাক রামায়ণের প্রসঙ্গে। সীতার জন্মের প্রেক্ষাপটে রয়েছে কিন্তু সেই মহামারী। মিথিলা রাজ্যে অকাল মহামারীতে যেন দেশ উজাড় হয়ে গেল! এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মৃতদেহের স্তুপ! সমৃদ্ধশালী সেই রাজ্যটি যেন তখন খাঁ খাঁ করছে। চাষ আবাদ কার্যত বন্ধ হয়ে গেল! যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের জীবিকা প্রশ্নের মুখে ! ওদিকে রাজা জনক ছিলেন দার্শনিক ও বিজ্ঞ মানুষ। কিন্তু তিনি কোনো সমাধান খুঁজে না পেয়ে তাঁর কুলগুরু শতানন্দের শরণাপন্ন হলেন। শতানন্দ রাজর্ষি জনককে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করতে উপদেশ দিলেন।
অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! রাজা জনক মা লক্ষ্মীর উপসনা করতে রত হলেন। দেবী লক্ষ্মী প্রসন্ন হলেন। তিনি বললেন ” হে পিতা, আপনি নিজ হাতে লাঙ্গল ধরুন, নিজের শ্রমে চাষ করুন, ফসল ফলান। আপনার প্রজারা আবার সেই সুখ সমৃদ্ধির রাজ্য আলোকিত করবে!” রাজা জনক হলকর্ষণ করতে আরম্ভ করলেন। হলকর্ষণ করতে করতে জনক রাজা লক্ষ্মীকে লাভ করলেন, যাঁকে আমরা সীতা বলেই অভিহিত করি।