Interview: ম্যাজিক জিনিসটা পুরো অঙ্কের মতো, ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম

Interview: ম্যাজিক জিনিসটা পুরো অঙ্কের মতো, ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম

এ দ্যাখো ভানুমতীর খেল ভাই রে ভানুমতীর খেল… এই বুঝি হাওয়া থেকে একটা কয়েন চলে এলো, এই দ্যখো জ্বলে উঠল আগুনের ফুলকি। টুপির ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো খরগোশ রে ভাই। অবাক করা কান্ড দ্যাখো হলো রুমাল ভ্যানিশ! ক্রিয়েটিভ ম্যাজিশিয়ান, স্টাইলিশ ম্যাজিশিয়ান হিসেবে তাঁর নাম বেশ পরিচিত। কাজ করেছেন টিভি সিরিয়াল, সিনেমাতেও, আর ম্যাজিক দিয়ে স্টেজ মাতিয়ে রাখতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আমরা আজ তৃতীয়পক্ষে কথা আড্ডায় ম্যাজিশিয়ান অরিন্দমের সঙ্গে।

ম্যাজিক! এই শব্দটা মাথায় এলেই কী মনে হয় আপনার?
ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- ম্যাজিক শব্দটা মাথায় এলেই প্রথমে মনে পড়ে ম্যাথমেটিক্স-এর কথা। কারণ এই ম্যাজিক জিনিসটা পুরো অঙ্কের মতো। একটু এদিক ওদিক হলে সমীকরণটা মিলবে না।

কবে থেকে ম্যাজিক করছেন?
ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- অনেক ছোটোবেলা থেকে ম্যাজিক করছি। তা প্রায় ৫ বছর বয়স থেকে।

ম্যাজিশিয়ানই হবেন, এমনটা কেন মনে হলো আপনার?
ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- বাবার হাত ধরে মেলায় গিয়েছিলাম ছোটোবেলা। সেখানেই এক ম্যাজিশিয়ানকে দেখি হাওয়া থেকে পয়সা নিয়ে আসছে। তখন ভাবলাম, আরে এতো বেশ মজার ব্যাপার। ম্যাজিশিয়ান হতে পারলে তো আমার কাছে টাকা পয়সার অভাব হবে না। আল্টিমেট হিরো মনে হলো ম্যাজিশিয়ানকে। সবথেকে বড়ো কথা যে বয়সে ম্যাজিক দেখেছিলাম সে বয়সে সবথেকে বেশি যেটা মাথায় আসে সেটা হলো পড়াশোনা, আমার মনে হয়েছিল ম্যাজিশিয়ান হয়ে গেলে খাতা পেন নিজে নিজেই চলবে। (হেসে) আমাকে কিছু করতে হবে না। পড়াশুনো করতে হবে না, এমনিই পাস করে যাবো। অবশ্যই সেটা একটা ভুল ধারণা ছিল তখন।

আমরা তো অনেক বড়ো বড়ো ম্যাজিশিয়ানের নাম শুনেছি, পি সি সরকার সিনিয়র, পি সি সরকার জুনিয়র, ডেভিড কপারফিল্ড আপনি কাকে দেখে ইনস্পায়ারড হলেন?

ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- যখন ম্যাজিক বিষয়টার ভেতর ঢুকলাম, তখন প্রথম ম্যাজিকের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে শুরু করলাম, পি সি সরকার সিনিয়রের নাম জানলাম। যদিও আমি পি সি সরকার সিনিয়রকে দেখিনি। আমার সময়ে পি সি সরকার জুনিয়র পি সি সরকার ইয়ং পারফর্ম করতেন। তাঁদের দেখেই ইন্সপিরেশন আসে। তারপর ম্যাজিককে আরও একটু জানতে শুরু করলাম, তখন বিদেশী ম্যাজিশিয়ান ডেভিড কপারফিল্ড (magician David Coperfiled) এর কথা শুনি। এরপর তাঁকেই আমার আইডল মানতে শুরু করি। এছাড়া ম্যাজিশিয়ান জেফ ম্যাকব্রেইট(magician jeff mcbride), ম্যাজিশিয়ান সিরিল তাকাইমা(magician cyril takayama),ম্যাজিশিয়ান ডেভিড ব্লেইন(magician david blaine), ম্যাজিশিয়ান ক্রিস এঞ্জেল(magician chris), ম্যাজিশিয়ান টনি ক্লার্ক (tony clark magician) এরকম আরও অনেকের ম্যাজিক দেখে তাঁদের ফ্যান হয়ে গেলাম। শিখতে শুরু করলাম তাঁদের থেকে।

ছোটোবেলার কথা বলুন কিছু? ম্যাজিক করতে গিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা…

ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম ছোটোবেলার ঘটনা বলতে, একবার এক বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন বাচ্চাদের ম্যাজিক দেখানোর সময় আমার মধ্যে এক অদ্ভুত বদল এলো। আমি যখন ম্যাজিক দেখিয়ে তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম, মনে হয়েছিল যেন ঈশ্বরের সান্নিধ্য পেলাম। বরাবরই আমি হাসিখুশি, ফান লাভিং মানুষ, আমি আমার শো-এর মাধ্যমে সেই হাসিটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি সবসময়। প্রথম যখন সেই বাচ্চাদের হাসতে দেখলাম ভাবলাম পৃথিবীতে মানুষ যা করতে চায়, সেটাই করতে পারে। ওদেরকে দেখে মনোবল বাড়ল, মনে হলো সমস্ত প্রতিকূলতার পর একটা জয় আসবেই আসবে।

ম্যাজিক থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড়ো এচিভমেন্ট?

ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- ম্যাজিক থেকে পাওয়া বড়ো এচিভমেন্ট। দেখুন পুরষ্কার পেতে কে না চায়, বিশ্বসেরা ম্যাজিশিয়ান হবো বা কাজের জন্য পুরষ্কার পাবো এটা অবশ্যই চাই। সেক্ষেত্রে ২০১৯ এ সোনার সংসার এওয়ার্ড আমার বড়ো পাওয়া। ‘ভানুমতীর খেল’ নামে ম্যাজিক রিলেটেড এক সিরিয়ালে কাজ করার দরুন ম্যাজিক রিসার্চ এওয়ার্ড পাই। তার থেকেও বেশি হলো ২৮ বছরের ম্যাজিক আমাকে মানুষের ভালোবাসা দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে, জনপ্রিয়তা দিয়েছে। এর থেকে বড়ো পাওয়া বুঝি আর কিছু হয় না।

এই ম্যাজিক প্রফেশন হিসেবে কেমন? যদি নতুন প্রজন্মকে এই প্রফেশনে আসতে হয়, কী করতে হবে?

ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- অবশ্যই বলবো অ্যাবস্ট্রাক্ট জীবিকা হিসেবে ম্যাজিক একটু আলাদা। গান বাজনা নাটকের মতো ম্যাজিকও মানুষকে আনন্দ দিতে পারে। সবাই ম্যাজিক দেখতে পছন্দ করেন, তবে ম্যাজিক যে একটা প্রফেশন হতে পারে এটা এখনও অনেকে ধারণা করতে পারেন না। আগে ম্যাজিক বলুন বা ম্যাজিশিয়ান বেশ জনপ্রিয় ছিল, এখনও নতুন অনেকে ম্যাজিক করছে জনপ্রিয় হচ্ছে। তারা শিখছে নতুন নতুন টেকনিক। ম্যাজিকেও আধুনিক ব্যপার এসেছে। আমি বলব, ম্যাজিক করেও জীবন জীবিকা চালানো যায়, তবে তার জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ, নিষ্ঠা, নিয়মের দরকার আছে। কারণ ডিসিপ্লিন থাকতে হবে মাস্ট। নতুনদের জন্য বলব, আমরা লকডাউন দেখেছি। লকডাউন দেখার পর মনে হয়েছে ম্যাজিকের পাশাপাশি অবশ্যই অন্য কোনো কিছুকে সাপোর্টে রেখে এগোনো উচিৎ। কারণ যখন তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সামাজিক অসুবিধে আসতে পারে। তাই অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম থেকে ম্যাজিককে সমসাময়িক ভাবে এগিয়ে নিয়ে গেলে ভালো হবে। এটা ততক্ষণ করা জরুরি যতক্ষণ না ম্যাজিশিয়ান হিসেবে আর্থিকভাবে স্থির হচ্ছে।

আপনি সবসময় ক্রিয়েটিভ ম্যাজিক নিয়ে ভেবেছেন, টি ভি সিরিয়ালে আপনাকে কাজ করতেও দেখা গেছে, এখন কি ভাবছেন এ নিয়ে, নতুন কিছু কবে আসছে?

ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- ম্যাজিক নিয়ে প্রতি নিয়ত কিছু না কিছু কাজ করে যাচ্ছি। তবে বলতে মানা আছে এখন (হেসে) সঙ্গে থাকুন, জুড়ে থাকুন সোশ্যাল মিডিয়ায়, অবশ্যই দেখতে পাবেন।

ম্যাজিকের জগতে কতটা কম্পিটিশন আছে? আপনি কি আপনার সহকর্মীদের থেকে সহযোগীতা পান এক্ষেত্রে?

ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- শুধু যে ম্যাজিকের জগতে কম্পিটিশন আছে, এমনটা নয়। প্রতিটা সেক্টরেই কম্পিটিশন পদে পদে। তবে সাপোর্ট বা হেল্প পাওয়ার ক্ষেত্রে, কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা আমার সঙ্গে সবসময় আছেন। আমিও আছি সবসময়। এভাবেই তো এগোতে হবে।

আর একটা প্রশ্ন, আপনার কি মনে হয় ম্যাজিক দিয়ে সত্যিই জীবনযাপন করা যায়?

ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- হ্যাঁ, আমার বলতে একটুও দ্বিধাবোধ নেই ম্যাজিক দিয়ে অবশ্যই একটা সুন্দর জীবনযাপন সম্ভব। আমি তো পুরোদমে ম্যাজিশিয়ান হিসেবে ভালোভাবে কাটাচ্ছি। আমাদের স্বনামধন্য ম্যাজিশিয়ান পি সি সরকারও(Magician P C Sorcar)  কাটিয়েছেন। বাকি ম্যাজিশিয়ানদের স্ট্যাটাস কিন্তু মন্দ নয়।

আপনি তো ম্যাজিক করে অনেকের মন জয় করেছেন, আপনার কেউ মন জয় করেছে ম্যাজিক করে?
ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম- (হেসে) স্টেজে ওঠার পর সবাইকেই এক মনে হয়, আলাদা করে এসব ভাবিনি কখনও।

এবার একটু র‍্যাপিড ফায়ারে যাবো-
আপনাকে অনেক জায়গায় অভিনয় করতে দেখা গেছে, আবার গান গাইতেও দেখা গেছে, যদি কোনোদিন আপনাকে পছন্দ করতে বলা হয় গায়ক, অভিনেতা, ম্যাজিশিয়ান চরিত্র হিসেবে, আপনি কোনটা পছন্দ করবেন?
– অবশ্যই ম্যাজিশিয়ান হিসেবে
কী ধরণের গান আপনি পছন্দ করেন
– ফোক রক
ঘুরতে যাওয়ার জন্য পাহাড় না সমুদ্র
– পাহাড়

ছুটি থাকলে ঘুরতে যাওয়া না শপিং
– (হেসে) শুধু ঘুম

ফুটবল না ক্রিকেট
ফুটবল

মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল
ইস্টবেঙ্গল

Pic Credit: Magician Arindam Official Facebook page and Youtube 

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page