স্বকীয়তায় “মানচিত্র” কাগজ প্রথম থেকেই ছিল ব্যতিক্রম। পুরনো লেখা রিপ্রিন্ট, সস্তা অনুকরণ, অর্থহীন লেখা প্রকাশে চিরকালই আমি স্রোতবিরুদ্ধ। নতুনত্ব থাকতে হবে। লেখার মধ্যে মূল উপলক্ষ ও গুরুত্ব ফুটিয়ে তুলতে হবে–এ আমার চিরকালের রুচিবোধ। আর এই ভিত্তিতেই “মানচিত্র”কে সাজাতাম আমি।
এই সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফিচার, নিবন্ধ এবং সাক্ষাৎকার নিয়ে।
সেই বছর এক মহাভূমিম্প হয়েছিল জাপানে। সারা জাপান কেঁপে উঠেছিল। বহু মানুষ হতাহত এবং সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল। ভেটেরান সাংবাদিক এবং গবেষক বাবলু রহমান তখন একটি গবেষণার কাজে জাপানে অবস্থান করছেন। তিনিও মানচিত্র কাগজের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তখন টোকিওতে “মানচিত্র” কাগজকে কেন্দ্র করে একট উৎসব উৎসব ব্যাপার ছিল। বাবলুকে দায়িত্ব দিলাম, ভূমিকম্প নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন লিখে দেবার জন্য। তিনি ব্যাপক অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা করে সুদীর্ঘ একটি প্রতিবেদন লিখে দিলেন। ছবিসহ চার পৃষ্ঠা ছাপা হয়েছিল। বাবুল চমৎকার একটি ডেটাও সংযুক্ত করেছিলেন, শত বছরের জাপানে ভূমিকম্পের একটি খতিয়ান। সন-তারিখ, অঞ্চল এবং মৃতের সংখ্যা উল্লেখিত ছিল।
রাজনীতি বাঙালি জীবনে একটি মুখরোচক বিষয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বির্তকের শেষ নেই! বিগত ৫০ বছর ধরেই চলছে। ৯০ এর দিকেও এই বিষয়ে তর্কবিতর্ক তুঙ্গে ছিল। বিভিন্ন সংখ্যায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত বা সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছি। এই সংখ্যায়ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এবং জেড ফোর্সের সাংবাদিক হারুন হাবীবের একটি গুরুত্বপূর্ণ সচিত্র সাক্ষাৎকার দুই পৃষ্ঠা নিয়ে প্রকাশ করেছি। তাঁর অর্জিত অভিজ্ঞতার কথা তিনি খোলাখুলি বলেছেন।
আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়েও বিতর্ক বিদ্যমান। এই সংখ্যায় বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিক চমৎকার একটি প্রবন্ধ লিখেছেন দুই পৃষ্ঠাব্যাপী।
মহান একুশের ইতিহাস তথনও পর্যন্ত জাপানিরা খুব একটা জানেন না। এই সংখ্যায় সেই ইতিহাস সংক্ষিপ্তাকারে জাপানি ভাষায় তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছিলাম।
বিশিষ্ট বামপন্থী লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর “মানচিত্র”র জন্য একটি গবেষণালব্ধ গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন স্বাধীনতা বিষয়ে। দুই পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেছি।
সেইসময় তারুণ্যের আইডল ছিলেন অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত। দুই পৃষ্ঠাব্যাপী তার একটি রোমান্টিক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছিলাম। মন খুলে অনেক কথাই তিনি বলেছিলেন।
বিশিষ্ট কবি সিকদার আমিনুল হক লিখেছেন ছোট্ট একটি নিবন্ধ: কেন সাহিত্য? এই ধরনের লেখা এখন আর প্রতিষ্ঠিত কবিরা লেখেন না!
যে-কোনো সাময়িকী ও ম্যাগাজিনের ইমেজ তৈরি হয় বা ওজর বাড়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একাধিক সাক্ষাৎকারে। “মানচিত্র” তার ব্যতিক্রম ছিল না। এই সংখ্যায়ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কণ্ঠশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা আপেল মাহমুদ এবং নজরুলগীতি শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরার একান্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তৎকালীন জাপানস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম রাশেদ আহমেদের সঙ্গে “মানচিত্র”র পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের একটি ফিচারসহ আরও সংবাদিএই সংখ্যাকে সমৃদ্ধ করেছে।
১৯৯৪ সালের আরও একটি সংখ্যা এটা। সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রচ্ছদসহ ৫৬ পৃষ্ঠা। সবগুলো একাই লেআউট করতে হয়েছে আমাকে। তখন কর্মস্থলে প্রচণ্ড ব্যস্ততা। সপ্তাহগত ডে-নাইট শিফটে কাজ। টেবিলে কাজের স্তুপ। শত শত পজেটিভ এসে জমা হচ্ছে, অধিকাংশ জনপ্রিয় ম্যাগাজিন, মোটর গাড়ি ও যন্ত্রপাতির ক্যাটালগ আর ক্যালেন্ডারের। সেসব দ্রুত প্লেইট না করলে নয়। দম ফেলার ফুসরৎ নেই, যে সপ্তাহে দিনের বেলা কাজ।
রাতের সপ্তাহে অবশ্য অত ব্যস্ততা নেই। আমি নিরিবিলি একাই কাজ করি, অত চাপ থাকে না, গভীর রাত, ৩-৪টা বাজলেই শেষ হয়ে যায়। সকাল ৮টা পর্যন্ত নিজের ম্যাগাজিনের কাজ করি, সংবাদ, প্রতিবেদন, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সাক্ষাৎকারগুলো সম্পাদনা করি। প্রচ্ছদ, ভেতরের পাতার ডিজাইন চিন্তা করি, ছক আঁকি। সময় চলে যায়। যদিও চোখে নিদারুণ ঘুম।
বলা যায় ১৯৯৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত “মানচিত্র” ছিল “ওয়ান ম্যান ম্যাগাজিন”, কারণ সহযোগী যারা ছিল তারা লেখা দিয়েই খালাস, টেকনিকেল বিষয়ে কারো কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে সবলেখা টাইপ করে পেইজ সেটআপ একা আমাকেই করতে হত। এমনকি, বিজ্ঞাপনগুলোর ডিজাইনও আমাকেই করতে হয়েছিল যতদিন মানচিত্র প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও মাসিক কাগজ ছিল কিন্তু ডেড লাইনে কাগজ ছাপানো যেত না। দুই সপ্তাহ লাগতই সম্পাদনায়। জাপানের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে, বাইরের দেশ থেকে, ঢাকা থেকে লেখা কম আসত না। প্রচুর লেখা। অধিকাংশই আসত ডাকযোগে। আর ঢাকা থেকে আসত জরুরি লেখাগুলো ফ্যাক্সযোগে। দুই সপ্তাহের মধ্যে মেটার রেডি করে প্রেসে দিতে হত, তারপর ৩-৪ দিন লাগত প্রিপ্রেসের কাজগুলো চেক আপ করতে। তারপর মেশিনে উঠত। কমপক্ষে দশ দিন লাগে ছাপাতে জাপানে যেকোনো প্রকাশনার কাজ করাতে।
পুরো মাস জুড়ে প্রচণ্ড চাপ থাকত মাথায়। “মানচিত্র” শুরু করে যেন বিপদেই পড়ে গেলাম এমন মনে হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু যখন কাগজটি ছাপা হয়ে হাতে আসত আনন্দের সীমা থাকত না। পাঠকের চিঠি, টেলিফোন পেতাম। মন ভরে যেত। দেশ-বিদেশ থেকে কত তরুণ এমনিক প্রবীণ সাংবাদিকেরও অনুরোধ পেতাম তাদেরকে প্রতিনিধি করার জন্য।
এই সংখ্যার প্রচ্ছদ ছিল খুবই আকর্ষণীয়। আলোকচিত্রটি তুলেছিল মঞ্জুরুল আজিম পলাশ। তখন ঢাকায় সে “মানচিত্র”র প্রধান সংবাদদাতা। আমার ছোটভাই পীযূষকান্তি সরকারের বন্ধু, একজন তরুণ মেধাবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক। পরে যে হয়েছিল “মানচিত্র”র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। এবং তারই নেতৃত্বে ঢাকায় “মানচিত্র”র সকল প্রসেস, প্রিপ্রেস ও ছাপার কাজ সম্পাদন হয়ে জাপানে কাগজ আসত। জাপান থেকে আমি সম্পাদনা করে দিতাম লেখা, নির্দেশ দিতাম টেলিফোনে প্রচ্ছদ, লেআউট, রং, ছাপা কেমন হবে ইত্যাদি।
যাহোক, প্রচ্ছদটি আমার পরিচিত জাপানিরাও পছন্দ করেছিলেন। ছাপাও ছিল একেবারে নিখুঁত। এই প্রথম “মানচিত্র”র লোগো তৈরি করেছিলাম। যা কিছুদিন পর ঢাকার সাপ্তাহিক “বিচিন্তা” নামে একটি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন নকল করে বসেছিল। প্রতিবাদ করার পরও তারা সেটা বদল করেনি। ফলে অনেকদিন নির্দিষ্ট কোনো লোগো ছিল না “মানচিত্র”র। খুব বিব্রতকর অবস্থায় ছিলাম। একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় লোগো তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। চিন্তা করতে হয়, কিন্তু চিন্তা করার সময় নেই। অনেক পরে অবশ্য আমি আরেকটি লোগো তৈরি করি।
এই সংখ্যায় বেশকিছু ভালো লেখা ছিল, যেমন, এম.রহমান লিখেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে ৬টি পটভূমি সম্পর্কে। গভীর তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধ।
একজন উদীয়মান বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী এবং তরুণ লেখক হিসেবে মঞ্জুরুল আজিম পলাশের চোখে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা। চিন্তার খোরাক জোগানো প্রতিবেদন।
বাংলাদেশের রেলওয়ে সেই ব্রিটিশ আমলে যা হয়েছিল এরপর আর কোনো অগ্রসরতা চোখে পড়েনি। বরং দিন দিন হতশ্রী অবস্থায় পর্যবশিত হয়েছে। রেল থাকবে কি থাকবে না, নানারকম দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থপনা, অবহেলার কারণে, এরকম প্রশ্ন তখন খুব মুখরোচক বিষয় ছিল সমাজে। বিশিষ্ট বামপন্থী রাজনৈতিক চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধাপক ড.সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছিলেন তৎকালীন রেলওয়ে ব্যবস্থা নিয়ে।
জাপান প্রবাসী বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সংগঠক অজিত কুমার বড়ুয়া “মানচিত্র”র প্রথম থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে কলাম লিখতেন। এবারও লিখেছেন জাপানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণাত্মক নিবন্ধ।
“মুক্তবাজার” এবং “বিশ্বায়ন” ছিল সেই সময় দুটি ব্যাপক আলোচিত বৈশ্বিক বিষয়। সেখানে উন্নয়নকামী বাংলাদেশের কী ভূমিকা তাই নিয়ে লিখেছেন থমাস জে. ওয়াটসন ফাউন্ডেশন এর রিসার্চ ফেলো নাঈম মোহায়মেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা, পাঠিয়েছিলেন লেখক আমেরিকা থেকে।
এই সংখ্যার একটি বিশেষ দিক হল, বাংলাদেশের একাধিক বিষয় জাপানি ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা। সেইসময় জাপানে বাংলাদেশের নাম জাপানিরা জানতেন না বললেই চলে, যারা জানতেন, তাদের কাছে দেশটি হল: রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, লাগাতার গুম, ধর্মঘট-হরতাল, মারামারি, কাটাকাটি, খুনাখুনি, রাহাজানি, ডাকাতি, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ছাত্র আন্দোলন, পরিবেশ বিপর্যয়, বন্যা-মহামারি, রোগের প্রাদুর্ভাব ইত্যাদির কারখানা! প্রায় প্রতিদিনই এইসব বিষয় সংক্রান্ত সচিত্র সংবাদ, প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রচারিত হত। খুব বিব্রতকর অবস্থায় আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা জীবনযাপন করতাম। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা ছিল না তা নয়, কিন্তু অগ্রগতি ছিল না।
এই পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে জাপানিদেরকে বোঝানোর প্রয়োজন বোধ করেছিলাম। বাংলাদেশ সাহায্যনির্ভর অনুন্নত দেশ হলেও এর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যে বহু প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ সেটা যেন জাপানিরা অনুধাবন করতে পারে তাই কিছু লেখা জাপানি ভাষায় অনুবাদ ও মুদ্রিত লেখা সংগ্রহ করে প্রকাশ করি।
তখন “মানচিত্র” বেশ সাড়া জাগিয়েছে জাপানি সমাজে। জাপানি গণমাধ্যমে আমার পরিচিতি ও সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হচ্ছে। কাজেই জাপানি ভাষায় বাংলাদেশকে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাতে করে কাজও হয়েছিল, অনেক সংগঠনের আমন্ত্রণে আমি স্কুল, কলেজ ও এনজিওর সমাবেশে এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি, বিপ্লবী রাসবিহারী বসু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু ও জাপান সম্পর্ক; শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম, সাহিত্য, দর্শন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছিলাম।
সাক্ষাৎকার প্রকাশ ছিল “মানচিত্র”র গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। এবারও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড.কবীর চৌধুরী। এটা গ্রহণ করেছিল “মানচিত্র”র সহযোগী কর্মী কবি, গল্পকার ও সাংবাদিক সজল বড়ুয়া।
ভারতীয় চলচ্চিত্র সম্পর্কে জাপানিদের ধারণা একেবারেই ক্ষীণতর। সেইসময় একজন জাপানি নারী মাৎসুওকা তামাকি ভারতীয় বিনোদনমূলক চলচ্চিত্রর প্রেমে পড়ে ভারতে ভ্রমণ করতে যান। নিয়ে আসেন বেশকিছু হিট ছবির ভিডিও। সেগুলো তাঁর বাসায় প্রদর্শন করেন পরিচিত বন্ধু-বান্ধবীদের সামনে। এভাবে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাঁর এই কর্মকাণ্ড। বেশ কয়েক বছর পর তিনি হয়ে ওঠেন জাপানে ভারতীয় চলচ্চিত্রের মুখপাত্র। এমনকি, একাধিকবার ভারতীয় ফিল্ম ফেস্টিভেলের আয়োজনও করেন। অর্জন করেন এই বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি। তাঁরই কর্মকাণ্ডের চিত্র এই ফিচারে আমি লিখেছিলাম।
প্রাতঃস্মরণীয় মনীষী ড.দীনেশচন্দ্র সেন স্মরণে একটি অসাধারণ প্রবন্ধ লিখেছেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও লেখক আহমদ ছফা। অনেক অজানা তথ্য এই প্রবন্ধ থেকে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছিলাম।
শিল্প-সাহিত্য তথা সংস্কৃতি তুলে ধরা “মানচিত্র”র অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ছিল। প্রতি সংখ্যাতেই সাহিত্যের জন্য একাধিক পৃষ্ঠা বরাদ্দ করেছিলাম। লিখেছেনও জনপ্রিয়, প্রতিষ্ঠিত কবি, সাহিত্যিক ও গবেষকবৃন্দ। এই সংখ্যায়ও তার উজ্জ্বল প্রমাণ বিধৃত।
সেইসময় জাপানে “দোয়েল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী” ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাঙালি সমাজে অতিপরিচিতিমুখ, স্বনামধন্য কবি, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কর্মী ও ব্যবসায়ী মোতালেব শাহ আইউব প্রিন্স। পুরনো ঢাকার বাসিন্দা, কৈশোর থেকেই যে নাট্য আন্দোলনের মঞ্চে সক্রিয় সরব ছিল। আমারই ঘনিষ্ঠ সুহৃদ এবং পরবর্তীকালে “মানচিত্র” কাগজের উপদেষ্টা হয়েছিল। এই সংখ্যায় প্রিন্স এর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছিলাম। সঙ্গে রয়েছে দুর্লভ একটি ছবি, জনপ্রিয় কবি রফিক আজাদ এবং কবি, কথাসাহিত্যিক, উপন্যাসিক, প্রবন্ধকার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে টোকিওতে এক আড্ডার সময়কার অসামান্য চিত্র।
বিশ্বমাপের চিত্রশিল্পী বাঙালি জাতির গর্ব এস এম সুলতানকে নিয়ে একটি মূল্যবান ফিচার লিখেছেন বিশিষ্ট শিল্পকলা সমালোচক ও লেখক মইনুদ্দীন খালেদ।
এই সংখ্যাটিও একটি সমৃদ্ধ তথ্যবহুল প্রকাশনা বলে আমার বিশ্বাস। এরপর “মানচিত্র” আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়েছিল।
Related