বাবুমশাই জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে… লম্বি নেহি
তৃতীয়পক্ষ ওয়েব- আজ বলিউড সুপারস্টার রাজেশ খান্নার জন্মদিন। ১৯৪২ সালের ২৯শে ডিসেম্বর পাঞ্জাবের অমৃতসরে রাজেশ খান্নার জন্ম। স্থানটি বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত। তার পারিবারিক নাম ছিল যতীন খান্না। ডাকনাম কাকা। তার বাবা ও মায়ের নাম লালা হিরানান্দ ও চন্দ্রাণী খান্না। লালা হিরানান্দ পাকিস্তানের পাঞ্জাবের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রাজেশ খান্নাকে দত্তক নিয়েছিলেন চুনীলাল খান্না এবং লীলাবতী খান্না।পালক বাবা মায়ের সঙ্গে তিনি মুম্বাইয়ে বড় হন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন। রাজেশ খান্না এবং রবি কাপুর যিনি জিতেন্দ্র নামে খ্যাতি লাভ করেন, ছিলেন বন্ধু। দুজনেই স্কুলের বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করতেন। স্কুল ও কলেজে মঞ্চে অভিনয় করে প্রশংসা ও পুরস্কার পান রাজেশ।
১৯৬৬ সালে ‘আখেরি খত’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের ভুবনে পা রাখেন তিনি। এরপর ‘রাজ’, ‘বাহারোঁ কি সপনে’, ‘ইত্তেফাক’ ও ‘আরাধনা’ ছবির মাধ্যমে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা পান। ‘আরাধনা’ ছবিটি বাংলা ও হিন্দি দুভাষাতেই মুক্তি পায়। এতে তার বিপরীতে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। আরাধনার সাফল্যের পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি রাজেশকে। একের পর এক মুক্তি পায় তাঁর সুপার হিট ছবি ‘কাটি পতং’, ‘আপ কি কসম’, ‘রোটি’, ‘প্রেম কাহানি’, ‘আলাগ আলাগ’, ‘মেহবুবা’, ‘রাজা রানী’, ‘সফর’ ইত্যাদি ছবি। ‘আপ কি কসম’ ও ‘রোটি’ ছবিতে রাজেশ-মুমতাজ জুটি দারুণ জনপ্রিয় হয়। ‘বাবুর্চি’, ‘খামোশি’(দীপ জ্বেলে যাই) ও ‘অমর প্রেম’(নিশিপদ্ম)-এর মতো অনেক সুপারহিট বাংলা ছবির হিন্দি রিমেইকে তিনি অভিনয় করেছেন।
বাবা মেয়ের একই তারিখে জন্ম, এমন উদাহরণ হয়ত খুব কমই হয়। বলিউডে এমন উদাহরণও রয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন অভিনেত্রী তথা লেখিকা নিজের জন্মদিন সেলিব্রেট করার সঙ্গে সঙ্গে বাবা রাজেশ খান্নার ৭৯ তম জন্মবার্ষিকীও সেলিব্রেট করছেন।
বাবা রাজেশ খান্নার অত্যন্ত কাছের ছিলেন টুইঙ্কেল। বাবা রাজেশ খান্না আর নেই, তবে প্রত্যেক বছর এই বিশেষ দিনটিতে বাবাকে স্মরণ করতে ভোলেন না টুইঙ্কেল। স্মৃতির পাতা থেকে বাবা রাজেশ খান্নার একটি পুরনো ছবি শেয়ার করেছেন টুইঙ্কেল। একসময় এমনই এক জন্মদিনে রাজেশ খান্নাকে শুভেচ্ছা জানাতে তাঁর বাড়ির সামনে ভক্তদের ঢল নামত। টুইঙ্কেল লিখেছেন, ”আমিই আমার বাবার বর্তমান।”
View this post on Instagram
রাজেশ খান্না ১৮০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেন। ১৬৩টি ছবিতে তিনি নায়ক এবং ১০৬টি ছবিতে একক নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এসব ছবির অধিকাংশই ব্যবসা সফল হয়েছিল। তার নামের সঙ্গে রোমান্টিক নায়কের তকমাযুক্ত হলেও বিভিন্ন ধরনের চরিত্রেই দেখা গেছে তাকে। ‘আজ কা এমএল এ রাম অবতার’-এ রাজনীতির জটিল আবর্তে ঘুরপাক খাওয়া সরল এক ব্যক্তির চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন রাজেশ। ‘বাবুর্চি’ ছবিতে রাজেশ খান্না তার অসাধারণ অভিব্যক্তিতে ফুটিয়ে তোলেন সমাজের অসংগতি এবং পারিবারিক বন্ধনের চিরায়ত সৌন্দর্যকে। ‘মেহবুবা’ ছবিটি পুনর্জন্ম ও প্রেম নিয়ে জনপ্রিয় একটি ছবি। দুর্বল চিত্রনাট্য সত্ত্বেও ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সাফল্য পায় শুধু রাজেশ খান্না ও হেমা মালিনির সু-অভিনয়ের সুবাদে।
আশা পারেখ, মুমতাজ, শর্মিলা ঠাকুর, ওয়াহিদা রেহমান ও হেমা মালিনির সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল দারুণ জনপ্রিয়। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনীত তাঁর ‘আনন্দ’ ও ‘নিমক হারাম’ ছবি দুটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। রাজেশ খান্না তিন বার সেরা অভিনেতার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পান। বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে হিন্দি চলচ্চিত্রের ক্যাটাগরিতে চার বার সেরা অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত করে। তিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন ২৫ বার। ২০০৫ সালে তিনি ফিল্ম ফেয়ারের লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান। ‘সফর’, ‘শেহজাদা’, ‘অমর প্রেম’, ‘আজনবি’, ‘দাগ’ ‘বাঁহারো কি সপনে’, ‘রাজারানি’ ছবিতে তিনি প্লেব্যাকও করেন তিনি। কিশোর কুমার এবং রাহুল দেব বর্মণের সঙ্গে তার জুটি ছিল দারুণ সফল। রাজেশের ঠোঁটে কিশোর কুমারের কণ্ঠ এবং রাহুলদেবের সুর দর্শককে মোহাবিষ্ট করতো।
সিনেমাতে রাজেশ খান্নার অভিনয় ছিল কিছুটা লাউড বা উচ্চকিত। ব্যক্তিজীবনেও তিনি নাটকীয়তা ভালোবাসতেন। মূলত তিন নারীর সঙ্গে তার গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল, কিন্তু প্রেমে এবং বিবাহিত জীবনে সাফল্য পাননি।
ছবি এবং তথ্য- ইনস্টাগ্রাম, ইন্টারনেট