মা,শুনছো, আমরা রান্না রান্না খেলছি!
ভজন দত্ত
আজাদি মাস এলেই দিনকতক আমাদের দেশপ্রেম হুদকে ওঠে!তারপর আবার যেই কে সেই! দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা হয়,স্টে বিন্দাস ইয়ার দিস ইজ পাগলাতন্ত্র!ঘেঁটে ঘেঁটে খানে কা চিজ হ্যায়! হুঁ হুঁ বাব্বা! খিল্লির বাজারে সিটির আওয়াজে ভরে উঠছে শূন্যের ঘর । দুষ্টু ছেলেটি তাই দেওয়াল থেকে মোছে নি এখনো সেই দিওয়ানাপন,
” বি মাই পিএনবি আই উইল বি ইওর মোদি। ”
ভারতছাড়ো-বিশ্বজোড়োর দ্বিতীয় পর্ব জমে ক্ষীর।
একশ তিরিশ কোটির দেশ, মারো, মারো, দু- একজন। আর ওদের ভাগিয়ে দাও, আর মারো। মারানো ছাড়া আম আদমির কোনো ইতিহাস নেই হে কত্তা। তাপ্পর, ভোটের ভটভটি চেপে নাও। পিছনে লিপিস্টিক পরা বউ,সামনে টাইপরা বাচ্ছা। চালাও ভটভটি তেল ফিরি।
আপনা স্বপ্ন একঘর,একটি ঘর। সে তো ঘর ঘর কি কাহানি। ব্যাঙ্কে গেলেই ঘর্ঘর আওয়াজে শত কাগজে সাইন হলে তব্বে আসে ঋণ।মিনিমাম ব্যালেন্সের খেলাতেই নাফা! আপনি ঋণী হবেন! হুঁ হুঁ বাওয়া! ঋণ দেওয়া কি মুখের কথা! পাব্লিকমানি বলে কতা! কত মণ তেল পুড়লে পরে আম আদমির স্বপ্নে নাচে রাধা। আর গব্বর হাসতে হাসতে আদেশ করেন, নাচ বাসন্তী, নাচ। গব্বররাজ! ওদের জন্য কোনো কানুন নেই কালা।সব ফরসা,ফরসা, ননী খাওয়া চেহারা। এক আর এগারোর ফারাক নেই। আজাদি কি শুধুই বড়লোকদের জন্য সব তেল নিয়ে বসে থাকে! চাঁদিকা চপ্পলে মেলে না এমন কিছু চিজ নেই। কে যেন বলেছিলেন,”ইহা হর ইনসান বিক যাতা ভাইয়া, সির্ফ ভাও অলগ অলগ হ্যায়।” ইমান সওদা হয়ে যাচ্ছে ভোগে আর লালসায়। কেউ বাদ আছেন? আছেন যাঁরা, তাঁরাই বা আর কদিন থাকবেন? যেখানে ধর্মাবতার স্বয়ং ঢিস্সুমে খাল্লাশ হয়ে যান, সেখানে আপনার-আমার কন্ঠে ন্যায় শব্দটি লুকানোর জায়গা তো খুঁজবেই।
হে জিহ্বা, বিনীত অনুরোধ, জিহ্বাগ্রবর্তী হয়ো না। তবুও কে শোনে কার কথা? বিদ্রোহ হয়।
দেওয়ালে দেওয়ালে যতই লিখে রাখা হোক না কেন “স্টে বিন্দাস”।বিন্দাস তো থাকা যায় না।দিলে ঢিপঢিপ তো হয়ই। হচ্ছে এদিকওদিক।পদযাত্রীদের পা রক্তাক্ত হচ্ছে,যুক্তিবাদী নারী-পুরুষেরা গুলিবিদ্ধ হচ্ছে, কাউকে আত্মহননে বাধ্য করা হচ্ছে, রোজ রোজ কৃষকদের আত্মহত্যার,ধর্ষণের খবর করে মিডিয়াও যখন ক্লান্ত তখন কতিপয় মানুষ হলেও পাশে এসে দাঁড়ান। তাঁদের জিহ্বাগ্রভাগ ক্রমশ খর হয়। সত্য প্রকাশিত হয়। ভারতমাতার পায়ে এত এত ফোস্কা,তা ফেটে রক্ত ঝরছে। আর জয়- জয় বলে মানুষ এই যে তার চোখের জল মুছিয়ে,পা দুখানি বক্ষে চেপে ধরছে, সে কি কিছু কম কথা! ভাইরাল হওয়া সে ছবি দেখে কি আপনার আঁখিপাতে কি জল আসেনি?লুকিয়ে মোছেন নি চোখের জল? বুকের ভেতরটা টনটন করে উঠেনি?
টিভির প্রাইম স্লট দেখুন। সিরিয়ালের চ্যানেল নয়,নিউজ চ্যানেলে চ্যানেলে চলছে পি এন পি সি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাই। সে ফেবু কি হোয়াটসঅ্যাপ সব সমান। ওরাই পানসি চালাচ্ছেন, কোটি কোটি টাকা ওদের হাওয়ায় এসে যায়। তো, সে পানসি কি রাত- বিরেতের হিসাব রাখেে সেক্স,স্ক্যান্ডাল ও স্ক্যাম এগুলোই তো পাবলিকে খায় বেশি। মিডিয়া হাউসগুলো সব তাই ঘন্টা ঘন্টা আলোচনা করে সব ঘেঁটে ট করে পাব্লিককে খাইয়ে চলেছেন।সামনেও, পিছনেও, লে ঠ্যালা! ঠ্যালার নাম এখন অনেক। যে যেমন পারে রাখছে তার নাম, নিজের মতন, আপন করে। তবে এ বিশ্বে ঠ্যালার কোনো বিকল্প নেই। নিজের ভার ওঠাবার জন্য ঠ্যালা চলছে। তার কত রকম ব্যবহার, মূল্য, তা নিয়ে ধামাকা চলুক। একবিংশ শতকেও পয়সা দিয়ে মানুষকে দিয়ে জানোয়ারের মত টানানোর মানসিকতা নিয়ে যতই বিতর্ক থাক, তার উপযোগিতার সূত্রে যতই গিট পাকাক, সে গিট ছাড়াতে গিয়ে কিছুটা সময় তো কাটবে, সেই বা কি কম!চা, তেলেভাজা থেকে আরম্ভ করে সব রকম শিল্পেই তো হয়ে গেছে ! আর সে সব শিল্পে বিনিয়োগের মউ সম্ভবনা কি আছে? বেকার ভাইপো-ভাইঝিদের তো বাঁচতে হবে,না কি? তবে তারা টেনেটুনে হলেও বাঁচুক।অন্য কিছু টানার থেকে তো, তা হাজার গুণ ভালো। বাঁচতে দিন ওদের। আপনার কি, ওরা সব সৎপথে কর্ম করে খাক। বাঁচুক। বাঁচুক অনলাইন, বাঁচুক প্রিন্ট।সবরকমই বাঁচুক।কিন্ত প্রশ্ন করবেন না। যা ভাববেন, তা বলবেন না, যা দেখবেন তা কাউকে বলবেন না। আমরা তো আর জানোয়ার নই, মানুষ।আর মানুষই তো সেই বিরল প্রজাতির প্রাণি,যারা মুখে এক আর মনে আরেক। মু মে রাম নাম বগল মে ছুরি – কথাটা তো আম আদমির কথা। থাক, সে কথা বাদ দিন। সেসব নিয়ে ভেবে আমাদের কি কম্ম বলুন? তারচে বরং চলুন আপনি-আমি ‘আতঙ্ক’ সিনেমার সেই “মাস্টারমশাই” হওয়ার চেষ্টা করি। না হলে, যন্ত্রণার পথ ধরে হেঁটে চলুন।হাঁটলে পায়ে রক্ত তো ঝরবেই। সম্পূর্ণ দীন হয়ে যাওয়ার আগে সে রক্তে যদি মানুষের স্বচ্ছ-সুদিন বা সকলশ্রী আসে তবে আসুক।
অমৃত মহোৎসবের পার্টিতে আমরা সকলে নিজেদের কাটি, রান্না করি, একটু নুন বা ঝাল কমবেশি হলে নিজেরাই কাটাকাটি করি। মা!
মা, শুনছো আমরা এখন রান্না রান্না খেলছি।
** সম্পূর্ণ মতামত লেখকের। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনওপ্রকার দায়ী নহে।