ব-কলম: সাধের লাউ || রূপকথা বসু
ব-কলম
সাধের লাউ
রূপকথা বসু
এক দু মাস আগে এই ‘লাউ’ নিয়েই বেশ একটা শোরগোল অবস্থা চলছিল চারপাশে। চারদিকেই ওই একটাই শব্দ ‘লাউ’ অর্থাৎ লউকি। আরে আমি বলছি ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজটার কথা। সেখানে এই সাধারণ লাউ হয়ে উঠেছে একটা দারুণ চরিত্র। এমনিতেও শাক সবজির যা দাম। এই লাউ পাতে পড়লে তাও এর সঙ্গে এটা সেটা মিশিয়ে বেশ অনেক রকম পদই কিন্তু হয়। যা বাঙালি মাত্রেই বলতে হয় না আর কি।
এক অতি নিরীহ গোবেচারা সবজি। তবুও এর নামে যা তা বলে থাকেন অনেকেই। রোজ রোজ পাতে পড়লেই অনেকেই নাক সিটকোন আর কী। নাক সিটকোলে হবে কী? গরমে এই সবজি থুরি ফলের বেশ চাহিদা, সে কেন। বলছি তার কারণ। এমনিতেই আমাদের মহাদেশে যা গরমটা পড়ছে, এরপর হা পিত্যেশ করে মরতে হবে। এদিক থেকে বাঁচোয়া গ্রাম বাংলা, এমনকি শহুরে মানুষজনও এই লাউয়ের প্রেমে ডুবে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের দাবী লাউ শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আবার সুন্দর রাখতে পারে বেশ। ব্যস আর যায় কোথায়। এমনিতেও বাঙালিদের সৌন্দর্যের চর্চা চারদিকে। তারপর আবার রোজ রোজ যদি লাউয়ের তরকারি খেতে শুরু করেন তাহলে শরীর যেমন ঠান্ডা থাকবে, তেমনি ত্বকও বলবে বাহ রে বাহ।
এদিকে আবার কিছু মানুষের বক্তব্য লাউ নাকি ফল। এতদিন জেনে এসেছি এতো এক আস্ত সবজি, যা বোতলের মতো দেখতে বলে এর নাম ইংরেজিতে হয়েছে ‘বটল গার্ড’। ও বাবা সে মানলে হবে, এর ভেতরে থাকা আস্ত বীজ গুলোর জন্যে নাকি এটি ফল নামে পরিচিত। তো সে যাক গে। লাউ-চিংড়ি, লাউ সেদ্ধ, লাউ ডাল, লাউয়ের পায়েস, লাউয়ের এটা ওটা সেটা বানালেও, বাঙালি বাড়িতে দুপুরের পাতে হোক আর রাতের খাবারে, ‘লাউ ঘন্ট’ হলেই বেশ রসিয়ে খাবার খান অনেকেই।
মুগ ডাল, বড়ি, কুচো লংকা, দিয়ে লাউ ঘন্টের স্বাদ মুখে লেগে থাকে খাদ্যরসিকদের। আর তারপর আবার কেউ যদি তার মধ্যে ছেড়ে দেন লাল লাল চিংড়ি, তাহলে তো কথাই নেই। এরপর থেকে কেউ নাক সিটকে যদি বলে এমা লাউ আবার কোনও খাবার হলো নাকি! নাম না বলে, খাবার পাতে একদিন লাউয়ের ঘন্ট রেঁধে খাইয়ে দেবেন আর বুঝিয়ে দেবেন সাধের লাউ এমনি এমনি বৈরাগী বানায়নি খাদ্যরসিকদের।