কবিতা।। শূন্যতার ঘরবাড়ি।। শ্রীপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়
সম্পর্কের সেতু নড়বড়ে হলে
ভাঙনের শব্দ থেকে জল পড়ে।
পারাপার বন্ধ হলে
ওপারে দাঁড়াই
ওপার ঝাপসা হয় ঘন কুয়াশায়।
আবাস
দূরত্বের ভেতরে ঢুকে
বাইরে বেরিয়ে
দেখেছি অনেকবার
লগ্ন হয়ে আছি
দিগন্ত রেখায়।
কোনদিনই স্পর্শ করার মত
নিকটে যাইনি।
প্রসারিত হাত শুধু
বসতি নিয়েছে
শূন্যতার ঘরে।
তেষ্টা
যতবারই তেষ্টার সামনে দাঁড়িয়ে
জলপাত্র দুহাতে নিয়েছি,ততবারই
সময় টুকরো হয়ে ভেঙে ভেঙে গেছে
জলপাত্র দুখণ্ডে শয়ান।
তৃষ্ণার জলটুকু নামে না গলায়।
তৃপ্তির গ্রাসটুকু পিছনে রেখেই
বার বার চলে যেতে হয়।
সামনের রাস্তা জুড়ে আকণ্ঠ অতৃপ্তিগুলি
সাদা সাদা খই হয়ে গড়াগড়ি দেয়।
আবর্তন
জ্বরের ভেতরে বাজে সারেঙ্গি সেতার
জলমগ্ন ইহ চরাচর।
জলের ওপরে জল পড়ে
পূর্বজন্মের রোদ এজন্মের ঘরে।
জন্মের ভেতরে জন্ম
সরোদে সেতারে
ঘুরে ঘুরে মরে
জ্বরের ভেতরে।
জলশঙ্খ
একবার এক নদী আমায় বলেছিল,
তোমার হাত খালি রেখো
ফিরে এসে তোমার হাতের পাতায়
নতুন নাম এঁকে দেব।
আমি আমার শূন্য হাতের পাতা দেখি
আর শুনি
জলশঙ্খের ডাক।
কোন পথে যে সে আসবে
ঠিক বুঝতে পারি না।
কবি পরিচিতি
শ্রীপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি হাওড়া ।হাওড়ায় স্কুলজীবন শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।এখান থেকেই পি.এইচ .ডি ডিগ্রী লাভ ।গবেষণার বিষয় ছিল “রবীন্দ্রনাথের কবিতাগল্পের শৈলীবিশ্লেষণ ও সাহিত্য বিচার “। প্রচুর বইপত্র আর এক সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা।পড়তে পড়তেই লেখার অভ্যাস তৈরি হয়। বর্তমানে তাঁর লেখা কবিতা ও গদ্য প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা ও ছোট পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে।
সময়ের স্রোতে বয়ে চলা জীবনের অন্তর্লীন ওঠাপড়া গুলি ভাষারূপ পেয়েছে তাঁর কবিতায় ।বিবাহসূত্রে এখন শান্তিনিকেতনের স্থায়ী বাসিন্দা ।
তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ দুটি ‘চন্দনকাঠের বাক্স'(২০২০) ,’লবণাক্ত অক্ষরমালা'(২০২০)।