গাছপ্রেমী থেকে পৃথিবী খ্যাত সেই পরিচালক নোলান

দীপ সাহা- বিশ্বের চলচ্চিত্র শিল্পকে বহু যুগ ধরে শাসন করে আসছে হলিউড ইন্ডাস্ট্রি। ফ্যান্টাসি হোক বা ইন্টিমেসি নির্ভর সিনেমা। বিশ্বের বিভিন্ন ধরণের চলচ্চিত্রের মধ্যে এখানেই সবথেকে বেশি নির্মিত হয় ভিন্নরকমের সিনেমা। আর সেখানে নোলান হলেন সেই নির্মাতা, যিনি ফ্যান্টাসি বা ভবিষ্যৎকে নিয়ে গেছেন এক অন্য স্তরে। আজ সেই ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্মদিন। ৩০ জুলাই ৫১ বছর পূর্ণ করলেন তিনি।

১৯৭০ সালের ৩০ জুলাই ইংল্যান্ডে জন্ম গ্রহণ করেন ক্রিস্টোফার নোলান। বাবা ছিলেন ইংলিশ আর মা আমেরিকান।যার ফলে দুই দেশেই বাস করতেন নোলান। সিনেমা বানানোর কোনো পরিকল্পনাই ছিল না তার। কখনো ভাবেননি যে সিনেমা নির্মাণ করে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিবেন। কারণ উদ্ভিদবিদ্যার প্রতি তার ছিল দারুণ টান। গাছেদের জীবন নিয়ে তার ছিল ভীষণ কৌতুহল।

কিন্তু সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য তয়েছে। একদিন বাবার ক্যামেরা হাতে পেয়েই সব যেন উলটো পালটা হয়ে গেল নোলানের। ক্যামেরায় দৃশ্যধারণ করে রাখার অদ্ভুত ক্ষমতায় চমৎকৃত হন তিনি। দিনরাত পরে থাকেন ক্যামেরা নিয়ে। ক্যামেরার কারিকুরি করতে করতে একসময় সেই ছোট্ট বয়সেই নিজের খেলনা দিয়ে শর্টফিল্ম বানিয়ে ফেলেন ক্রিস্টোফার নোলান।

অবশ্য পরবর্তীতে এসে সেটাই নিজের কাছে হাস্যকর লাগে। হাস্যকর লাগলেও ছোট বেলার এই প্রবল আগ্রহই যে আজকের পৃথিবী খ্যাত নির্মাতা বানাতে সাহায্য করেছে এই বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তার সিনেমা মানেই একদম বিশেষ কিছু, কী নির্মাণে, কী গল্পে কিংবা সিনেমাটোগ্রাফিতে!

আন্তর্জাতিকভাবে ক্রিস্টোফার প্রথম নির্মাণ করেন একটি শর্টফিল্ম। ১৯৯৭ সালে বানানো সে শর্টফিল্মটির নাম ছিল ‘ডুডলিবাগ’। ঠিক পরের বছরেই তিনি ফিচার ফিল্ম বানিয়ে হলিউড জুড়ে ঝড় তোলেন। তার বানানো প্রথম সিনেমার নাম ‘ফলোয়িং’। এক সিনেমার মধ্য দিয়েই নির্মাতা হিসেবে ব্যাপক সুখ্যাতি অর্জন করেন নোলান। ৬৯ মিনিটের ছবিটি বানাতে নোলানের খরচ পড়ে মাত্র ৬ হাজার ডলার! ছবিটি পরিচালনা ছাড়াও চিত্রনাট্য ও ক্যামেরাম্যানের দায়িত্বও পালন করেছিলেন ক্রিস্টোফার নোলান নিজেই। মুক্তির একমাসের মধ্যেই দেখা যায় ‘ফলোয়িং’ প্রায় ৫০ হাজার ডলার আয় করে।

ভিন্ন ধাঁচের ছবি করেও যে বাণিজ্য করা যায়, তা দেখিয়ে দেন তিনি। যা সিনেমার প্রতি আরো আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। এর ঠিক পরের বছরেই ক্রিস্টোফার নোলান নির্মাণ করেন তার অসাধারণ সিনেমা ‘মেমেন্তো’। একজন সিরিয়াল কিলারের গল্পকে কেন্দ্র করে এই ছবিটির চিত্রনাট্যও লেখেন নোলান। ছবিটি ২০০১ সালে ২৫ মে মুক্তি পায়। ‘মেমেন্তো’র জনপ্রিয়তা এতটাই চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল যে বিভিন্ন ভাষাতেও ছবিটি নির্মাণ করতে দেখা যায়। বলিউডেও ‘গজনি’ নামে ছবিটিতে আমির খানকে অভিনয় করতে দেখা যায়।

তারপর নোলান একে একে নির্মাণ করেন ইনসোমনিয়া, ব্যাটম্যান বিগিনস, দ্য প্রেস্টিজ, দ্য ডার্কনাইট, ইনসেপশন, ইন্টারস্টেলার, ডানকির্ক, টেনেট-এর মতো দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া অসাধারণ সিনেমাগুলো।

ক্রিস্টোফার নোলান অল্প সময়ের মধ্যে হলিউডে যে সামর্থ প্রদর্শন করছেন, তাতে কোয়ান্টিন টারান্টিনো, মার্টিন স্করসেস, স্টিভ ম্যাককুইন, সার্জিও লিওন, স্ট্যানলি কুবরিকের মতোন অসাধারণ সিনেমা নির্মাতাদের সঙ্গে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। তাকে নিয়ে, তার সিনেমা নিয়ে নিজেদের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন জীবিত কিংবদন্তী নির্মাতারাও!

১৯৯৮ সালে পরিচালক হিসেবে অভিষেক হওয়া ক্রিস্টোফার নোলানের পরিচালিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১১টি, যার প্রতিটিই অত্যন্ত সফল। এখন পর্যন্ত তাঁর ছবিগুলো অস্কারে ২৮টি মনোনয়ন পায় এবং আটটি পুরস্কার অর্জন করে। বয়সের কারণে হয়ত তাকে এক নম্বর পরিচালক হিসেবে ঘোষণা করতে অনেকের আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু ক্রিস্টোফার নোলান তার কাজের মাধ্যমেই সেরা হয়েছেন দর্শকদের কাছে।

 

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page