জলের রূপালী শস্য

পিনাকী চৌধুরী।। ইতিমধ্যেই প্রাক বর্ষার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে আমাদের এই রাজ্যে। আর বর্ষা ঋতু মানেই যেন পল্লী প্রকৃতির এক অনন্যসাধারণ রূপ ! ধরণী যেমন সিক্ত হয়, ঠিক তেমনই সবুজ বনানী আরও সবুজ হয়ে ওঠে ! মূলত দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বর্ষায় বৃষ্টি হয় কখনও ঝেঁপে, আবার কখনও মেপে ! আর বর্ষাকাল মানেই যেন বাঙালির পাতে হাজির হয় ইলিশ মাছ। অতীব সুস্বাদু এবং অবশ্যই পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ইলিশ মাছের জন্য আমবাঙালি সাতসকালেই হাজির হন বাজারে। তবে মূলত ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে মা ইলিশ ডিম পাড়ে। আর কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সেই বৃষ্টির নামকরণ করেছিলেন ‘ ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ‘! অবাক কান্ড ! বাস্তবে বৃষ্টির সঙ্গে এই ইলিশের সম্পর্কটা আজও সম্পৃক্ত। কিন্তু এই ইলিশ মাছকে ‘ জলের রূপালী শস্য ‘ নামে কে অভিহিত করেছিলেন ?

গত শতাব্দীর তিরিশের দশকে স্বনামধন্য কবি ও সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু প্রথমবার এই ইলিশ মাছকে ‘ জলের রূপালী শস্য ‘বলে অভিহিত করলেন। বস্তুতঃ বুদ্ধদেব বসুর একগুচ্ছ কবিতা এবং গল্পে সসম্মানে স্থান পেয়েছে এই ইলিশ মাছ। তবে তারও বহুকাল পূর্বে অষ্টাদশ শতকের বিভিন্ন রচনায় ইলিশের মাছের বিবরণ আমরা পাই।

বাস্তবে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ হল পদ্মার ইলিশ। ইলিশ মাছের হরেকরকম রন্ধন প্রণালী রয়েছে। এই ইলিশ মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা কিনা হৃদরোগের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয়। এছাড়াও এই মাছে রয়েছে ভিটামিন এ ও ডি, যাকিনা মানবশরীরের পক্ষে উপকারী ভিটামিন। সরস্বতী পুজো ও লক্ষ্মী পুজোর সময় দেবীকে জোড়া ইলিশ নিবেদন করাটা একটা রেওয়াজ এবং এটি শুভ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা উপন্যাস ‘ পদ্মা নদীর মাঝি ‘ রচিত হয়েছিল কিন্তু ইলিশ ধরা জেলেদের কাহিনি নিয়ে। তাৎপর্যের বিষয় হল, লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই পদ্মার চরে দিনযাপন করেছিলেন শুধুমাত্র এই উপন্যাসটি লেখার জন্য। জিভে জল আনা লোভনীয় ইলিশ মাছের স্বাদ আজও অতুলনীয়। বিজ্ঞাপনের ভাষা ধার করে বলতে হয় ” অল্পেতে স্বাদ মেটে না, এ স্বাদের ভাগ হবে না “!

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page