মান্ধাতার আমল 

পিনাকী চৌধুরী- আমরা কথায় কথায় প্রায়শই এই ‘ মান্ধাতার আমল” শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে থাকি। সাধারণত সুপ্রাচীন কাল অথবা বেশ পুরনো অর্থ বোঝাতেই এটি ব্যবহার করা হয় । প্রতিটি গল্পের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে অপর একটি গল্প ! কি সেই কাহিনি ?

সুপ্রাচীন কালে নর্মদা নদী তার আপন ছন্দে বয়ে চলছিল। কিন্তু হঠাৎই যেন ছন্দপতন ! প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে খান্ডোয়া জেলার পাথুরে মালভূমির সঙ্গে যেন লুকোচুরি খেলতে চাইল নর্মদা নদী! মূল ধারাকে অবিকৃত রেখে নদীর একটি অংশ পাক দিল বীরখোলা পাহাড়কে। পাক খেয়ে পুনরায় ফিরে আসে মূল ধারায়। অবধারিতভাবেই সৃষ্টি হল প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এক দ্বীপ। দ্বীপটির আকৃতিও বেশ অদ্ভুত! কিছুটা ‘ ওং’ চিহ্নের মতো। দ্বীপের নাম হল শিবপুরী বা মান্ধাতা ।

কিন্তু কে এই মান্ধাতা? সূর্যবংশীয় রাজা যুবনাশ্ব পুত্রহীন ছিলেন। সন্তান কামনায় রাজা যুবনাশ্ব গহন অরণ্যে মুনি ঋষিদের আশ্রমে গিয়ে গভীর তপস্যায় রত হন! তাঁর সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে ঋষিরা যুবনাশ্বের সন্তান কামনায় যজ্ঞের আয়োজন করেন। যজ্ঞ শেষ হওয়ার পরেই তাঁরা এমন এক কলসি মন্ত্রপুত জল রেখে দেন, যা যুবনাশ্বের রাণী পান করলেই তিনি সন্তানসম্ভবা হবেন। কিন্তু মুশকিলটা হল, সেই ঘটনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হয়েই প্রবল জলতেষ্টা পেতেই সেই রাতের অন্ধকারে যুবনাশ্ব সেই মন্ত্রপুত জল পান করে ফেলেন! আর তার বেশ কিছুদিন পরেই যুবনাশ্বের পেটের বাঁদিক বিদীর্ণ করে ভুমিষ্ঠ হন মান্ধাতা! অবাক কান্ড ! ক্রমে ক্রমে সেই মান্ধাতা সুশাসক হয়ে ওঠেন এবং সূর্য বংশীয় রাজা যুবনাশ্বের উত্তরসূরি হিসেবে সেই রুক্ষ দ্বীপে তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য !

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page