অনুভবে পুরীর রথযাত্রা

 পিনাকী চৌধুরী।। রাত পোহালেই সনাতন হিন্দু ধর্মের একটি বৃহৎ উৎসব রথযাত্রা। তবে করোনা আবহে এইবছরেও যেন ছন্দপতন ! ভক্তশূন্য থাকবে পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রা । তবে যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান নিয়মমাফিক পালন করা হবে। তবে শুধুমাত্র পুরীর রথযাত্রা নয় , বরং কলকাতার ইসকনের রথযাত্রা এইবছর সুবর্ণ জয়ন্তী । কিন্তু এই অতিমারি পরিস্থিতিতে কলকাতার ইসকনের জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা কিন্তু রথে চেপে নয় , বরং চার চাকার গাড়িতে চড়ে মাসির বাড়ি রওনা হবেন। কলকাতা পুলিশের কনভয় সঙ্গে থাকবে। তবে রথযাত্রার সঙ্গে রথের মেলার সম্পর্কটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

কিন্তু আজকাল সেইসব রথের মেলাও আর আগের মত চোখে পড়ে না। যদিও কিছু স্থানে গরম জিলিপি আর পাঁপড় ভাজার লোভে অনেকেই ভিড় জমান। এবার আসি শ্রীক্ষেত্র পুরীতে বৈচিত্র্যময় রথযাত্রার কথায়। অনেকের মতে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে রথযাত্রা উৎসব আয়োজিত হয়। পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রাকে ঘিরে যেন উন্মাদনার শেষ নেই। গতবছর এবং এইবছরে ভক্তশূন্য থাকবে পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। কিন্তু অন্যান্যবার দেশ বিদেশের বহু মানুষের গন্তব্য থাকতো শ্রীক্ষেত্রে পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব দেখবার নিমিত্তে। হ্যাঁ তিনি জগতের নাথ ! তাইতো শুধু পুরীতে কেন, কলকাতার বহু মন্দিরে এবং বেশকিছু বনেদি পরিবারে ধূমধাম সহকারে পালন করা হয় রথযাত্রা উৎসব । তবে পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রার আরও একটি পৌরাণিক কাহিনি শোনা যায়।

আনুমানিক সাতশো বছরের পুরনো পুরীর ঐতিহ্যমন্ডিত রথযাত্রা উৎসব। অতীতে এই রথযাত্রা উৎসব নাকি দু’টি ভাগে বিভক্ত ছিল। দুটি ভাগে তিনটি করে মোট ছয়টি রথ পরিক্রমা করতো। রথযাত্রার পরিক্রমায় পড়তো বলাগুন্ডি নালা ।সেই কারণেই দেবতাদের মূর্তি মাঝপথেই রথ থেকে নামিয়ে নালা পার করে নতুন রথে চড়ানো হত । এরপর রাজা কেশরী নরসিংহের আমলে সেই নালা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তারপর থেকেই পুরীতে তিনটি রথেই উৎসব সম্পন্ন হয়।

অপরদিকে ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ব্রহ্মান্ড পুরাণ থেকে জানা যায় যে, শ্রীক্ষেত্র পুরীতে সেই সত্যযুগ থেকেই রথযাত্রা উৎসব পালিত হচ্ছে ‌। কথিত আছে, মালব দেশের ( ওড়িশা ) রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন একটি বিষ্ণু মন্দির গড়বার। কিন্তু কেমন হবে সেই মন্দির ? তার কোনো ধারণা ছিল না রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের । মন্দির প্রতিষ্ঠা তো হল । আর জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি নির্মাণ শুরু করলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। কিন্তু ইন্দ্রদ্যুম্ন হঠাৎই অসন্তোষ প্রকাশ করতেই মূর্তি নির্মাণ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যান বিশ্বকর্মা। বাস্তবে রথযাত্রা উৎসব মানেই যেন সমগ্র উৎকলবাসীর কাছে এক আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ একটি উৎসবমুখর দিন । এছাড়াও বাঙালিদের কাছেও এক পরম পবিত্র দিন হল রথযাত্রা উৎসব। আর এই প্রতিবেদকের কাছে রথযাত্রা উৎসব মানেই যেন এক সব পেয়েছির দেশ ! মনে পড়ে গেল , আমার সেই শৈশবের দিনগুলোর কথা! ছোট্ট একটা রথে মাটির জগন্নাথ, বললাম ও সুভদ্রার মূর্তি বসিয়ে খিদিরপুরের অলি গলি তস্য গলি পেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতাম। সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরতেই পরিবারের গুরুজনেরা বলতেন ” আজ রথ হয়ে গেল, তার মানে হাতে রইলো আর তিন মাস !” হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন , বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় !

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page