অনেকেই হতে পারেন অবসাদের শিকার, তাঁকে দূরে না ঠেলে বরং সাহায্য করুন
তৃতীয়পক্ষ ওয়েব- কথায় আছে, ‘Do Not Judge A Book By Its Cover’ অর্থাৎ মলাট দেখেই কখনৈ ভেবে নেবেন না যে বইয়ের ভিতরে কী আছে। ঠিক সেরকমই আমাদের চারপাশে কত মানুষ আছেন, যাঁদের বাইরেটা দেখে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন না যে তাঁরা কেমন প্রকৃতির বা কেমন আছেন।
হয়ত আপনার সামনে যে মানুষটি হাসছেন, ভিতরে ভিতরে তিনি ততটাও খুশি নন। আমরা টেলিভিশনে বা সিনেমার পর্দায় কোনও সেলিব্রিটিকে দেখে ভাবি যে, ‘বাহ! এঁরা কত সুখী, জীবন কত রঙিন’, আমরা হয়ত ধারণাও করতে পারিনা যে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন কেমন। আর শুধু সেলিব্রিটিদের কথাই কেন বলছি, আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই নিজের সঙ্গে তাঁর সঙ্গীর বেশ সুখী সুখী ছবি আপলোড করেন এবং ‘হ্যাশট্যাগ কাপল গোলস’ অথবা ‘হ্যাশট্যাগ কিউট কাপল অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ ক্যাপশন লেখেন। কিন্তু সত্যি করে আমরা কতটা জানি, তাঁদের বাড়িতে তাঁদের সম্পর্ক ঠিক কীরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। কিংবা আমরা কতটা বুঝতে পারি, হয়ত সে এভাবেই একটা মুখোশ আপনার সামনে রাখছে। যে সে ভীষণ খুশিতে আছে।
আজকাল হলো দেখনদারির যুগ, আপনি কষ্টের পাহাড়ের নীচে চাপা পড়ে গেলেও আপনাকে সবার সামনে দেখাতেই হবে যে আপনি ভীষণ ভাল আছেন। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা এই কাজটি করতে পারেন না। কষ্ট হলে তাঁরা বলে ফেলেন। আবার অনেকেই আছেন যারা কষ্ট চেপে রাখতে রাখতে অবসাদের অন্ধকারে তলিয়ে যান। বাইরে থেকে দেখে হয়তো আপনি একদমই কল্পনাও করতে পারবেন না যে আপনার সামনে বসে একজন হাসছে, আনন্দ করছে, মজা করছে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে হয়তো তিনি অবসাদগ্রস্থ। কাজেই, আগে থেকেই কাউকে জাজ করা অথবা খারাপ ব্যবহার করার মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নেই, বরং কৃতিত্ব আছে সেই অবসাদগ্রস্থ মানুষটিকে আবার আলোর মধ্যে ফেরানো।
ডিপ্রেশন? সে আবার কী জিনিস?
অবসাদ? ডিপ্রেশন? সে আবার কী জিনিস! কাজে ডুবে থাক, সব ঠিক হয়ে যাবে। এত বেশি ভাবার কিছু নেই, একটু ব্যায়াম কর, যোগা কর, সব আপনা আপনিই ঠিক হয়ে যাবে – এই ধরনের কথাগুলো যদি না বলেন, তাহলে সামনের মানুষটির অনেক উপকার হবে।
আমাদের যেকোনও শারীরিক সমস্যার মতই মানসিক সমস্যারও চিকিৎসা রয়েছে। আর অবসাদগ্রস্থ কেউ যদি কোনও বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে চান এতে লজ্জার কিছু নেই। আমাদের জীবনে এখন এত বেশি পরিমাণ চাপে থাকে যে অবসাদ আসতেই পারে। পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে হবে, চাকরিতে প্রমোশন পেতেই হবে, না খেয়ে ওজন কমাতেই হবে, আমাকে অন্যের থেকে এগিয়ে যেতেই হবে, ও কেন ভালোবাসছে না আমায়, নিজেকে দোষারোপ করছে। এখানে সবাই যেন এক একটা রেসিং-এ পার্ট নিচ্ছে। আপনি নিজেও যদি কখনও অবসাদের শিকার হন, তবে কাউনসেলিং করাতে ভুলবেন না।
অযথা জ্ঞান দেবেন না
তাঁর কথা শুনুন, অযথা তাঁকে জ্ঞান দেবেন না। হ্যাঁ, একদম ঠিক জানছেন আপনি। যখন কেউ অবসাদে ভোগেন, তখন তাঁর মনের মধ্যে নানা রকম উথালপাথাল চলতে থাকে। না বলা কথাগুলো জমে জমেই এইরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়। কাজেই, যদি তিনি আপনার সঙ্গে তাঁর না বলা কথাগুলো ভাগ করতে চান, অথবা তিনি যে অবসাদে রয়েছেন সেই বিষয়টি আপনাকে জানাতে চান; তাহলে দয়া করে তাঁর কথা শুনুন। তাঁকে চুপ করিয়ে দিয়ে এই কথাটি বলবেন না, ‘আরে, ব্যস্ত হয়ে থাক, কাজ কর, অবসাদ কেটে যাবে।
কখনোই নিজের দুঃখের ঝুলি খুলে বসবেন না
আবার অনেকেই আছেন যারা অন্য কারও অবসাদের কথা শুনলেই তাঁর নিজের দুঃখের ঝুলি খুলে বসে পড়েন। অবশ্য এতে লাভের লাভ কিছুই হয় না; বরং আরও বেশি করে নেগেটিভিটি ছড়ায়। একবার ভাবুন তো, যদি আপনি কাউকে আপনার একটা সমস্যার কথা বলতে যান এবং সেখানে তিনি আপনাকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজের হাজার একটা সমস্যার কাহিনী আপনাকে শোনাতে শুরু করল, আপনার কেমন লাগবে?
মনের মধ্যে জমে থাকা কথাগুলো যদি বেরিয়ে আসে, সেক্ষেত্রে অনেকটা হালকা হয়ে যায় মন। আপনি না হয় আপনার সামনের অবসাদে ভোগা মানুষটিকে এটুকুই সাহায্য করলেন! এতে আপনার কি খুব বেশি একটা সময় চলে যাবে। কারো মুখে হাসি ফোটাতে পারলে, একদিন সেই হাসিটাই আপনার মুখে ফিরে আসবে, এই কথাটা মনে রাখবেন।