অন্য নামে, তবে পরাধীন ভারতে প্রথম লক ডাউন হয়েছিল ১৯১৫ সালে
পিনাকী চৌধুরী- করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের পরে দ্বিতীয় ঢেউয়ের ঝাপটায় কার্যত নাজেহাল সমগ্র ভারত ! বস্তুতঃ গত ১৩ অথবা ১৪ মাস ধরে আমরা প্রত্যেকেই কতকগুলি বিশেষ শব্দের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছি , যেমন – লক ডাউন, কনটেইনমেন্ট জোন , আন লক পর্ব ইত্যাদি ইত্যাদি। যাইহোক আমাদের পশ্চিমবঙ্গে গত ১৬ মে থেকে ১৫ দিনের জন্য কার্যত লক ডাউন শুরু হয়েছে। যার একটাই উদ্দেশ্য , করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে সংক্রমণের গ্রাফ পুনরায় নিম্নমুখী করা। আমরা যদি ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখি তাহলে দেখবো যে , উনিশ শতকের শেষের দিকে কলেরা , প্লেগ রোগের দরুণ মহামারী ঠেকাতে লক ডাউনের পথে হেঁটেছিল তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার। বাস্তবে উনিশ ও বিশ শতকে ভারতে একাধিকবার কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, যার ফলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় জনপদ , মহামারীর কবলে পড়ে কয়েক লক্ষ মানুষ মারা যান । যদিও প্রথমদিকে ব্রিটিশ সরকার তাতে আমল দেয় নি, কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমেই যখন জটিল আকার ধারণ করে এবং ভয়াবহ হয়ে ওঠে, তখন টনক নড়ে ব্রিটিশ সরকারের। অবশেষে তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বোম্বেতে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই দু’হাজার মানুষের মৃত্যু হতে থাকে। বলা ভাল, মৃত্যুমিছিল শুরু হয় ! বোম্বে থেকে অন্যত্র কলেরা ছড়িয়ে পড়ে। তাহলে উপায় ? ১৮৯৭ সালে Epidemic Disease Act তৈরি করা হয়। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল মোতাবেক অতিমারি বা মহামারী ঠেকানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে ভিড় কমানো এবং জমায়েত নিষিদ্ধ করা। সংক্রমণ ঠেকাতে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হল ।১৮৯৭ সালের ২০ মার্চ এলাহাবাদে এক সরকারি প্রস্তাব আনা হয়, প্রস্তাব অনুযায়ী শ্রমিকদের এক মাসের সবেতন ছুটি ঘোষণা করা হবে। যদিও তদানীন্তন সময়ে সরকারিভাবে ‘ লক ডাউন ‘ শব্দটি ব্যবহার করা হয় নি, কিন্তু সার্বিকভাবে সেই একই ব্যবস্থাপনা ! তবে শুধুমাত্র ব্রিটিশ শাসকরাই নয় , কলেরার সংক্রমণ ঠেকাতে হায়দ্রাবাদের নিজামও সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। বস্তুতঃ ১৯১৫ সালে হায়দ্রাবাদে কলেরা ছড়িয়ে পড়ে ! ইতিউতি পড়ে রয়েছে মৃতদেহের স্তুপ !
চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি রব ! পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে বন্ধ করে দেওয়া হয় ট্রেন চলাচল। যাত্রীদের পরীক্ষা করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কনটেইনমেন্ট সেন্টারে। যানবাহনেও নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এমনকি জাহাজ চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তৈরি করা হয় বিশেষ কনটেনমেন্ট জোন, যার ব্যবহারিক নাম ছিল করডন স্যানিটেরজ । প্রতিটি এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের অনুমতি ছাড়া সেই এলাকায় প্রবেশ করতে পারতেন না কেউ , যার ব্যবহারিক নাম ছিল ‘ প্লেগ পাসপোর্ট ‘! আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে নামটি হয়তো বদলেছে, কিন্তু পদ্ধতি একই রকম রয়েছে ।