অমিতা মজুমদার-এর কবিতা

বানভাসি স্বপ্ন

হিরন্ময় তোমার মনে আছে ?
কি কথা হয়েছিল সেদিন বিকেলবেলায়।
বর্ষার গোধূলি প্রায় সমাগত,
তোমার হাতে ছিল জ্বলন্ত সিগারেট।
গায়ে ছিল দেশি খদ্দরের পাঞ্জাবী,
জিন্সের সাথে খদ্দরের পাঞ্জাবী ওটাই ছিল তোমার ফ্যাশন।
হিরন্ময় হাঁটছে তার ঈষৎ ঝাঁকড়া চুল বাতাসে উড়ছে,
দু একটা চুল পথ হারিয়ে কপালে এসে পড়ছে এমনটাই তুমি।
অবিন্যস্ত চুলগুলো বাতাস পেলেই অবাধ্যতা করত,
আমরাও অভ্যস্ত ছিলাম তোমাকে ওভাবে দেখতে।
তুমি কবিতা লিখতে, বিপ্লবের কথা বলতে,
সমাজ,রাষ্ট্র সব কিছু বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখাতে।
আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তোমার সেই উদাত্ত কন্ঠের আহ্বান শুনে,
ছায়ার মতো তোমায় অনুসরণ করতাম।
হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে—
তুমি একদিন, দুদিন, তিনদিন করে আর এলেই না।
আমরা সবাই চিন্তা করছি তোমার জন্য,
শেষ পরীক্ষা দিয়ে সবাই কলাভবনের মাঠে জমা হয়েছি।
আচমকা তুমি এলে !
একেবারে সাহেবী পোষাক পরা,
চুল ছোট করে কাটা।
বললে তোরা সবাই আছিস হাতে বেশি সময় নেই,
আমার ফ্লাইট সন্ধ্যায় ।
আমি ইউ এস এ তে চলে যাচ্ছি,
হ্যাঁ বিয়ে করেছি বাবার বন্ধুর মেয়ে ।
ওরাই নিয়ে যাচ্ছে,
ওরা ওখানকার ইমিগ্রান্ট !

**(এভাবেই কতো হিরন্ময়,দীপালি,অনিকেত,আতাউল,রাশেদা ‘রা
প্রতিবছর চলে যায়। তাদের বোনা স্বপ্নের বীজ অংকুরিত হবার আগেই ভেসে যায় বানের জলে )**

 

শিরোনামহীন মন-কথন

অভ্যাসের মোড়কে গুটিশুটি মেরে পড়ে থাকা অভ্যস্ত জীবনেও,
রয়ে যায় একটা ছোট্ট জানালা।
সে জানালার গরাদের ফাঁক গলিয়ে ঢুকে পড়ে,
ফেলে আসা কিছু স্মৃতির টুকরো।
দেখা যায় আজকের বার্ধক্যে ন্যুব্জ মায়ের মুখে,
মায়াময় যৌবনের উচ্ছ্বাস।
কোমলে কঠোরে একজন রাশভারী বাবা থাকেন সেখানে,
যিনিও আজ সময়ের ছোবলে শুধুই ঝাপসা স্মৃতি।
স্নেহ মায়ায় জড়ানো এক সংসারের উজ্জ্বল ছবি,
যেখানে থাকে একসাথে বেড়ে ওঠা অনেকগুলো মুখের যাতায়াত।
যারা ভাই-বোন ,কাকা-জ্যাঠা,পিসি-মাসি নামক,
সম্পর্কের নানা নামে পরিচিত।
শরীরে মনে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে,
আলগা হতে থাকে এই সম্পর্কের বাঁধন।
নিজেকে খুঁজে পায় অন্য এক ঠিকানায়,
অন্য এক পরিচয়ে আর সম্পর্কের বাঁধনে।
যা একান্তই তার নিজের বলে জানে,
এই জানাকেই জীবনের সার সত্য মেনে গড়ে তোলে অভ্যাসের ইমারত।
যে ইমারতে বাসা বাঁধ,
আরো কিছু নতুন সম্পর্কের পাখি।
সময়ের বিবর্তনে একদিন,
পাখিগুলো সব উড়ে যায় নতুন ঠিকানার সন্ধানে।

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page