একগুচ্ছ অমৃতা (অমৃতা প্রীতম-এর কবিতা)

শূন্যস্থান

এখানে ঠিক যেন দুটো রাজত্ব ছিল:

তাদের মধ্যে প্রথমটা,
আমাদের দুজনকেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল
আর দ্বিতীয়টা আমরা দুজনেই ছেড়েছি

খোলা আকাশের নিচে
আমি বহুদিন নিজেকে ভিজিয়েছি
আর সে,
তার নিজের মধ্যেই ভিজে পচে গেছে।

তারপর ঠিক বিষের মতো,
সে বছরের পর বছর আদর পেয়েছে, আর
আমার হাতটা কাঁপতে কাঁপতে ধরে বলেছে

“এসো, কিছুক্ষণের জন্য
আমাদের মাথায় একটা ছাদ হোক
তারপর সামনে তাকাই…
ঠিক আর ভুলের মাঝে একটা
ফাঁকা জায়গা খুঁজে নেই।”

 

শহর

আমার শহরটা একটা দীর্ঘ বিতর্কের মতো
রাস্তাগুলো এবড়ো খেবড়ো না বলা দলিলের মতো
আর, গলিগুলো এমন যেন…
কেউ এদিক ওদিক থেকে সবকিছু টেনে বের করছে

প্রতিটা ঘরবাড়ি… ছোট ছোট ঘিঞ্জি দেওয়াল
আর ড্রেনগুলো যেন সাদা ফেনা জমা…

এই বিতর্ক যেন সেই আদিকাল থেকেই শুরু হওয়া
যে এটার থেকেই আরও নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে
প্রতিটা দরজায় ঠোকর খেয়েছে
সাইকেল – স্কুটারের আওয়াজের সাথে লড়েছে

যে বাচ্চাটাই এখানে জন্মাতো
জিজ্ঞেস করতো আসলে কীসের জন্য এতো লড়াই!
তারপর সেই প্রশ্নটাই আবার একটা বিতর্কের জন্ম দিত

ঠিক যেন,
লড়াই থেকে বেরিয়ে আবার লড়াইতেই মিশে যাওয়া

শাঁখের আওয়াজ, ঘণ্টার আওয়াজ মিলিয়ে আসে
রাত আসে, আবার আসে… আবার চলে যায়

কিন্তু ঘুমের মধ্যেও এই বিতর্ক শেষ হয় না
আমার শহর ঠিক যেন
একটা দীর্ঘ বিতর্কের মতো।

 

নিন্দা 

আজ একটা পৃথিবী বিক্রি করেছি
আর এক দরিদ্র সেটা কিনে নিয়েছে, কারণ
আমরা অবিশ্বাসের কথা তুলেছিলাম
স্বপ্ন দিয়ে একটা কাপড় বুনেছিলাম
এক টুকরো ছিঁড়ে নিয়ে, তা দিয়ে
বয়সের মানানসই চোলি বানিয়ে নিয়েছি
আজ আমরা আকাশের থেকে
মেঘের একটা পরত সরিয়ে নিয়ে
এক চুমুক জ্যোৎস্না খেয়েছি
এই যে একটু সময়
আমরা মৃত্যুর থেকে ধার করেছি
গান দিয়ে এর দাম চুকিয়ে দেব।

পরিচয়

তোমাকে পেয়ে যেন মনে হলো
কয়েকটা জন্মের অপেক্ষায় আমি শিহরিত
দুজনের নিঃশ্বাস, আবেগ মিলেমিশে মনে হলো
মাথার ভিতরে অন্য এক পৃথিবীর হাতছানি
যেখানে একটা গুহা ছিল
যেখানে আমি ছিলাম, আর এক যোগী…
আল্লাহ্ কসম!
সেই যোগী যখন আমাকে বুকে নিয়ে
আমার শ্বাস অনুভব করেছিলেন…
এরকমই ছিল তাঁর ঠোঁটের স্বাদ,
এ কেমন মায়া… এ কেমন লীলা!
হয়তো তুমিই সেই যোগী ছিলে
নাকি সেই যোগীই তুমি…?
যে তোমার চেহারা নিয়ে আমার কাছে এসেছে
আর সেই আমিই আছি…সেই একই গন্ধ…

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page