আট দফায় ভোট কেন? প্রশ্ন তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভোটের বাদ্যি বেজে গিয়েছে। আর তার সঙ্গে সঙ্গে তোড়জোড় শুরু হয়েছে দলের ভেতর। তবে এই ভোট নিয়েই অসন্তুষ্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হলে, তিনি কালীঘাটের বাসভবনে প্রেস কনফারেন্সে প্রশ্ন তোলেন, বিহারে তিন দফায় নির্বাচন হলে পশ্চিমবঙ্গে আট দফায় কেন হবে। তার সঙ্গে সঙ্গে ইলেকশন কমিশনের কাছে অনুরোধ বিজেপির চোখ দিয়ে নয়, জনগনের চোখ দিয়ে দেখুন।
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন বিহারে ২৪০টি সিট, সেখানে ভোট হয়েছে তিন দফায়। আসামে ভোট হবে ৩ দফায়। এদিকে তামিলনাড়ুতে ২৩৪টা সিট, সেখানেও ভোট ১ দফায় হবে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪টি আসন। তাহলে এখানে ৮ দফায় ভোট কেন? এক্ষেত্রে ইলেকশন কমিশনের যুক্তিগ্রাহ্যতা কোথায় রইল তাহলে?
বিভিন্ন জেলার নির্বাচন নিয়ে বললেন কমিশনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি আমি। কিন্তু সেখানে একদিনে একটা জেলার অর্ধেক আসনে ভোট গ্রহণ। পার্ট ওয়ান পার্ট টু বিষয়ে বললেন, ওরা আবার বিএ পার্ট ওয়ান পার্ট টু শেখাচ্ছেন। যেসব জায়গায় আমাদের জোর বেশি সেইসব জায়গা গুলোতে ভোটগ্রহণ হবে তিন দিনে। এইসব কি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের কথায় হয়েছে।
জোর গলায় আবারও বললেন, এর জবাব বাংলা দেবে, বহিরাগত গুণ্ডাদের বাংলা শাসন করতে দেবো না। খেলা হবে, হারিয়ে ভূত করব আপনাদের।
কমিশনের কাছে আর্জি করলেন, আপনারা বিজেপির নজর দিয়ে বাংলাকে দেখবেন না।
এছাড়াও পর্যবেক্ষক নিয়োগ নিয়েও আপত্তি জানিয়ে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘একই লোককে পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছে। ২০১৯ সালে বিবেক দুবে কীরকম নাটক করেছিলেন তা সকলেই জানে’।
প্রসঙ্গত ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের পুলিশ পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছিল বিবেক দুবেকে৷ এবারও প্রাক্তন আইপিএস অফিসার বিবেক দুবেই ফের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় ফিরছেন৷ তাঁকেই রাজ্যের পুলিশ পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিল নির্বাচন কমিশন৷ কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়েই নিজের অসন্তোষ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
তবে এবার অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের জন্য দু’ জন পুলিশ পর্যবেক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন৷ বিবেক দুবে ছাড়াও পুলিশ পর্যবেক্ষক করা হয়েছে মৃণালকান্তি দাসকে৷ বিবেক দুবেকে রাজ্যে পাঠানোর পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে, সেই প্রসঙ্গেও সংশয় প্রকাশ করেন মমতা৷ তিনি বলেন, ‘ ২০১৯ সালে বিবেক দুবেকে পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল৷ তার পর উনি কী করেছিলেন আমরা সেই সব নাটক, খেলা জানি প্রত্যেকেই জানি৷ ‘ প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ১৮টি আসন দখল করেছিল বিজেপি৷
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার জন্যেই এবারও বিবেক দুবেকে পাঠানো হচ্ছে৷ কারণ রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন বিরোধীরা৷ আর এবার বাংলার নির্বাচন পাখির চোখ বিজেপির কাছে। নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তবে কেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সেই প্রশ্নের জবাব সরাসরি এড়িয়ে গিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা জানান, ‘অনেক কিছু বিষয় খতিয়ে দেখার পরেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷’
আপাতত আপামর বাঙালির নজর নির্বাচনের দিকে। ২০২১ ভোটযুদ্ধে কোন পাল্লা ভারী সেটা সময় বলবে। আগামীর নির্বাচন পাখির চোখ রাজনৈতিক দলগুলির।