কলকাতার জলছবি
পিনাকী চৌধুরী।। তিলোত্তমা কলকাতা অথবা সিটি অব জয়, যে নামেই অভিহিত করি না কেন, আজও আমার প্রাণের শহর কলকাতা আছে কলকাতাতেই ! বিশেষত বর্ষণমুখর দিনে যখন মাটির সোঁদা গন্ধটা নাকে ঢোকে, তখন এক অদ্ভুত মাদকতায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় মন ! ইতিউতি জমা জলের মধ্যে দিয়েই চলছে গাড়ি। দামাল ছেলেরা কাদা প্যাচপ্যাচে মাঠে দাপিয়ে ফুটবল খেলছে। ঘন কালো মেঘের ঘনঘটা দেখলেই যেন আজও কোনও কবির কল্পনায় শুধুই যেন বিরহ ভেসে ওঠে । কবির কলম যেন কথা বলতে শুরু করে!
তবে বর্ষার সঙ্গে প্রেমের একটা বেশ মাখোমাখো সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আনাচে কানাচে আজও হয়তো প্রেমিক প্রেমিকা একটি ছাতার তলায় প্রেমে রত ! প্রেমিকার শরীর , মন সবই যেন আত্মসমর্পণ করে প্রেমিকের বাহুতে ! একরত্তি কোনো শিশু হয়তোবা আজও তাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় জমা জলে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দিয়ে এক অনাস্বাদিত আনন্দ অনুভব করে! মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি অথবা মসজিদের আজান, দুটোই বেশ উপভোগ্য হয় বর্ষণমুখর দিনে ! আজও হয়তো কোনো ভবঘুরে তাঁর স্মৃতিচারণায় বারে বারে তাঁর শৈশবের বর্ষার দিনের কথা ব্যক্ত করেন।
এইরকম একটা ঘনঘোর বর্ষায় চায়ের দোকানে আড্ডা বসে, যে আড্ডায় মাটির ভাঁড়ে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে বিভিন্ন বয়সের মানুষজন আড্ডায় মেতে ওঠেন। শুধু কি তাই ? অনেক আটপৌরে পরিবারের সদস্যরা বর্ষার সন্ধ্যায় মুড়ি আর গরম তেলেভাজায় কামড় দিয়ে গল্পে মশগুল হয়ে পড়েন। লাস্ট ট্রামে চড়ে বর্ষার রাতে কখনও বাড়ি ফিরেছেন ? হ্যাঁ, অন্ধকারের বুক চিরে যখন ট্রাম নিজ গন্তব্যে এগিয়ে চলেছে, আর বাইরে কখনও ঝেঁপে আবার কখনও মেপে বৃষ্টি হচ্ছে, সেই অ-সা-ধা-র-ণ নান্দনিক দৃশ্য কখনও যেন ভোলা যায় না !
বাস্তবে বর্ষাকাল মানেই যেন না পাওয়ায় বেদনাকে কৃত্রিম উপায়ে পাওয়ার আকাঙ্খা ! মনে আছে আপনাদের অতীতের সেইসব বর্ষণমুখর দিনে যখন আপনার স্কুলে ‘ রেনি ডে’ ঘোষণা করা হত ? সত্যি কি আনন্দটাই না হত ! সবুজ, সতেজ গাছগাছালির দিকে তাকালেই যেন মনটা আনন্দে নেচে ওঠে ! বৃষ্টিস্নাত কলকাতা যেন আজও আমার মনে অনুরণন তোলে, হয়তোবা আপনাদেরও ।