চলো বেলপাহাড়ি

ইরো বান 

নাইট শিফ্টের  চাকরি  করা ,  পৃথিবীর শ্রমজীবী  মানুষের  কাছে  তাদের কাজের  মত  বর্বরতম কোন  কিছুই   নেই |  রাত্রের  নরম  বিছানার  উষ্ণতা  এদের  কপালে কম  জোটে  |  রাত   জাগা   পেঁচারা   বুঝতে  পারে  সামনের  জনের  সোহাগের অভিনয়টা বড্ড  বাসি | নিশিপদ্মগুলো  চোখের  অলক্ষ্যে  শুকিয়ে  যায় |কোটি কোটি এই অভাগার মধ্যে দলছুট  এক দুটো  তারাখসার  জন্ম হয় , যারা নরম বিছানায় ঝড় তোলে  ,তা  নিজেরই  হোক  বা  অন্যের ! সেইরকমই একজন রঙিন মানুষ,  রাজীব , নাইট  ডিউটির  অছিলায়  বিছানা গরম করতে বেরিয়ে পড়েছে | বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়  মাসের তিরিশ দিন গাড়িতে  স্টার্ট দিয়ে গাড়ির কাঁচ খুলে মাথাকে বেকিয়ে বৌকে যত পারা যায়  ”টা টা ” করার অভিনয় তার মাসল মেমোরিতে  ক্লাচ , ব্রেক ও  অ্যাকসিলারেটরের সঠিক সামঞ্জস্যের  মত  রপ্ত হয়ে গেছে | বাড়ির  গলি পেরিয়ে  পাকা রাস্তায়   উঠে  গাড়ির কাঁচ বন্ধ করলেই প্রথম শব্দটি  মাথায়  আসে ” FUCK ”| তিরিশদিনের এই  গদ্যময়  জীবনের  মধ্যে এক,  দুদিন চলে ‘ মন  বেলপাহাড়ি ‘ | সেইরকমই  আজ  এগিয়ে  চলেছে । গন্তব্য  মিত্তির বাড়ি | ঘর ফাঁকা | বৌদির লাইভ  ভিডিওগুলো  হেব্বি  হট  ! বৌদির সাথে  কথা  বলতে  বলতে  ইউটার্ন  মারার  সময়  দেখতে পেল   বিপরীত  দিক থেকে   আসা  একটা  হাইস্পিড  পাছা উঁচু  গাড়ি  নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে    রাস্তার পাশের  চিপসের পাহাড়ের উপরে উঠে পাল্টি খেয়ে চেপ্টে যাওয়া  আরশোলার মত  ছটপট করছে  | ”বৌদি একটু  ফোনটা  রাখো ” বলে নিজের গাড়ির থেকে বেরিয়ে , আহত  মানুষটিকে  চটপট গাড়ির থেকে  বার  করে,  এমার্জেন্সি  নাম্বারে  ফোন  করে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নিল | ওর ফোনটা  হাতে নিয়ে তার নিকটাত্মীয়ের ফোন নাম্বার  খোঁজ করতে গিয়ে শুনতে পেল   ওপাশ থেকে এখনো কেউ ‘হ্যালো’ ,  ‘হ্যালো ‘ করছে | গলার স্বরটি তার ভীষণ চেনা , বছর দশ আগে ফুলশয্যার রাতে এই  কণ্ঠেই  শুনেছিল

”আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে
আসবে যদি শূন্য হাতে–”

অ্যাম্বুলেন্সে  করে  আহত  মানুষটি  যখন  হাসপাতালে চলে গেল ,  মিছিমিছি চাকরিতে না গিয়ে  বাড়িতে ফিরে এসে   বৌকে  বলল ”  অনেকদিন দুজনে  বেড়োতে যাওয়া হয়নি ,  চলো  বেলপাহাড়ি ”|

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page