জেনারেশন Z এর কাছে হেরে গেল মিত্রা সিনেমা
লিখছেন – বিরশা ভৌমিক
৮৮ বছর ধরে কলকাতা’কে দিয়েছে বিনোদন, দিয়েছে কতই না মূল্যবান স্মৃতি। সেই স্মৃতি নিয়ে এবার ভাঙতে বসেছে মিত্রা সিনেমা হল। ১৯৩১ সালে বীরেন্দ্রনাথ সরকারের হাত ধরে শুরু হয় মিত্রা সিনেমার পথ চলা। আর এই সিনেমা হলের উদবোধন করেন স্বয়ং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস। সে সময় এর নাম ছিল ‘চিত্রা সিনেমা’। এরপর ১৯৬৩ সালে হেমন্ত কৃষ্ণ মিত্রের দায়ীত্বে নাম বদলে হয়ে যায় ‘মিত্রা সিনেমা’।
প্রথম সিনেমা দেখানো হয়েছিল মহানায়ক উত্তম কুমার অভিনীত ‘দেনা পাওনা’। এরপর এক এক করে দেখানো হয় বাংলার স্বনামধন্য সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের পরিচালিত সিনেমা। এরকম বহু কলা কুশলী, শিল্পীর অভিনয় দেখার জন্যে অনেকেই ছুটে যেতেন সিনেমা হলে।
‘সিনেমাওয়ালা’ বলেছিল ‘মদের নেশা রামে, সিনেমার নেশা নামে’। অর্থাৎ সিনেমা মানেই বড়ো স্ক্রিন। কিন্তু সময়ের কষাঘাত যে বড়ো নিষ্ঠুর। এই সময় অনেক কিছুই চায়। তাই তার দাবীর কাছে হার মেনে এবার ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল ‘মিত্রা সিনেমা’। সিনেমা হলটি বন্ধ হয়েছিল অনেকদিন আগেই। এবার বিল্ডিং ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু। ধূলিসাৎ হতে চলেছে কত কত স্মৃতি। গত কয়েকদিন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকের পোস্টেই দেখা গেল সেই স্মৃতিকাতরতা। বনেদী কলকাতা স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চায়। জুন থেকেই শুরু হবে কাজ। তৈরি হবে মাল্টিস্টোরেজ বিল্ডিং। অত্যাধুনিক শপিং মল। মাল্টিপ্লেক্স।
এখনকার জেনারেশন সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যেতে চায় না। তাঁদের কাছে মাল্টিপ্লেক্সের আকর্ষণ অনেকটাই লোভনীয়। যার ফলে একসময় যেখানে সিনেমা দেখার জন্যে লাইন পড়ত, শেষে ৫০-৬০ জন লোকও টিকিট কাটতো না। এরপর এলো করোনা ভাইরাস। লকডাউন। সব কিছুই কেমন হাতের মুঠোয় বন্দী। সিনেমা এখন ওয়েব মাধ্যমে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। যুগের সাথে সাথে বদলে গেছে স্বাদও। মিত্রা সিনেমা হলের মালিক দীপেন্দ্র কৃষ্ণ মিত্র চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি কোনও। হলটি রেনোভেট করে, দর্শকদের মাল্টিপ্লেক্সের মতো সুবিধে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। অবশেষে শহরের বাকি পুরনো সিনেমা হলের মতো শহরের বুক থেকে মুছে যেতে চলেছে আরও একটি স্মৃতিমেদুর ঐতিহ্য।
ছবি এবং তথ্য-ফেসবুক