দামাল মেয়ের অসাধ্যসাধন, খুলে ফেলেছে নিজস্ব লাইব্রেরী
লিখছেন জিনাত রেহেনা ইসলাম
অষ্টাদশী ছুঁইছুঁই । সাউথ চব্বিশ পরগনার ফলতার কিশোরী। গ্রামের নাম আসিনা। এখানকারই মিষ্টি মেয়ে রাহিলা খাতুন। এই দামাল মেয়েটি করেছে অসাধ্যসাধন। নিজের বাড়িতেই খুলে ফেলেছে আস্ত একটা লাইব্রেরী। লকডাউনের দিনে বন্ধ থাকা বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনায় মন ফেরাতে শুরু কাজ। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সিলাবাসের বই এর সঙ্গে আছে ৬/৭ টি করে সহায়ক বই। প্রথম- দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষেরও কয়েকখানা বই জোগাড় করেছে রাহিলারা। মোট নয় জন লাইব্রেরীর তত্ত্বাবধানে আছে। এই দলে রাহিলার মা সহ চারজন মহিলা।
রাহিলার এখন দ্বাদশ শ্রেণি। সামনেই উচ্চমাধ্যমিক। লকডাউনের সময় থেকে গ্রামের ছেলেমেয়েদের বই বিমুখ হতে দেয়নি রাহিলারা। ওদের গ্রন্থাগার নয়ানাভিরাম। এমন স্বর্গ আর কোথায় আছে! চার- পাঁচটা কাঠের দ্বিতল তাকে সাজানো বই। প্রতিটিতে একটি করে জলের বোতল রাখা। সামনে পড়ার জন্য গুটি কয়েক চেয়ার। মাটিতে বিছানো সাদা মোটা কাপড়।। সাধ্য কম। স্পর্ধার স্বপ্নবিলাস। তবু অনন্যসাধারণ সেই প্রয়াস। রাহিলাদের লাইব্রেরি অষ্টম আশ্চর্যের কম কিসে!
সারা দেশ জুড়ে হিন্দুর কমে যাওয়া হিন্দুত্ব আর মুসলমানত্বের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে চলছে যুক্তির প্রতিষ্ঠা ও প্রতিযোগিতা। হলাহল বিষ ছড়িয়ে পড়ার আবহ। তখনই রাহিলারা ঘরের মধ্যে সূর্য আটকে রেখেছে। হাঁ করা ইট গাঁথা চার দেওয়াল জুড়ে আগামীর আলো। রঙহীন অসহায় বন্ধ কাঠের জানালা জানান দিচ্ছে অসময়। কিন্তু মেঝেতে পাতা শুন্য আসনে লাল কালিতে লেখা জননী শব্দ আশা জাগায়। মায়ের মত প্রিয় এই লাইব্রেরী।
এই তো সেদিন ভোট মাফিয়া বলছিল – “একজন মহিলা হয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাই বলে মহিলা হবেন না!” আসলে সমাজকে ভুল রাস্তা দর্শানো এই মিথ্যাবাদীদের পরাক্রম থেকে সমাজকে মুক্তি দিতে রাহিলারা এসে পড়ে। এরাই বলে দেয়, হাজার বার -সহস্রবার,মহিলা হয়ে জন্মানো কতটা স্বার্থক! মহিলা হবেন, রাহেলা ও অষ্টম পাশ মা ফতেমার মত মহিলা হবেন। প্রশ্ন করার অধিকারকে মজবুত করতে বই এর সামনে আসন পেতে বসবেন। এক মহিলা যা চায় সমাজকে সেই পথে হাঁটতে দিশা দেবেন। এই উত্তরটাই আসলে ছুঁড়ে দিতে চায় রাহিলা,আর্জিনা,রুনা খাতুনরা সমাজের মোড়লদের। তাই আসিনা গ্রামে রাহিলাদের লাইব্রেরি হোক আমাদের গন্তব্য। বইগুলি একবার নেড়েচেড়ে দেখার দুর্বার ইচ্ছা জেগে থাকুক মনে। লাইব্রেরীটা বড় হয়ে উঠুক। অনেক বই থরে থরে সাজানো হোক। খিলখিল হেসে গ্রামের বাচ্চাগুলো বই এর পাতায় মুখ ঢাকুক। এই দেশের গর্ব হোক রাহিলার ঘরের নবজাতক এই ছোট্ট গ্রন্থাগারটি।