দুর্যোগের রাত ২০ মে ‘২০২০’
পিনাকী চৌধুরী- দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল ! গতবছরেও লক ডাউন চলাকালীন সময়ে ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আমফানের তান্ডবে কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগণা , দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিস্তির্ণ অঞ্চল এবং অবশ্যই কলকাতা ! এই প্রতিবেদকের স্মৃতিতে আজও সেই দুঃস্বপ্নের রাত ! সেদিন দুপুর থেকেই এলোমেলো ঝোড়ো হাওয়া, বিকেল হতেই আকাশ ঘন কালো মেঘে সমাচ্ছন্ন ! তারপরেই ক্রমে ক্রমে সেই বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবলীলা ! কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণায় সেই ঝড়ের গতিবেগ ছিল প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার ! সঙ্গে অতি প্রবল বৃষ্টিপাত ! সেই আমফানের তান্ডবে কলকাতার বিস্তির্ণ অঞ্চল টানা ৭২ ঘন্টা নিষ্প্রদীপ ছিল ! ইন্টারনেট ও টেলি পরিষেবা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। প্রতি মুহূর্তে যেন আতঙ্ক তাড়া করছিল । ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৭২ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল, বহু কাঁচা বাড়ি ধসে পড়েছিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বিশাল ছিল ! সাম্প্রতিক অতীতে এইরকম ঘূর্ণিঝড় মানুষ দেখেননি। তবে ইতিহাস খনন করে জানা যায় যে, ১৭৩৭ সালের ১১ অক্টোবর এর থেকেও মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল কলকাতা সহ তামাম পশ্চিমবঙ্গ ! সেই ঘূর্ণিঝড় ‘ কলকাতা সাইক্লোন’ নামে পরিচিত ।
৬ ঘন্টায় মোট ৩৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। গঙ্গা নদীতে প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়, এমনকি ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস ! ঝড়ের গতিবেগ ছিল প্রচুর । যদিও সেই সময় হাওয়ায় গতিবেগ মাপবার তেমন কিছু ছিল না , বলা ভাল প্রযুক্তি এখনকার মত উন্নত হয়নি । কিন্তু তবুও বিশ্বের সর্বকালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের একটি হল সেই ‘ কলকাতা সাইক্লোন ‘!
মূলত পশ্চিমবঙ্গের নিম্নাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল । গঙ্গা নদীর ব দ্বীপে কমবেশি ২০০০০ জলযান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ! এর মধ্যে ইংরেজ দের ও ডাচদের জলযানও ছিল ! ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নথি থেকে জানা যায় যে, সেই সময় ‘ কলকাতা সাইক্লোন’ এর প্রভাবে শুধু কলকাতাতেই প্রায় ৩০০০ জন মারা যান , সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যাটি প্রায় ৩,০০,০০০ ছিল । ভাবা যায় ! তবে তদানীন্তন কলকাতায় বেশিরভাগ মাটির তৈরি বাড়ি খড়ের চালা থাকতো, সেসব তো বটেই, এমনকি ইটের গাঁথনি দিয়ে নির্মিত বাড়িগুলো কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় !