নেরুদা-র পোস্টম্যান

ঋতব্রত ঘোষ 

চিলি থেকে বিতাড়িত হয়ে নেরুদা একবার আশ্রয় নিয়েছিলেন ইতালীর এক অখ‍্যাত গ্রামে। একঘর জেলেদের বাস। বেশির ভাগেরই অক্ষরজ্ঞান নেই। তবু নেরুদাকে তারা খুব আপন করে নিয়েছিল। বিশেষ করে মারিও নামে ছেলেটি। সে ছিল ওখানকার অস্থায়ী ডাক বাহক। নেরুদার যাবতীয় চিঠি সে পৌঁছে দিত। আর নেরুদার কাছ থেকে জানতে চাইত কেমন করে কবিতা লিখতে হয়। নেরুদা চেনাতেন তাকে মেটাফর, সাগরের ঢেউএর মধ‍্যে, জেলেদের বিষণ্ন মাছ ধরার জালের মধ‍্যে, সী-গালের আর্তনাদের মধ‍্যে নেরুদা চেনাতেন তাকে।
এক অনবদ‍্য সখ‍্যতা তৈরি হয়েছিল মারিওর সাথে জগতবিখ‍্যাত কবির।
একসময় নেরুদার মুক্তির ডাক এলো দেশে ফিরে যাবার। যেমন অনাড়ম্বরভাবে এসেছিলেন তেমনই ভাবে একদিন নেরুদা চলে গেলেন। যাবার পর প্রতিশ্রুতি মত মারিওকে একটা চিঠি পর্যন্ত পাঠালেন না। ওই গ্রামে থাকাকালীন নেরুদা মারিওর বিয়ে দিয়েছিলেন ‘দান্তের নায়িকা’ বিয়েত্রিচের সাথে। চার্চের দলিলে তাঁর সই ছিল প্রত‍্যক্ষদর্শী হিসেবে।
বহু বছর কেটে গেছে। ঘুরতে ঘুরতে নেরুদা ফিরে এসেছেন সেই গ্রামে। বিয়েত্রিচের পিসীর ইন্-এ ঢুকে দাঁড়িয়েছেন। ছোট্ট ছেলেটি বলের পেছনে ছুটতে ছুটতে নেরুদাকে দেখে অবাক বিস্ময়ে থাকিয়ে আছে, অচেনা মানুষ। মায়ের ডাক ভেসে এলো – পাওলিটো। চমকে উঠলেন কবি পাবলো। তাঁর নামের সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছে ছেলের।
কথা প্রসঙ্গে নেরুদা জানলেন, পাওলিটো তার বাবাকে দেখে নি কোনোদিন। তার জন্মের আগে তার বাবা কম‍্যুনিষ্ট আন্দোলনে শরীক হয়ে গেছিলো ভিন্ রাজ‍্যে। পেয়েছিল ওই আন্দোলনের এক অনুষ্ঠানে কবিতা পড়বার ডাক। মঞ্চে উঠতে যাবে, পুলিশ এসে এলোপাথারি গুলি চালায়। মারিও ফেরে নি সেদিন, পাওলিটো তার বাবাকে দেখতে পায় নি। বিয়েত্রিচে বলে, মারিও একটা কবিতা লিখেছিল আপনার নামে। Song for Pablo Neruda. যদিও সাগরের ঢেউ নিয়ে ছিল কবিতাটা, মারিও উৎসর্গ করেছিল নেরুদাকে।

ছবির নাম Il Postino (The Postman), পাবলো নেরুদার পোষ্টম‍্যান ছিল মারিও।

হেমন্তের অরণ‍্যে আমি পোষ্টম‍্যান – শক্তি চাটুজ‍্যের হলুদ ঝুলিতে এমন কত গল্প যে ছিল!

“And it was at that age…..Poetry arrived
in search of me. I don’t know, I don’t know where
it came from, from winter or a river.
I don’t know how or when,
no, they were not voices, they were not
words, nor silence,
but from a street I was summoned,
from the branches of night,
abruptly from the others,
among violent fires
or returning alone,
there I was without a face
and it touched me.”

Pablo Neruda

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page