পরিচারিকাদের কথা

পিনাকী চৌধুরী- বুদ্ধি খাটিয়ে নয়, এনারা রীতিমতো গতর খাটিয়ে উদয় অস্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কোনোরকমে দু’বেলা দু’টো অন্নের সংস্থান করেন। হ্যাঁ, সেইসব পরিচারিকাদের কথাই বলছি, যাদের গোদা বাঙলায় আমরা ‘ কাজের মাসি ‘ নামে অভিহিত করে থাকি। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিস্তীর্ণ এলাকায় কমবেশি দশ হাজার পরিচারিকার বাস  এনাদের বেশিরভাগই হয় স্বামী পরিত্যক্তা অথবা স্বামী রোগ শয্যায় । কিন্তু তাই বলে তো জীবন থেমে থাকবে না। এখানে গ্ল্যামারের আলো পৌঁছয় না, নেই কোনো আতিথেয়তার আতিশয্য ! দিনভর শুধু হাড়ভাঙা খাটুনি! পেট বড় বালাই! নিত্যদিনের অনটন মাথায় রেখেই সেইসব পরিচারিকারা কাকভোরে উঠে বেশ কিছু পথ পায়ে হেঁটে জয়নগর অথবা মজিলপুর স্টেশনে এসে ফার্স্ট ট্রেন ধরেন, তারপর সেই ট্রেনে করে বালিগঞ্জে এসে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন! বিশেষত দক্ষিণ কলকাতায়।

মধ্যবিত্ত অথবা সম্ভ্রান্ত পরিবারে ক্রমে ক্রমে ‘ কাজের মাসি ‘রা বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন। পরিবারের বাচ্চা দেখাশোনার দায়িত্ব অথবা ঘরদোর সাফ সুতরো করা, কিম্বা রান্নার কাজে এনারা রীতিমতো পারদর্শী ! আর সেইসব পরিবারের সদস্যরাও পরিচারিকাদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন । আর পরিচারিকারাও সেইসব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করেন। এনাদের মুখে ‘ দাদাবাবু’ অথবা ‘ বৌদিমণি ‘ কিম্বা ‘ শাউড়ি ‘ এবং ‘ ডায়মন্ড হাবরা ‘ কথাগুলো আকছার শোনা যায়! সারাটা দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে গালগপ্পো চলে ! রাত ক্রমশই গভীর হয়! পরিচারিকাদের ঘরে ফেরার পালা!

দিনের শেষে দীর্ঘশ্বাস গুলো যেন জানান দেয় ” খাটো খাও ! মনের মত কিছু হয় না, হয় তুমি মেনে নাও নতুবা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নাও !” কিন্তু গতবছর থেকেই যেন ছন্দপতন! গতবছর লক ডাউন চলাকালীন সময়ে সেইসব পরিচারিকাদের দুরবস্থা চরমে উঠেছিল। আর এবছরও মন ভালো নেই কাজের মাসিদের! রাজ্যে কার্যত লক ডাউন চলছে ! বাস্তবে তাঁদের অবস্থা শোচনীয় ! আধপেটা খেয়ে কোনোরকমে দিনগত পাপক্ষয় করছেন সেইসব ‘ মালতী’রা ।‌

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page