বঙ্গের ভোটচিত্র..
লিখছেন বুলবুল ইসলাম
ভোটের দামামা বেজেছে,একমাস যাবৎ যেন ভোট উৎ-শব,মৃত্যু মিছিলের উপর দাঁড়িয়ে চলছে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য,পাড়ার রকগুলো বা ক্লাব,বাস ট্রামে এখন সেই আগের মতো ভোটের তর্কাতর্কি বা ঠাট্টা মস্করা কিছুটা হলেও পিছু হটেছে,মানুষ নিজের কথা বলার জায়গা হারাচ্ছেন নিজের বন্ধু বান্ধবদের মধ্যেও,আসলে সকলেই একটু ভয় পাচ্ছেন,এই ভয়ের পরিবেশ কয়েক বছর আগেও কি ছিল আদৌ??আসলে এই ভয়টা সংক্রামিত করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দই,তাঁরা রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বা সামাজিক ইতিবাচক পরিবর্তনের পরিবর্তে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিপক্ষ দলের বা নেতা নেত্রীর নেতিবাচক ভুমিকাগুলো,আর সেখান থেকেই পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণের অস্ত্রে শান দিচ্ছেন তা যেন রাজনৈতিক দলগুলির সাধারণ সমর্থকদের মধ্যেও সংক্রামিত হচ্ছে,তা থেকেই বারুদ তৈরি হয়ে আগুন ধরাচ্ছে আমাদের প্রতিদিনের চেনা সম্পর্কগুলোয়,রাজনৈতিক পরিবেশের এই পরিবর্তনের মূল কারণ আগামীর দিশা না খুঁজে পাওয়া,মানুষের প্রত্যেকদিনের সমস্যা বা নাগরিক চাহিদাগুলোর ঠাঁই রাজনৈতিক দলগুলোর ইস্তেহারে থাকলেও তার আলোচনা বা চর্চার থেকেও পারস্পরিক আক্রমণ এর সুরই যেন চড়া দামে বিকোচ্ছে মিডিয়া বা প্রাত্যহিক সংবাদপত্রগুলিতে কিংবা নেট দুনিয়ায়,গ্রামীণ বঙ্গ থেকে শহরতলির জীবন জুড়ে সেই আনন্দের উৎসবের মধ্যে দিয়ে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া তাই কিছুটা হলেও থমকে গেছে,রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচন কমিশন সকলেই বলছেন নিজের ভোট নিজে দিন,শান্তিতে দিন,কিন্তু এই ভরসার বাস্তব রূপ যে কঠিন তা সকলে জেনেই বলতে বাধ্য হচ্ছেন,এই পরিবেশ না পাল্টালে সাধারণ মানুষ ভোটের প্রতি বিরক্ত হয়েই এক ধরণের অনীহার পরিবেশ তৈরি হতে বাধ্য,আগে সেদিকটা নিয়ে সকলকেই ভাবতে হবে..
ভোটের উপকরণেও কিছুটা বদল এসেছে,হাতে লেখা পোস্টার,দেওয়াল লিখন,রাজনৈতিক দলগুলোর ফ্ল্যাগ ফেস্টুনের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল প্রচারের উপর গুরুত্ব যেমন বেড়েছে,তেমনি ভোটের কার্টুন বা ভোটের মজার ছড়ার পাশাপাশি একটু একটু করে জায়গা করে নিয়েছে থিম সং,রাজনৈতিক দলগুলোর মিটিং মিছিলে বা স্ট্রীট কর্ণারে সেগুলো শোনা যায় কান পাতলেই,বঙ্গের ভোটচিত্রে এবার কিন্তু অনেকটা জায়গা জুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেমন জায়গা করে নিয়েছেন চলচিত্র বা সিরিয়াল এর শিল্পীরা কিংবা গায়ক গায়িকারা তেমনি নতুন প্রজন্মের অসংখ্য মুখ যাঁরা ছাত্র বা যুবক যুবতীদের প্রতিনিধি তাঁরা যেন নতুন করে আশা তৈরি করছেন মানুষের মধ্যে,এক সময় যাঁরা বলতেন ভালো বা প্রতিভাবান ছেলে মেয়েদের জন্য আর রাজনীতি নয় তাঁরা অন্তত এবারের ভোটচিত্রে একটু অন্য বসন্তের ছোঁয়া পাচ্ছেন,প্রার্থীরা নিজেরাই আবৃত্তি,গান এর মাধ্যমে যেমন মানুষকে কাছে টানছেন তেমনি সেল্ফি বা ফেসবুক লাইভের মাধ্যমেও প্রার্থীদের সঙ্গে মানুষ সরাসরি সংযোগ তৈরির সুযোগ পাচ্ছেন,যা বেশ কিছু বছর আগেও প্রায় অসম্ভব ছিল,বহু বছর ধরেই বাংলার ভোটের সঙ্গে পথ নাটিকার একটা যোগাযোগ ছিল সেই যোগাযোগ আজও অমলিন তবে একটু ভিন্ন ধারায়,চলচিত্র শিল্পীদের নিয়ে মানুষের মেতে ওঠার ইতিহাস আজ নতুন নয় কিন্তু তাঁদের সঙ্গে সেল্ফি তোলার সুযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ তৈরির সুযোগ কিছুটা হলেও একটু অন্যরকম,তবে দীর্ঘ এক মাস যাবত ভোটের কারণে সরকারি কাজ বা নতুন প্রকল্প থমকে যাওয়ার জন্যে জনজীবনেও তার প্রভাব পড়ছে,এত দীর্ঘদিনের ভোটের দফায় যেন বৈশাখ না আসতেই মানুষের স্বস্তির দফারফা…
ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যেই গত বছরের করোনা আবহ যেন আরও মারাত্মকভাবে ফিরে এসেছে সারা দেশসহ রাজ্যেও,আরও বেশি সংক্রমণের মধ্যে পড়ছি আমরা,রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় প্রত্যেকেই করোনা বিধি না মেনেই অসংখ্য মিটিং মিছিল যেমন করছে তেমনি সাধারণ কর্মী বা সমর্থকরা করোনার গত বছরের পরিবেশ প্রায় ভুলে গিয়ে সচেতনতা হারিয়ে ভোট যুদ্ধে সামিল,আসলে প্রত্যেকের সচেতনতা ছাড়া একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে এত বড় সংখ্যক মানুষকে এক সুরে বাঁধা বেশ কঠিন,তাই সমষ্টির সচেতনতা নির্ভর করে স্বতন্ত্র এক একজনের উপরেই…
আশা নিরাশার এই নির্বাচনে সামাজিক জীবনে মানুষের কিছুটা পরিবর্তন তৈরি হয়েছে ভোটের প্রচারের কারণেই,নেতা নেত্রীদের ও মিডিয়ার প্রচারেও বড্ড বেশি সাম্প্রদায়িক আলোচনা স্থান পাওয়ায় মানুষ যেমন বিরক্ত বোধ করছেন তেমনি বিশ্বাসের জায়গাটাও কিছুটা যেন টলে যাচ্ছে,এখনো বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও কিছুটা নড়েছে অস্বীকার করার জায়গা নেই,যা ভোটের পরেও থেকে যাবে বহুদিন,সেটা মেরামত করতে সকলকে একটু একটু করে দায়িত্ব নিতেই হবে,লেখক শিল্পী সাহিত্যিক থেকে নাট্যকর্মী,সমাজকর্মী, শিক্ষক শিক্ষিকা সহ সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা যদি এই দায়িত্ব গুরুত্ব দিয়ে পালন না করি তবে আগামী প্রজন্ম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে,..
ভোটারদের একটা বড় অংশ কিন্তু ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে করোনার সময়ে কারা পাশে ছিলেন,কারা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে খাবার ওষুধ দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন,কারা আমফানে মারাত্মক ক্ষতির সময়ে পাশে ছিলেন তথা সার্বিকভাবে আশ্রয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কারা সদর্থক ভূমিকা পালন করতে পারেন,বা শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বা শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন সেগুলো বিবেচনার মধ্যে যেমন রাখছেন তেমনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে কারা গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে পারেন সেগুলোও বিবেচনা করছেন..
এখনো ৪দফা ভোট বাকি আমরা সকলে মিলে যদি সামনের দফাগুলোয় একটু সচেতন ও সজাগ ভূমিকা পালন করে হিংসা দ্বেষ আক্রমণকে সংযত করতে পারি তবেই ভোট
উৎ-শব থেকে কিছুটা হলেও আগামীর দফাগুলো উৎসবের পরিবেশ তৈরি করতে পারে..