বাঙালীর ভোট-নামচা, সংস্কার এবং সংস্কৃতি
শারমিন আখতার
আকাশে আকাশে এখন ফাল্গুনের ছোঁয়া। কেমন উদাস এবং ভাবলেশহীন। বাঙালির আকশপাতাল ভাবার মতো উদার এবং অন্তহীন যার বিস্তৃতি। যার কোনও মাত্রা নেই, নেই ভাষাগত ভাবনা এবং সাম্প্রদায়িক ক্ষুদ্র মানসিকতার সচিত্র রূপ। বিশেষ এবং নির্বিশেষের মিলিয়ে তার গতিবিধি। গোষ্ঠীবিহীন এক সমাজের ভেতর তার বিচরণ।
নিভৃতচারী বাঙালির এই আকাশকে, ভৌগলিক আস্থাকে, নিজস্ব সত্তাকে এবং নিজস্ব রাজনৈতিক মতবাদকে যারা কলুষিত করতে চাইছে। বহিরাগত তকমা পাওয়া সেইসব রাজনৈতিক ক্ষমতাবানরা ক্ষমতা বিস্তারের লোভে সমস্ত কিছু আগ্রাসিত করতে চাইছে। এক এক করে সমস্ত শক্তি। মানুষ থেকে শুরু করে ভাষা প্রেম। যারা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। তারা ধ্বংস করে দেবে। আমরা সকলেই প্রায় নিশ্চিত।
আমাদের পাহাড়-পর্বত, জীবনের চড়াই-উতরাই, দেশকে নিয়ে স্বপ্ন, রাজনীতির ভণ্ডামো, দল বদলের পালা। আমরা কোনও কিছুতেই প্রায় নেই। সবকিছুতেই এক সুষ্ঠু প্রচেষ্টার ভেতর যাতায়াত। শব্দ উচ্চারণ করি সাহসের সঙ্গে। এখানে কোনও দ্বিধাবোধ নেই। বাঙালির রক্তে আছে সৌহার্দ্য। আছে ভালোবাসা। মন্দির মসজিদ নিয়ে লড়াই নেই। ধর্মস্থান এখানে এক শান্তির জায়গা। বর্ণময় সমস্ত উৎসবে এঁকে অপরের পাশে থাকি। এখানে নেই পরশ্রীকাতরতা। ধিক্কারে উড়িয়ে দিই যত আছে কলুষিত ধর্মান্ধতা। মনকে বলি, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। এখানেই বাঙালি জাতির সমস্ত আনন্দ। বাঙালি সবাইকে গ্রহণ করে সাদরে। চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করে না, জাত গেল জাত গেল বলে।
এখানেই বাঙালির আনন্দ। পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে মারাঠি, বিহারি, ওড়িয়া,অহমিয়া নিয়ে ঝামেলা করি না। বাঙালি আশ্রয় দেয় না এরকম ধ্যান ধারণাকে, যেখানে অন্য কোনও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করব না বা সংস্কৃতি নিয়ে নাক উঁচু করব। বাঙালির চিত্ত চেতনার বৃহৎ পরিসরে রাজনীতি মানেই এক সাংস্কৃতিক অভ্যাস। এখানেই বাঙালি অন্যান্য জনগোষ্ঠীর থেকে আলাদা।
জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত খেলছ জুয়া। জাত গেল জাত গেল বলে যারা চেঁচায়, তাদের আজব কারখানায় প্রেম আর বিশ্ব মানব কি করে এক হয়। তারা তো ধ্বংসের কারিগর।
এভাবেই একদিন বাঙালি আবার জেগে উঠবে। যে বাঙালি যুগ যুগ ধরে নিজের স্বতন্ত্র সংস্কূতি আর সন্মানিত অঙ্গীকারের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংজ্ঞা নির্ণয় করেছে। আদায় করে নিয়েছে অভিপ্রেত স্বীকৃতি— বাঙালি যা আজ ভাবে, ভারত ভাববে। তাই বাঙালিকেই ভাবতে হবে। বাঙালির সর্বধর্মমত, আগামীর সুস্থ সংস্কৃতি, সুস্থ ভাবনা। যা সকল কর্ম এবং মর্মে তুফান তুলবে। বিকাশ ঘটবে স্বাধীন চিন্তাধারার।
কবিতা, সাহিত্য, ভাস্কর্য, নাটক, চলচ্চিত্র, গণমাধ্যম, সঙ্গীত নিয়ে অতীতের গৌরব বোধ নিয়ে আবারও জেগে উঠবে বাঙালির চেতনা। ঝলমলে রোদ নিয়ে নতুন সকাল আসবে। সেখানে আসতে পারে তীর্যক মন্তব্য, হতে পারে কদর্য ইঙ্গিতের মুখোমুখি। কিন্তু বাঙালি পিছু হটবে না। সমস্ত গোপনীয়তা, ষড়যন্ত্র দূরে সরিয়ে বাঙালি সংগঠিত হবে আবার।