মা দুর্গার কপালের নিচে মাকড়সার চিহ্ন

পিনাকী চৌধুরী।। শাস্ত্র মতে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন কোন বাহনে চড়ে হচ্ছে , তার ওপর বিভিন্ন শুভাশুভ ফল পাওয়া যায় বছরভর। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ক্রমশই কমছে, তবে আশঙ্কা জাগাচ্ছে তৃতীয় তরঙ্গ ! এ হেন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই ‘২১’ সালে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এইবছর দেবী দুর্গার আগমন ঘোটকে , ফল – ছত্রভঙ্গ। এবং গমন দোলায় , ফল – মড়ক বা মহামারী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শাস্ত্র মতে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন যদি এক বাহনে চড়ে হয় , তা অত্যন্ত অশুভ ! যেমনটি হয়েছিল গত ‘১৯ ‘সালে।

তবে গতবছর, মানে ২০২০ সালে দেবী দুর্গার আগমন ঘটেছিল দোলায় , ফল – মড়ক। আর দেবী গমন করেছিলেন গজে চড়ে। এই গজ বা হাতি হল উৎকৃষ্টতম বাহন , ফল – শস্য শ্যামলা বসুন্ধরা। এইবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। যদিও এখন ঘোর বর্ষা ঋতু। শরৎ কালের কাশফুল, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠে আন্দোলিত কাশফুল বা শিউলি ফুলের সুবাস আসতে দেরি আছে ! কিন্তু পুজো পুজো ভাবটা ইতিমধ্যেই কিছুটা হলেও এসেছে।

হ্যাঁ আপনাকে বলছি, পুজো শপিং থেকে প্যান্ডেল হপিং সবেতেই তো আপনিই সেরার সেরা ! তবে ভাল করে লক্ষ্য করেছেন কি দেবী দুর্গার কপালের নিচে নাকের ওপরে উর্ণনাভ বা মাকড়সার চিহ্ন রয়েছে ? কারণটা কি ? আসলে ডাকের সাজের দেবী দুর্গা প্রতিমার মুখেই এই চিহ্ন ভাল করে পরিস্ফুট হয় । মাকড়সার চিহ্নের মাধ্যমে মায়াকে চিত্রিত করা হয়। এই বিশ্ব চরাচর আসলে সবটাই মায়ার অধীন। এখানে লক্ষণীয় যে, মাকড়সা যেমন জাল বুনতে বুনতে এগিয়ে চলে , কিন্তু নিজে সেই জালে আবদ্ধ হয় না । ঠিক তেমনই দেবী দুর্গা ক্রমাগত মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেন আমাদের , কিন্তু স্বয়ং দেবী দুর্গা কিন্তু নিজে এই মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হন না ! অবাক পৃথিবী !

আগেকার দিনে বাড়িতে যখন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হত, তখন বাড়িতে হঠাৎ করেই মাকড়সার আবির্ভাব হলে , পরিবারের সদস্যরা সেই মাকড়সাকে মারতে নিষেধ করতেন , কারণ , তাঁরা মনে করতেন সেই মাকড়সার মাধ্যমেই বাড়িতে দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটেছে । যা কিনা অত্যন্ত পবিত্র ও শুভ ! আসলে দেবী দুর্গার কপালের নিচে সেই উর্ণনাভ বা মাকড়সার চিহ্ন মহামায়ার একটি প্রচ্ছন্ন রূপকে পরিস্ফুট করে । হ্যাঁ, এই বিশ্ব চরাচরে আমাদের সবাইকে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেন স্বয়ং দেবী দুর্গা, কিন্তু তিনি নিজে মায়ার উর্দ্ধে ।

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page