রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি

পরিচালনায় — সৃজিত মুখার্জী

প্ল্যাটফর্ম- হইচই

বাঙালি ওয়েব সিরিজ ঘরানায় এক সৃজিত মুখার্জী এক অন্য জিনিস তৈরি করে দিয়েছেন। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন-এর রহস্য থ্রিলার ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ দারুণ সাড়া ফেলেছিল একসময়। আর ওয়েব সিরিজ হিসেবে প্রকাশের পর দর্শকের কাছেও এটি ভীষণভাবে আলোড়ন ফেলেছে। যেহেতু থ্রিলার ওয়েব সিরিজ, তাই গল্পটি বলে রসভঙ্গ করার একটুও ইচ্ছে নেই।

এই ওয়েব সিরিজটায় দুটো পর্যায়ে গল্প বলা হয়। প্রথম কিছু এপিসোড জুড়ে রয়েছে “কে করেছে” আর পরের কিছু এপিসোডে আছে “কীভাবে হয়েছে”। পরিচালক বেশ দুটি প্যাটার্নকে এক করে একটা আলাদা রকম থ্রিলার আপনাদের উপহার দিয়েছেন সেটা আপনারা দেখলেই বুঝতে পারবেন।

হালকা আঁচে রান্না হওয়া এই রেস্তোরার খাবার, বড়োই তৃপ্তি করে খেলাম যেন। গল্পের পাতা থেকে উঠে আসা OTT র স্ক্রীনে, স্বাদ ও গন্ধে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ অতুলনীয়।

প্রতিটি রহস্যের মোড়কে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার বেশ ভালো লেগেছে।বই পড়ে নিরুপম চন্দকে ঠিক যেমন কল্পনা করেছিলাম, তার সঙ্গে মিলে গেলেন রাহুল বোস। তাঁর অভিনয়ের অনুরাগী ছিলাম‌ই। তাঁর স্বভাবসিদ্ধ মুন্সীয়ানায় আবারও মুগ্ধ করলেন।

অন্যদিকে আতর আলীর ভূমিকায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য অতুলনীয়। তাঁর অ্যাকসেন্ট শুনে একবার‌ও মনে হয়নি, তিনি রোজ এই ভাষায় কথা বলেন না। পুরো সিরিজটায়, অভিনেতা অনির্বাণের বদলে আমরা আতর আলীকেই যেন দেখলাম। একজন চরিত্রাভিনেতার কাছে অনেক বড়ো কৃতিত্ব।

মুগ্ধ করলেন অঞ্জন দত্ত। তাঁর চরিত্রটা বড়োই ইন্টারেস্টিং এবং সেটা তিনি এত সুন্দর ভাবে অভিনয় করলেন, যে তিনি কতো বড়ো মাপের একজন অভিনেতা, তা প্রতিবারের মতো আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। রমাকান্ত কামারের চরিত্রে প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, OC র চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী, ডাক্তার সেনের চরিত্রে রজত গাঙ্গুলী, শেফালীর চরিত্রে শ্রেয়া এবং ফালুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তাঁদের বেশ ভালো লাগল।

মুশকান জুবেরীর চরিত্রটি এখানে কিন্তু প্রধান চরিত্র। যা খুব‌ই অদ্ভুত, যাঁরা ব‌ইটি পড়েছেন তাঁরা সকলেই জানেন সেটি। রহস্য ও আকর্ষণ দুইই রয়েছে এই ভদ্রমহিলার মধ্যে ভরে ভরে রয়েছে। এই চরিত্রটিতে বাঁধনের চেয়ে ভালো আরো কোনো অভিনেত্রী করতে পারতেন কিনা এই বিতর্ক আসতেই পারে, তবে আমার মতে এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য একটা নতুন মুখের খুব দরকার ছিল, যার উপর অন্য কোনো ইমেজ সেভাবে তৈরী হয়নি। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে, মুশকানের চরিত্রে বাঁধনকে অসাধারণ লেগেছে। তাঁকে অনেক অভিনন্দন, এরকম একটা চরিত্রে সফলভাবে অভিনয় করা একজন অভিনেতার কাছে খুব বড়ো প্রাপ্তি।

একটা মজার বিষয় উল্লেখ করতেই হবে, সৃজিত মুখোপাধ্যায় নিজেও ক্যামিও রোল করেছেন, যেখানে এই চরিত্রটির একটি সংলাপ হল “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি”, এবং সেটা তিনি যেভাবে বললেন, সেটা শুনে কিন্তু বেশ হাসি পেয়েছে।

তবে গ্রাফিক্সের ব্যবহার নিয়ে বেশ ভয়ই লাগছিল। যেহেতু ক্লাইম্যাক্স জানা। আর এপিসোড শুরুর সময় থেকেই সতর্কীকরণ দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ অবদি উতরে গেছে সব।

সত্যি বলতে কি সৃজিত মুখার্জীর এই কাজটা বেশ দারুন লেগেছে। প্রতিটা এপিসোড এর এডিটিং বেশ মাপ মতো করা। যা গল্পের গতিকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে আর আপনার চোখকে স্ক্রীনে আটকে রাখতে সাহায্য করবে এটাই।

কাজটা বেশ অন্যরকম একটা কাজ, যারা আগে নোভেলটা পড়েছেন তাদের কাছে প্রতিটা চরিত্র ফুটে উঠবে চোখে। এখনও দেখে না থাকলে হইচই-এর পর্দায় ওয়েব সিরিজ “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি” দেখে ফেলুন।

লিখলেন- অনিল দত্ত 

 

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page