লক ডাউন কি শুধুই একান্ত অবসরে জীবন যাপন ?
পিনাকী চৌধুরী- আমাদের রাজ্যে কার্যত লক ডাউন চলেছে। উদ্যেশ্য একটাই – সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে সংক্রমণের গ্রাফ পুনরায় নিম্নমুখী করা। তাই গৃহবন্দি আপনি ,আমি , আমরা সবাই। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠটি যেন আজ মনমরা ! দামাল ছেলেরা খেলতে আসছে না। অফিসের বড়বাবুর চেয়ারে ধুলো জমেছে। দূষণমুক্ত হয়ে আকাশটা যেন আরও নীল! তবে এসবের মাঝেও আজও হয়তো কবির কল্পনায় কাব্য বা ছন্দ খেলা করে! পারিবারিক সম্পর্কগুলো যেন হঠাৎ করেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে! ছোট্ট রিনিতার সে কি আনন্দ আজ ! বাড়ির পরিচারিকা বীণা দি’র হাতের রান্না না খেয়ে বরং দু’বেলাই তার মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছে ! স্বামী স্ত্রীর সুখী দাম্পত্যে যেন আজ রঙের প্রলেপ ! ভাই বোনের সদ্ভাব বেড়েছে !
এ হেন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা তৃতীয় পক্ষের তরফ থেকে কলকাতার দু’জন বিশিষ্ট মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম , প্রশ্ন ছিল – গতবছর লক ডাউন আপনাকে কি শিক্ষা দিয়েছে ? এবং এইবছরে লক ডাউন চলাকালীন সময়ে আপনারা গৃহবন্দি হয়ে কি ভাবে সময় অতিবাহিত করছেন? প্রথমে আসি বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী প্রবাদপ্রতিম রাজেশ্বর ভট্টাচার্যের কথায়। তিনি লন্ডনে ওয়ার্ক শপ করে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস পরে সম্প্রতি কলকাতায় নিজ গৃহে ফিরেছেন। বর্ষীয়ান গায়ক রাজেশ্বর ভট্টাচার্য এই প্রতিবেদককে জানালেন, ” আমি প্রতিদিনই ভোরে উঠে আমাদের মুদিয়ালীর বাড়ির সামনে ফাঁকায় ফাঁকায় প্রাতঃভ্রমণ করি । এছাড়াও নিজের গানের রেওয়াজ যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনই আমার অসংখ্য ছাত্রছাত্রীদের ভার্চুয়ালি গানের ক্লাস নিই ! সময়টা এভাবেই বয়ে চলেছে আমাদের। আর গতবছরের লক ডাউন আমাদের এক চরম শিক্ষা দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত করে তুলেছিল !”
বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী প্রবাদপ্রতিম রাজেশ্বর ভট্টাচার্য
বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক তমাল দাশগুপ্ত
এবারে আসি বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক তমাল দাশগুপ্তের কথায় , যিনি কিনা কিছুদিন আগে ‘WMT- 9615 ‘ এবং সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাহিনি অবলম্বনে ‘ ভাল মেয়ে খারাপ মেয়ে ‘ এর মতো দু’টি অসাধারণ সিনেমা আমাদের উপহার দিয়েছেন। কথায় কথায় তমাল দাশগুপ্ত বললেন ” বিগত ‘২০ সালের লক ডাউন চলাকালীন সময়ে প্রথমে বুঝতে পারিনি যে, ক্রমে ক্রমে জীবন একটা চরম সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবুও তারই মধ্যে ‘ঘাতিনী’ নামের একটি সিনেমার চিত্রনাট্যের কাজ শেষ করি। এছাড়াও গতবছর আমি আমার পিতাকে হারিয়ে বিপর্যয়ে সম্মুখীন হই ! আর এইবছর লক ডাউন চলাকালীন সময়ে আমার আগামী ছবির প্রি প্রোডাকশনের কাজ ভার্চুয়ালি করছি। তবে এটুকু বলতে পারি, সামনে কোনো আশার আলো দেখছি না, এক ভয়ানক উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা সবাই ।”