লাইব্রেরি, তাও আবার উটের পিঠে!
তৃতীয়পক্ষ ওয়েব- ছোটদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার জন্য ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি আগে দেখেছি আমরা। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এরকম কিছু কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু তাঁর মধ্যেও অনেকে ভাবেন স্কুলের পড়া বাদ দিয়ে গল্পের বই পড়ে ক্ষতি হয় বাচ্চাদের। কিন্তু এমনটা আদৌ নয়।
গবেষণায় প্রমাণিত ডিমেনশিয়া এবং অ্যালজাইমার নামে এই দুটি রোগের হাত থেকে বাঁচতে বই পড়া অত্যন্ত জরুরি। মস্তিষ্ককে সচল রাখে বই পাঠ।
তবে আজ বলছি এক অন্য রকম লাইব্রেরির কথা। হ্যাঁ, এটি ভ্রাম্যমাণ বটে। তবে দু চাকা বা চার চাকার নয়। উঁচু নিচু বালিয়ারির উপর দিয়ে সে হেঁটে চলেছে। পিঠে তাঁর সওয়ারি নেই। তার পিঠের দুই দিকে ঝুলে রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ বই। কোনোটা সপ্তম শ্রেণির, কোনোটা অষ্টম, কোনোটা আবার নবম বা দশম। মরুপথের কথা জেনে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন চার পায়ের প্রাণীটি উট। আর সেই উটের নাম রোশন। যার কাজ ঘরে ঘরে ‘রোশনাই’ পৌঁছে দেওয়া। প্রত্যন্ত গ্রামের আনাচে-কানাচে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়াই তার কাজ।
পাকিস্তানের বালুচিস্তানের একটি প্রত্যন্ত জেলা কেজ। এই জেলার বেশির ভাগ মানুষই গরিব। শিক্ষার আলোও গ্রামগুলোর প্রতিটি ঘরে ঢুকতে পারেনি। তার উপর অতিমারিতে একেবারেই ভেঙে পড়েছে এই জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা। সেই ২০২০ সাল থেকেই জেলার সমস্ত স্কুল বন্ধ। স্কুল কবে চালু হবে, ফের কবে দল বেঁধে গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়তে যাবে, তার উত্তর কারও কাছে নেই। এত বড়ো গুরুদায়িত্ব নিজের পিঠে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে রোশন।
রহিমা এই জেলারই একটি স্কুলের প্রধান। অতিমারির কারণে তার নিজের স্কুলও বহু দিন থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে। রহিমা এবং তার বোন মিলে এর উপায় ভাবতে শুরু করেন। তাদের মাথায় এক অভিনব পরিকল্পনা আসে। তারা এমন কিছু উপায় আনতে চেয়েছিলেন যাতে বাড়িতে বসেই পড়াশোনা করা যাবে। না, অনলাইন ক্লাসের সুযোগ ওই সমস্ত পড়ুয়াদের কাছে ছিল না। তাদের না রয়েছে মোবাইল ফোন এবং না সেখানে নেটওয়ার্ক পরিষেবা ভাল। তাই তাদের কথা ভেবে চলন্ত লাইব্রেরি চালু করলেন তারা। চলন্ত, কারণ এখানে নিজেকে লাইব্রেরিতে পৌঁছতে হয় না। বরং লাইব্রেরি ‘চার পায়ে’ হেঁটে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায়। ঠিকই বুঝেছেন। রোশনই আসলে সেই চলন্ত লাইব্রেরি। পিঠে বই নিয়ে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যায় সে।
প্রতি গ্রামে দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করে সে। দু’ঘণ্টা পর বইয়ের সম্ভার নিয়ে ফের রওনা দেয় অন্য কোনো গ্রামে। পরের দিন কী কী বই আনতে হবে তার তালিকাও বানিয়ে নেয়।
‘ক্যামেল লাইব্রেরি প্রোজেক্ট’ নাম দিয়েছেন এর। রহিমাদের এই অভিনব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে এসেছে বালুচের আরও দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা— ‘ফিমেল এডুকেশন ট্রাস্ট’ এবং ‘আলিফ লায়লা বুক বাস সোসাইটি’।