সাজঘরে চিরুনি
মনসামঙ্গল কাব্যে লেখা আছে-‘সুবর্ণ চিরুনি লয়া/ নারায়ণ তৈল দিয়া/ বন্ধানে বান্ধিল কেশভার।’ অর্থাৎ হাতে চিরুণি নিয়ে মনসা নিজেকে মোহিনী বেশে সাজিয়ে তুলছেন। প্রায় ষোলো শতকে কেতকাদাস এই কাব্যগ্রন্থ লেখেন। যা আজও জীবনের সঙ্গে জরুরি। যা আমাদের পার্সে, পকেটে, ব্যাগে, মেকআপ বক্সের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে যত সময় এগিয়েছে চিরুনি বদলেছে রূপ। ফ্যাশন-ইন এ হয়ে উঠেছিল ট্রেন্ড।
এই চিরুনির নামে কতই না রঙ্গ। কেউ একে বলে কাঙ্গি, কেউ বলে কাঙ্গা তো কারো কাছে কাঁকুই, পানহিয়া। আর চিরুনি তৈরির কথা যদি বলতে হয়, এইসব চিরুনি তৈরি হত হাড়, শিং, কচ্ছপের খোল, বাঁশ, হাতির দাঁত এইসব দিয়ে। আরও একটু বলতে গেলে সোনা, রূপোর মতো দামী ধাতু দিয়েও তৈরি হতো এই চিরুনি। সেইসময় অভিজাত সমাজে দামী গয়না হয়ে উঠেছিল চিরুনি। কাছিমের খোল দিয়ে তৈরি করা সেইসব চিরুনির মধ্যে সোনা রূপোর কাজ ছিল চোখ ধাঁধানো। আর এইসব চিরুনির প্রচলন ছিল উনিশ শতকে। ‘রতন কাঁকই’ ছিল অন্যতম। যা দিয়ে আটকে দেওয়া হত চুল। কোনও অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে চিরুনি ছিল লাজবাব। তবে হ্যাঁ একটা জিনিস, এইসব চিরুনি দোকানে পাওয়া যেত না। বাড়ি বাড়ি আসত ফেরিওয়ালাদের দল। তাঁদের কাছ থেকেই দরদাম করে কিনত বাড়ির মেয়ে বউরা।
প্রাচীন যুগে পাথর কেটে কেটে বানানো হতো চিরুনি। এর থেকে প্রমাণিত হয়, চুলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সচেতনতার কথা। দৈনন্দিন জীবনেও চিরুনি ছাড়া একদম চলে কি আমাদের! তবে শুধু যে পাথর দিয়েই চিরুনি বানানো হতো এমনটা নয়। হাড় দিয়েও তৈরি হত সুদৃশ্য সেইসব চিরুনি। চিরুনির ইতিহাসে সুইডেন দেশটির নাম জড়িয়ে আছে। প্রত্নতত্ববিদদের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ শতকে সুইডেনে চিরুনি তৈরি হয়েছিল। যা কিনা সবথেকে প্রাচীন। মধ্যযুগে চিরুনি তৈরিতে আসে বিপ্লব। এই সময় হরিণ ও অন্যান্য পশুর শিং দিয়ে তৈরি হতো চিরুনি। এরপর আসে আমাদের এখনকার ব্যবহৃত চিরুনির কথা। উনিশ শতকে ইসিয়াহ ও জন হায়াত নামে দু’ভাই কৃত্রিম ভাবে চিরুনি বানানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যা আমরা এখন ব্যবহার করি।
লেখক- সৌমি রায়