‘সাতকাহন’ এক লড়াই-এর শুরু

বিন্দু বিন্দু থেকেই সিন্ধু তৈরি হয়। আর এভাবেই ছোট থেকে শুরুটা হয় স্বপ্নের। আমরা প্রত্যেকেই এরকম লড়াইয়ে শামিল। আজকের কথায় ‘সাতকাহন’এর কো ফাউন্ডার এবং স্বপ্নচারী বর্ষা বসু। শোনালেন তার লড়াই-এর কথা।

কেমন করে শুরু হল?

শুরু হওয়াটা ঠিক সে রকমই ছিল, যেমন করে সমস্ত কিছু শুরু হয় আর কি! প্রথমত একটা প্রাথমিক ইচ্ছে থেকে যাত্রা শুরু তারপর ইচ্ছে পূরণ হতে শুরু করা। এরপর স্বপ্নের ভূত চাপলো মাথায়। সেই শুরু।

কর্মসূত্রে নিজের ব্যবসা কিংবা ছোটো স্টার্ট আপ নিয়ে এগোবো এমন ভাবনাটা শুরুতেই ছিল না। পড়াশুনা এবং জীবিকাটা ছিল বর্তমান পরিস্থিতির থেকে একদমই ১৮০ ডিগ্রি উলটো দিকে। Tourism management নিয়ে পড়ে দীর্ঘ কিছু বছর কর্পোরেট লাইফ/ চাকরি করে নাকাল হয়ে প্যাশন ফলো করার উদ্যোগ নিয়ে শুরু করা ফিল্ম স্টাডির এবং শেষমেশ দীর্ঘ একাকী লড়াই এর পর রূপকলা কেন্দ্রে সম্পাদনা এবং পড়াশুনা ও পাশ করা।

তারপর কলকাতার বিনোদন জগতের দৈনন্দিন কিছু চ্যানেল/ মেগা/ সিরিয়াল/ সিনেমাতে অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর/ কো এডিটর/ এডিটর হিসেবে কাজ করা।

বর্তমানেও সরাসরি ভাবে কোনও সংস্থার সঙ্গে জড়িত না হলেও প্রথম ভালোবাসা এডিটিং-এর কাজে যুগ্ম ভাবেই যুক্ত হয়ে আছি।

জীবনের এই ওঠা নামার সময়তেই আরও প্রবলভাবে কাজ করে সাবকনসাস মাইন্ড। আর বেশি করে শুরু হয় স্ব-উদ্যোগী হয়ে ওঠার একটা নাছোড় বান্দা মনোভাব।

যা হয় একটা স্টেডি জব ছেড়ে মাঝ বয়েসী মানুষের পক্ষে একদম সম্পূর্ণ নতুন, অচেনা একটা ফিল্ড-এ চলে যাওয়ার ভয় থাকে। বাড়ির দায়িত্ব নিতে না হলেও নিজের প্রতি দায় দায়িত্বটা তো ছিলই। ব্যবসার পূর্ব অভিজ্ঞতা বলতে কলেজ-এ  এক্সপেরিমেন্ট বিজনেস ভেঞ্চার। যা প্রচণ্ডভাবে সাকসেসফুল হয়। হয়ত সেটাই সাহস জুগিয়ে ছিল।

সাতকাহন নিয়ে কাজ শুরু হয়… অত্যন্ত কি কেন’র চিন্তা ভাবনা শুরু হয় আজ থেকে ২০১৯ এর মাঝামাঝি সময় থেকে। নানা ব্যস্ততার মধ্যে এসে কখনই সেটার উপর জোর দেওয়া হয়নি, মাঝে কিছু মাসের জন্য তোড়জোড় শুরু হলেও পড়ে চাকরীর ব্যস্ততার জন্য সেটা অনেকটাই পিছিয়ে যায়।

হয়ত তখন থেকে শুরু হলে কলকাতার এটাই প্রথম বাংলা মেড Personal merchandise Band হয়ে যেত। সে যাই হোক, ধাক্কা খেয়ে শুরু হলেও যাকে kick start বলে সাতকাহনের সঙ্গেও তাই হলো। ২০২০ তে করোনা ভাইরাসের জন্য গ্লোবাল প্যানডেমিক। শহর জুড়ে লক ডাউন শুরু হলো। সেই সময়ই সাতকাহন নিয়ে চিন্তা করার কাজ  এবং প্ল্যান অনেকটা এগিয়ে যায়।

সব ঠিক হয়ে যখন জীবন চেনা ছন্দে ফিরতে লক ডাউন থামলো। তখন বাকি অনেকের মতো আমার সঙ্গেও একটা দুর্ঘটনা ঘটলো। অনেকের মতো এই লকডাউন এ চাকরি চলে গেল। তাই আর পিছন ফিরে তাকানোর কিছু ছিলো না। শুরু করলাম পুরো দস্তুরভাবে। অবশ্য একটা কথা না বলেই পারছি এই সিদ্ধান্তে আমার পরিবারকে পাশে পেয়েছি, কিছু প্রিয় মানুষ, বন্ধুরা সব সময় নানা রকম ভাবে আমাকে উৎসাহ এবং সাহায্য করে চলেছে, এই পথ চলার শুরুতে এই হেল্প গুলো না পেলে আমার জন্য সব ফেলে ঝাপানোটা একটুও সহজ হত না।

কেন করছি?

কেন করছি উত্তরটা খুব সহজ আবার হয়ত অতটাও সহজ নয় গুছিয়ে বলাটা আমার পক্ষে। সম্পাদনার কাজটা মূলত প্যাশন এর জায়গা থেকে করা কিন্তু সারভাইভটাও ততটাই জরুরি। এখানে স্বপ্নের কাজ পাওয়াটা একটু মুশকিল। অত্যন্ত আমার অভিজ্ঞতাতেও তাই মনে হয়েছে। যে ইচ্ছে এবং উদ্দেশ্য নিয়ে ফিল্ম স্কুল থেকে পড়াশুনো করা, কাজের জগতে তার সঙ্গে কোনও মিল না পাওয়াটা আমার জন্য একটু খারাপ লাগার ছিলই। তার সঙ্গে এটা অ্যাড করতেই হবে কলকাতাতে তো যে কোনও ক্রিয়েটিভ জব এর ভ্যালুয়েশন খুবই অল্প পারিশ্রমিকের। শিল্পীর সম্মানের সঠিক মান পাওয়া যায় না। তাই ভাবলাম অন্যের দাসত্ব না করে, নিজেই বস হবো।

তার সঙ্গে সঙ্গে এটা বলি বাংলা কমিকসের দারুণ ফ্যান আমি, বরাবর মনে হতো যদি বাংলার নিজের মতো করে বাংলা পপ আর্ট ভাষা নিয়ে কিছু করা যায় যেখানে একটা সেতু তৈরি হবে লোকাল এবং ভিনটেজ বাংলার মধ্যে। মূলত বাংলাদেশে এই ধরণের কাজ খুব জনপ্রিয় এবং শৈল্পিক। যা যথেষ্ট গ্রহণ যোগ্য। এই mass আর class টাকে জুড়ে দেওয়াই আমার লক্ষ্য।

 

ভবিষ্যতের প্ল্যান…

প্ল্যান তো অনেকই আছে সাতকাহন সবে হামাগুড়ি দিচ্ছে একে নিজের পায়ে দাঁড় করানো হবে। উদ্দেশ্য একটাই একজন সাধারণ ক্রেতা হিসাবে যে যে সুবিধাগুলোকে মিস বলে মনে হয় সেগুলোর উপর বেশি করে জোর দেওয়া। উদাহরণ স্বরূপ এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে কলকাতার সমস্ত অনলাইন শপ কিংবা যারা বাংলা টিজ নিয়ে কাজ করছে তাদের সকলের থেকে সাতকাহনের প্রতিটি জিনিসের বিক্রির দাম কম।

এটা করার একটাই লক্ষ্য বাজারে গুণমান এক রেখে ভালো জিনিস যাতে সবার হাতে পৌঁছয়,  মূলত অল্পবয়েসী যাদের অনেকেই অভিভাবকদের হাত খরচে চলে। তারা তাদের পকেটের দিকে না তাকিয়ে ইচ্ছে পূরণটা যাতে করতে পারে। সেখান থেকে এই ভাবনাটা। আমার মনে হয় ব্র্যান্ড নামী কিংবা অনামীর থেকেও , কোথাও গিয়ে আজও মানুষের কাছে জিনিসের গুণগত মান এবং ভালো লাগার মতো বিষয়গুলো ভীষণ ভাবে কাজ করে যায়। তাই পকেট ফ্রেন্ডলি দামে সুন্দর এবং একটা রুচী সম্মত ফ্যাশনেবল পারসোনাল আউটলুক দেওয়াটাই উদ্দেশ্য। সাতকাহনের যেটুকু শুরুয়াত তাতে অর্থনৈতিক ভাবে কোনও ইনভেস্টার পাওয়া যায়নি, ছোটো স্টার্ট আপ বলে তেমনভাবে এগিয়ে যাওয়াও হয়নি। সাতকাহনের সবটাই  নিজ উদ্দেশ্যেই করা। ফান্ড হলে আরও বড় কলেবরে এগোনো যেতে পারে। সাতকাহনের সদস্য সংখ্যা নেহাৎ অল্প যা যা আছে তারা আমার পরিবার এবং কিছু সহৃদয় বন্ধুরা তাদের একান্ত উদ্যোগে সাতকাহন ‘সাতকাহন’ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে www.saatkahonshop.com বলে নিজেদের ওয়েবসাইট করতে পেরেছি আমরা তবে কাজ বাকি গোটা ভারতবর্ষে বাংলা ব্র্যান্ড হিসাবে একটা নিজস্ব নাম চরিত্র রূপ পাওয়া কিছু অনলাইন শপিং সাইট-এ যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যত-এ অনলাইন ছাড়াও অফলাইন স্টোর করতে চাই। স্বপ্ন দেখছি বাকি সবার মতোই। চেষ্টা চলবে। আসলে এই চেষ্টা করাটাই হলো আমাদের সবার আসল লক্ষ্য। বাকিটা ভবিষ্যৎ বলবে।

FOLLOW US ON

@instragram :saatkahonofficial

@facebook :@SaatKahonBoutique

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page