২৭০ বছরের গৌরব ক্ষীরপাইয়ের ‘বাবরসা’ আজও একইরকম
নীলকণ্ঠ অধিকারী
একেই বোধহয় বলে রসে বশে বাঙালি। বাঙালির শেষ পাতে মিষ্টি না হলেই যে নয়। আর এই বাংলা আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কতশত মিষ্টি। তারমধ্যে কতগুলো যে হারিয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। কিছু হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। যেমন বাবরসার কথাই ধরা যাক। এই মিষ্টি পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রসিদ্ধ মিষ্টি হিসেবে একসময় বেশ নাম করেছিল। এখনও আছে, তবে গুটি কয়েক মানুষই হয়ত এই মিষ্টির নাম জানেন। এর একমাত্র কারণ অবশ্যই প্রচারের অভাব।
অনেকের মতে এই মিষ্টির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সম্রাট বাবরের নাম। বাংলা থেকে উপহার পাওয়া এই মিষ্টান্ন পাওয়ার পর খুব তারিফ করেছিলেন সম্রাট। তারপর থেকেই এর নাম হয়ে গেল বাবরসা।
তবে এখানে আবার আরও এক কথা প্রচলিত আছে। সময়টা আঠারো শতকের মাঝামাঝি। বাংলাজুড়ে আক্রমণ করছে বর্গিরা। আর মারাঠাদের আক্রমণে বাসিন্দারা ক্ষীরপাই ছাড়তে আরম্ভ করছেন। এই সময় তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান এডওয়ার্ড বাবরস নামে এক ইংরেজ সিপাহী। তিনিই হানাদারদের আক্রমণ রুখে দেন। ইংরেজ সাহেবের এই বীরত্বে খুশি হয়ে এক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী উপহার দেন বাবরসা কে। তারপর থেকেই সেই মিষ্টির নাম হয়ে যায় বাবরসা।
২৭০ বছর ধরে সেই মিষ্টিই মোহিত করে রেখেছে ক্ষীরপাইবাসীকে। নামের সঙ্গে সঙ্গে মেদিনীপুরের ক্ষীরপাইয়ের ঐতিহ্য বাবরসা আজও সবার কাছে অমৃতের মতো। এই মিষ্টি তৈরিতে খরচও হয় অনেক বেশি। যার ফলে, বাবরসার দামও অনেক। গ্রামে এত দামি মিষ্টি সহজে কেউ কিনতে চায় না। খরচ কমাতে মধুর জায়গা করে নিচ্ছে চিনির সিরা, ঘিয়ের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে ডালডা। এতে নিজের স্বাদও হারাতে বসেছে এই ঐতিহ্যশালী মিষ্টি।
ক্ষীরপাইয়ের অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন বাবরসা বানানো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এখন আকৃষ্ট হচ্ছে না সেভাবে। আর এভাবেই, স্রেফ অবহেলায় মুছে যাওয়ার উপক্রম বাবরসার। ক্ষীরপাইয়ের মিষ্টান্ন বিক্রেতারা চাইছেন, বাবরসা প্রচারের আলোয় আসুক। ফিরে আসুক তার ইতিহাস। বেঁচে থাকুক ক্ষীরপাইয়ের গৌরব বাবরসা।
তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া , অন্তর্জাল