কেজ্ঞাকুড়ার জাম্ব জিলিপি।। মানস দত্ত

তৃতীয়পক্ষ জমাটি রান্না- বাকুঁড়ায় গেলেই অসীম এর সাথে এদিক ওদিক ঘুড়ে বেড়াই। এরকমই বিশ্বকর্মা পুজোর সময় আমি আর অসীম বেড়োবো বলে ঠিক করছি। অসীম বললো সকালে আর বেড়োতে হবেনা বিকালে তোমাকে একবার আমার বাড়ি নিয়ে যাবো। আচ্ছা তাহলে তাই হবে , আমারও একটু কাজ ছিলো সকালে তাই ঠিক হলো বিকালেই বেড়োবো ।

অসীম বিকালে সঠিক সময়ে এসে পৌছলো আমিও রেডি হয়েই ছিলাম অসীম এর গাড়িতে চেপে বেড়িয়ে পড়লাম ।

আঁকা বাঁকা পিচের রাস্তা, সবুজ এর বুক চিরে আমাদের এগিয়ে নিয়ে চললো ।দুধারে শাল , পলাশ, মহুয়ার , কত নাম না জানা বৃক্ষরাশিকে পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে চললাম । এসে পৌছলাম তিন রাস্তার মোড়ে । অনেক লোকের সমাগম একেবারে উৎসবের মেজাজে , ছেলে মেয়ে সেজেগুজে বেড়িয়েছে । চাড়িদিকে নানা খাবারের দোকান । মিষ্টির দোকানে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে । অসীম এরকমই একটি দোকানে এনে দাঁড়করালো ।

ভোজন রসিক হিসাবে বাঙালীর সুখ্যাতি কারুর অজানা নয় । মিষ্টির সঙ্গে আমাদের দুজনের গভীর এবং নীবির যোগাযোগ । দোকানে ঢুকেই অবাক হলাম ।

কড়াইতে তখন জিলিপি ভাঁজা চলছে । জিলিপি একটি বিদেশি শব্দ । ফরাসি ‘জলব’ থেকে হিন্দি ‘জলেবি’ শব্দের সৃষ্টি আর হিন্দি ‘জলেবি’ থেকে বাঙলা জিলাপি বা জিলিপি শব্দের উদ্ভব । মহন্মদ বিন হাসান আল-বোগদাদীর লিখিত ১৩০০ শতাব্দীর রান্নার বইতে জিলিপির সর্বাধিক পুরনো লিখিত বর্ননা পাওয়া যায় । যদিও মিশরের ইহুদিরা এর আগেই খাবার টি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলো । জিলিপি তৈরী করার জন্য যে সব উপাদানের পয়োজন হয় তার সাথে মিল রয়েছে ১৬০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে সংস্কৃত ভাষায় রচিত গ্রন্থ গুন্যগুনবধিনী তে ।

কেজ্ঞাকুড়ার জিলিপি দেখলে সত্যি অবাক হতে হয় । এক একটি জিলিপি এক কেজি থেকে শুরু করে দশ কেজি পর্যন্ত হয় । একে বারে সাইকেলের চাকার মতো । শোনাযায় বেশ কয়েক বছর আগে কেজ্ঞাকুড়ার পাশে হানুলিয়া নামে এক ছোট্টো গ্রামে মদন দত্ত নামে একজন তিনি কেজি ওজনের জিলিপি বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো । তারপর থেকেই এখন কেজ্ঞাকুড়ার সব মিষ্টির দোকানেই এই জিলিপি পাওয়া যায় । এই জিলিপি প্রথম বিক্রি হয় দুখুঁ ভজ্ঞন দত্তের মিষ্টির দোকানে । যা পরবর্তী সময়ে দত্ত মিষ্টান্ন ভান্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে এই দোকানের মালিক অশোক দত্ত । এই জিলিপি যেমন আকারে বড় তেমনি সুস্বাদু । কে কত বড় জিলিপি করতে পারবে এই নিয়ে কারিগরদের মধ্যে রেশা রেশী চলে রীতিমত।

প্রতি বছর ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে রাঢ় বঙ্গে ভাদু পুজা হয় । ঐ দিনটিতে আবার বিশ্বকর্মা পুজো হয় আর এই পুজোকে কেন্দ্র করেই কেজ্ঞাকুড়ায় বসে জিলিপির মেলা । এখানে না লে জানতাম না এই বাংলায় কত বৈচিত্র কত শিল্প আছে লুকিয়ে ।

বাঁশের গোল চাঁচ আর শুকনো শালপাতা আর খবরের কাগজ দিয়ে বিশেষ উপায়ে পেকেটিংও অভিনব । জাম্ব জিলিপি দেখতে অবশ্যই ছুটে আসতে হবে কেজ্ঞাকুড়া। বিকেল তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অসীমের উপহার আমাকে আপ্লুত করেছে।

পরেরদিন শরতের ঝলমলে সকাল কাশের দোলা আর শিউলির সুভাষে ভরা সকাল আর অসীমের ভালোবাসা ভরা উপহার নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বাড়ির সবাই এতবড় জিলিপি দেখে অবাক। সবাইকে বললাম একবার সবাই মিলে কেজ্ঞাকুড়া যাবো জিলিপি খেতে । তবে হ্যাঁ  অবশ্যই বিশ্বকর্মা পুজোর সময়।

 

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page