অনু নাটিকা।। কাঁকড়া ও থার্মোমিটার।। অশোক বোস

স্থানঃমধ্যবিত্ত কোনো বাবার বসার ঘর।
সময়ঃবিকেল
চরিত্রঃ মধ্যবিত্ত বাবা, অভাবী মা ও চাকরি সন্ধানী বেকার গ্র্যাজুয়েট মেয়ে।
(বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। মেয়ে একটা থার্মোমিটার নিয়ে বাবার জ্বর মাপছে। মা আশেপাশেই রয়েছে)।
মেয়ে।। ( থার্মোমিটার দেখতে দেখতে) একশ তিন!!!
মা ।। বারণ শুনলে তো? বৃষ্টি ভিজে উনি কাঁকড়া কিনতে বেরিয়ে ছিলেন।
মেয়ে।। কাঁকড়া!!
মা ।। আমার দিকে ড্যাবা ড্যাবা চোখে তাকিও না মা আমার। তোমার পূজনীয় বাবাকে জিজ্ঞেস করো–
( বাবা একটু কাশে। কিছু বলতে যায়)
মা।। ইস কেমন ঠান্ডাটা বসিয়েছে!! ঠন ঠন করে শব্দ হচ্ছে বুকে! পাক্কা নিউমোনিয়া।
বাবা।। বাজে না বকে, কাঁকড়াটা কষা কষা করে রাঁধো তো গিয়ে। রাতে জমিয়ে খাবো। সব ওকে হয়ে যাবে।
মা ।। শুনলি? কাঁকড়া যেন প্যারাসিটামল। জ্বলে গেলাম সারাটাজীবন..
বাবা।। প্রেসক্রিপশন দেবো? বুক জ্বললে অ্যান্টাসিড, পেট জ্বললে কার্বোজাইম আর সারা গা জ্বলা মানে চুলকানি সিওর। তাহলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিম।
( মা কটমট করে তাকিয়ে রেগে বেরিয়ে যায়)
বাবা।। (মায়ের উদ্দেশ্য) ঠনঠন করে শব্দ শুনছেন উনি আমার বুকে। কাঁসর বাজছে যেনো। সবটাতে বাড়াবাড়ি রকম নাটকীয়তা।
মেয়ে।। বাবা, নাটকটা তুমি করছো। মা কিন্তু ঠিকই বলছে।
বাবা।। শোন, ঠিক, বেঠিক সব রিলেটিভ। আপেক্ষিক। এই যে তুই নিজেও তো কাকভেজা হয়ে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে এলি, তার বেলা?
মেয়ে।। কাঁকড়া আর চাকরি এক!!
বাবা।। চাকরি পেলি?
মেয়ে।। উহু।
বাবা।। আমি কিন্তু তিন তিনটে বাজার চষে কাঁকড়া ঠিক এনেছি। সাকসেস রেট কার বেশি?উ?
মেয়ে।। বাবা!!
বাবা।। মিড উইকেটে হিট করলাম? ( হেসে) মন খারাপ করিস না, যা হয় ভালোর জন্য।
মেয়ে।। কি?
বাবা।। আরে ফার্স্ট ইনিংসে বোল্ড হয়ে কত ব্যাটসম্যান সেকেন্ড ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। নাম বলব? আমি তো হ্যাপি। ভাগ্যিস চাকরিটা হোলো না।
মেয়ে।। মানে?
বাবা।। হুম তো। এটা হলে হয়ত এতেই মজে থাকতিস। আরো ভালো চাকরির অফারটা গঙ্গায় ডুবে সুইসাইড করতে বাধ্য হোতো। সেটা তো টুমরো পাবি হয়ত.. বা নেক্সট বাট টুমরো..
মেয়ে।। ( কাঁদকাঁদ) সান্তনা দিচ্ছো?
বাবা।।ধুর। সান্তনা দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়। তুই কি ভেঙে পড়ার মত মেয়ে আমার? সেই কোন ছোটো থেকে কেমন কড়মড় কাঁকড়ার দাড়া চিবিয়ে টুকরো টুকরো করতে ভালবাসিস তুই…
মেয়ে।। আবার কাঁকড়া!!উফ।
বাবা।। ওরে পাগলি,আজকের দিনের শেষে ওটুকুই যে সাফল্য মা আমাদের। সেটা এনজয় করতে হবে তো। কাল তো আবার ময়দানে নামবই। ( আচমকা) দেখেছো কান্ড কাঁকড়া আনলুম বেগুনই তো কিনি নি।ইস.. বেগুন ছাড়া জমবে!! নাহ.. ছাতাটা দে তো মা–
( বাবা ধরফর করে উঠে বসতে যায়)
মেয়ে।। তোমার টেম্পারেচর একশ তিন!! তুমি এখন ছাতা মাথায় বেগুন কিনতে বেরোবে!!
বাবা।। কি মুশকিল রেইনকোটতো নেই।
মেয়ে।। বাবা–
বাবা।। ওকে ওকে। ( চেঁচিয়ে) শোনো গো আজ বেগুন ছাড়াই কোরো–
( মা ঢোকে)
মা।। ভাবনা নেই বেগুন দিয়েই হচ্ছে। তোমার দুলালি সাদাবেগুন কিনে এনেছে বাড়ি ফেরার সময়। এসেই ফরমান জারি, বাবাকে গোল গোল চাকা চাকা করে ভেজে দিও গরম গরম।
(বাবা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ নাচায়।)
বাবা।। তোর বেগুন, আমার কাঁকড়া।
(মেয়ে হেসে ফেলে।)
মা।। আদিখ্যেতা দেখে শরীর তেতে যায় আমার।
বাবা।। তাহলে থার্মোমিটারটা তুমি রেখো। তাপ মেপো। নর্মাল হলে ফেরত দিও।
( মা রাগতে গিয়ে হেসে ফেলে, মেয়েও হাসে, সঙ্গে বাবাও যোগ দেয়।)
।।যবনিকা।।
মরাল অফ দা স্টোরি, সমস্যা টা বিষয় নয়। সমস্যা কে ওয়েলকাম করে হাসতে পারার নামই লড়াই।
শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page