Bab’Aziz- এক স্বপ্নময় কাহিনী
ঋতব্রত ঘোষ
কাল দেখলাম নাসের খেমিরের বাবা-আজিজ্। মরুভূমি নিয়ে ওনার ত্রিলজির শেষ ফিল্মটা দেখা হল। গোলশিফতেহ্-র ছোটছোট একটা দুটো স্বল্পকালীন উপস্থিতি, স্বপ্নময় চোখ দুটি – তাতেই অনন্ত হয়ে গেল সময়।
একটি ছোট্ট মেয়ে ইশতার (মরিয়ম হামিদ, বড় হয়ে যাবার পরে যিনি এক ফরিস্তা থেকে কিছু কম নন), তার অন্ধ দরবেশ দাদুর সাথে এক অজানা যাত্রায় যেতে যেতে শুনছিল এক রাজপুত্রের কাহিনী। ওই রাজপুত্রটি মৃগয়ায় এসে মরুভূমির মধ্যে এক অদৃশ্য জলাশয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে কোন সে করুণ রসে বিভোর হয়ে আজও নাকি ওভাবেই বসে আছে, বলছিলেন সেই অন্ধ দরবেশ তাঁর নাতনিকে। ওই জলাশয়ের ধারে রাজপুত্রের আস্তানাই নাকি তাদের গন্তব্য, যেখানে প্রতি ৩০ বছর পরে সুফি দরবেশরা একত্রিত হন, জানিয়েছিলেন অন্ধ দাদু, ছোট্ট মেয়ে ইশতার দিশেহারা হয়ে দাদুকে জিগ্যেস করে, বাবা-আজিজ্ কেমন করে তুমি চিনে যেতে পারবে সেখানে? বাবা বলেন, তোমার প্রেরণাই তোমাকে সেখানে পৌঁছে দেবে। অন্ধ দরবেশ পথ চলে, মরুভূমির নাড়ি-নক্ষত্র তাঁর নখদর্পণে। তার জন্য চোখের দৃষ্টির প্রয়োজন নেই দরবেশের। পথিমধ্যে, ভয়ঙ্কর মরুঝড়ে পড়ে তারা। কাহিনী এগিয়ে চলে অতীত আর বর্তমানকে একসাথে নিয়ে, অনেকটা থিও এঞ্জেলোপৌলুষের ছবির মতো। কোথায় এসে অতীত মিলমিশ হয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে, কাহিনী সূত্রে জড়ো হয় অন্য অনেক কাহিনীবৃন্ত।
হাজির হয় এক বিভ্রান্ত কবি যে নাকি নূর-কে খুঁজছে যেদিন থেকে নূর তার পাসপোর্ট-ভিসা, পহচান, অস্তিত্ব সবকিছু সমেট নিয়ে হারিয়ে গেছে। সুফি ইনায়েত খানের প্রার্থনাগীত ভেসে আসে কোনো এক সময় – প্রভু, প্রিয় আমার, দাও সে গভীর চেতনা অনেকটা যার মিলিয়ে থাকবে স্বপ্নে, ভোর হবে। সীমিত করো আমার যত আস্ফালন, অহঙ্কার আর যাতে স্তব্ধতার গান শুনতে পাই অবারিত। যাবার রাস্তা হোক সঙ্কীর্ণ, দাও সে উদার দৃষ্টিকোণ অন্তিম শ্বাস হোক শান্তিময়। আমেন।
ছবিতে একটা ঊর্দু বন্দীশ্, আহা কি অনির্বচনীয়, ব্যবহার হয়েছে। গেয়েছেন নুসরত ফতেহ্ আলী – খোদাতালাহর্ দরবেশ এক। আর গেয়েছেন শর্মিলা রায়। সহশিল্পী হয়ে গলা মিলিয়েছেন দুটি গানে – একটি, Zikr আর অন্যটি, you created the night, I made the lamp (ইরানী ভাষায়)। তার সাথে ওই অঞ্চলের একটি বাদ্যযন্ত্র, duduk, বেজেছে। দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে কোথায় যেন হারিয়ে গেছিলাম। সম্বিত ফিরতে দেখি, ভোরবেলা ভৈরবী। আরমান্দ আমার-এর অনবদ্য সুরসৃষ্টি মনে করিয়ে দিচ্ছিল পিটর গেব্রিয়েলের লাস্ট টেম্পটেশন অফ ক্রাইস্ট আর ফাতিহ্ আকিন-এর crossing the bridge – the sound of Istanbul.
আর হ্যাঁ, চিত্রনাট্যে যিনি অংশীদার, সেই Tonino Guerra সম্বন্ধে কি আর বলব। সে ত এক লেজেণ্ড। তারকোভস্কি, আন্তোনিয়নী, এঞ্জেলোপৌলুষ, আলমোদোভার – কার সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করেননি তিনি।