গল্প।। ছায়ামানবী ।। অপর্ণা গাঙ্গুলী

কাঁচিটা  টেবিল থেকে সরিয়ে আলমারির লকারের গর্ভে লুকিয়ে ফেলে কেয়া l এ সব করতে গিয়ে তার হাত কাঁপে, গলা শুকিয়ে ওঠে l ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখে l আবারো একবার বের করে এনে পরখ করে দেখে তার ধার l আর নিজের মনেই শিউরে ওঠে l আর কোনোদিন যদি ওসব কথা মনে আনে ও l নিজেই নিজেকে বকুনি লাগায় মনে মনে l কে যে হয়ে উঠছে ও দিনে দিনে l অথচ ও তো জানে, ওর হাত বাঁধা, ওর কিচ্ছু করার নেই l

এই মাত্র অতনু বৃষ্টিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো l ওকে স্কুলে নামিয়ে তবে অফিস যাবে l বৃষ্টি সাতে পড়েছে এই সবে, সামনের দাঁত নড়ছে, এই ক্লাস টু হলো l চোখ বোজে কেয়া l আবারো ভাবে, আচ্ছা ওই কাঁচিটা যদি বৃষ্টির পেট বরাবর সমূলে ঢুকিয়ে দেয় কেয়া? আর তারপর, তারপর এক হেঁচকা টান মারে ? কী হবে তখন? পেট চিরে যাবে? নাড়িভুঁড়ি হলাহল গলগল করে সব বেরিয়ে আসবে তো ? আর তার সাথে কি বেরোবে? ওই লম্বা লম্বা সাপ আর কেঁচোগুলো? বেরোবে তো? ওগুলো বের না করে ওর শান্তি নেই যে ! উফফ l আর ভাবতে পারে না কেয়া l আচ্ছা বৃষ্টির মুখটা কেমন হবে তখন? ও কি … আর, আর কিচ্ছু ভাবতে পারেনা কেয়া l পা লেচকে গিয়ে ঠিক ওই ওখানেই বসে পড়ে ও l আর কুঁকড়ে এই এত্তোটুকু হয়ে গিয়ে ঠিক বৃষ্টির গলাতেই যেন লাগাতার বলতে থাকে – মা, মা আর কোনোদিন করবো না মা, আর হাঁসুদের বাড়ির দিকে যাবো না মা কোনোদিনও l এইবারটি ছেড়ে দাও মা, পায়ে পড়ি মা গো, ছেড়ে দাও ও ও ও ও ও ও l তীব্র কান্নায় ভেঙে পড়ে কেয়া l মাটির উপরে আছড়ে আছড়ে কাঁদতেই থাকে l আর ক্রমাগত পিছু হটতে থাকে যেন কেউ সামনে এগিয়ে আসছে, তেড়ে আসছে, তার দিকে এই ভেবে l কতক্ষণ যে এমন চলে, মনে পড়ে না ওর যতক্ষণ না কাজরী এসে হাজির হয় l

তড়াক করে মেঝে থেকে লাফ দিয়ে ওঠে কেয়া l স্রেফ কোমরে হাত রেখে দাঁড়ায় ঘুরে l এ এ এ কী বে, হ্যাঁ ? আবার ভয় পাচ্ছিস তুই ? হ্যাঁ ? এমন প্যান্টে মোতা মেয়ে তোর মতো আমি দেখিনি l কেয়ার গলা কাজরীর মতোই কর্কশ, মুখের ভাষা অশালীন, ঠিক অমনি l গৌতমদার ঘুড়ি, ও ওড়াতে গিয়ে কেটে গেছে তো তুই কী করবি রা ? তোর কী দোষ? তুই ভয়ে সিঁটিয়ে আছিস কেন এইভাবে ? আর ওই তোর ঢ্যামনা বাপটাকে যদি ছাল না ছাড়িয়ে রাখি তো আমার নাম কাজরী রাখিস না, বুঝলি? রাগে ফুঁসছে এখন কেয়া l ওর নজর পড়ে বেডরুমের আয়নাতে l  এ কে? মাথার উপর চুড়ো করে চুল বাঁধা ? কাজল লেপ্টানো চোখের পাতা, ঠোঁট ঝুলে আছে, কাজরী না? হ্যাঁ কাজরী তো …. কিন্তু ও তো কেয়া, বৃষ্টির মা, ও কি করে কাজরী হতে পারে এত্তদিন পর? কি জানি, মাথার মধ্যে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে কেয়ার l  তবে একটা কথা না বলে পারে না ও – ঠিক এই সব মুহূর্তগুলো যখন ও প্রবল আতঙ্কে থাকে, ঠিক তখনি কেমন কাজরী এসে ওকে বাঁচিয়ে দেয় দেখো l এই সব মুহূর্ত গুলোকে ওর ভীষন ভালোবাসতে ইচ্ছে করে কাজরী কে l চকাৎ করে আয়নায় কাজরীর গালে ও চুমু খায় একটা l আয়নাকে জড়িয়ে ধরে বলে, কাজু তুই আমাকে ছেড়ে যাস না ভাই l কাজু তেরছা চোখে তাকায় কেয়ার দিকে l নাহ কোথায় যাবো বে ? বাপটা নেশা খোর আর মা লোকের বাড়ি ঝি খাটে l তোদের মতো বড়ো ঘরের মেয়ে আমাকে বন্ধু ভাবে, এই না কত l নে, পাঁচটা টাকা ছাড় দিকি, দুটো গোলা কিনে আনি, তোর আমার দুজনের মাথা ঠান্ডা হোক l যাহ গরম l

টিং টং l ডোর বেলের আওয়াজে সম্বিৎ ফিরে পায় কেয়া l কাজরী এক নিমেষে উধাও ! এখন সে কেয়াই l ছোট্ট না কিচ্ছু না l মিসেস কেয়া বোস, অতনু বোসের ঘরণী l বৃষ্টির মা l মাসী কে দরজাটা খুলে দিয়ে কাজ বুঝিয়ে দেয় ও l তারপর আবার বেডরুমের নিভৃতে নিজেকে মেলে ধরে l এ যেন তার একলা নিস্তরঙ্গ অনেকক্ষণএর জীবনের এক অন্যতম বিনোদন l না কী গভীর অসুখ, কেয়া বলতে পারবে না l অসুখ তো বটেই, সুখ নেই এতে মোটেও l কারণ এখন কেয়া বুঝতে পারে, ব্যাপারটা বড্ডো বাজে দিকে এগোচ্ছে l  এবারে একটা প্রফেশনাল হেল্প না নিলেই নয় l নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ কমে আসছে যেন l ভয় হয়, সত্যি যদি কাঁচিটা দিয়ে বৃষ্টির পেট চিরে …. আঃ … কেমন দেখতে হবে সেগুলো, ওই সাপ আর কেঁচো গুলোর মতোই কী ? ওই যে নতুন বাবা ছুঁড়েছিলো ওকে লক্ষ্য করেই কুয়োর ভেতরে ? মনে পড়ে?

আরও এক দিনের ঘটনা l হয়েছিল কী, সেদিন কেয়ার মা ছিল স্কুলে l  ফিরবে হাই স্কুল শেষ হলে l বাবা বাড়িতে থাকে বেশি সময়টাই  l তাই কেয়ার দেখাশোনার ভার বাবার উপরে l তা প্রথম দিকে সৎ বাবাকে যে খুব অপছন্দ ছিল কেয়ার তাও নয় l নিজের বাবাকে সে জন্মেই হারিয়েছে l কেয়া একটু বড়ো হতেই, নতুন বাবা ওদের সাথে থাকতে এলো l প্রথম প্রথম লজেঞ্জ, চকলেট, খেলনা কিন্তু একটু বড়ো হতেই, মানে বৃষ্টির বয়সে, বাবা যেন বড়ো বেশি আদর করতো ওকে l বড়ো বেশি চেপে ধরে, এমন করে যাতে কেয়ার খুব কষ্ট হতো l এমন সে সব যে মাঝে সাঝে কালসিটে পড়ে যেত এখানে ওখানে l বাবা সেঁক দিয়ে দিতো ওতে আর বলতো, মাকে বোলো না l বলবে, খেলতে গিয়ে লেগে গেছে l মাকে কি বলবে ও l এমনিতেই মায়ের তিরিক্ষে মেজাজ স্কুলে পড়িয়ে পড়িয়ে l তবে অত্যাচার যেন ক্রমে ক্রমে বাড়তেই থাকতো l

রোজের মতো সেদিন দুপুরেও স্কুল থেকে ফিরেছে কেয়া l বাবা বাগানের শেডে কি যেন মেরামত করছিলো l কেয়াকে দেখতে পেয়ে  সেখান থেকে বেরিয়ে এলো গুটি গুটি l মাথাটা বের করে বললো, কেয়া কিছু খাবে? খিদে পেয়েছে? কেয়া বললো – না একটু বাগানে খেলে নিই l বলেই ছুট,  ছুট l ওর পোষা খরগোশ মুগলির পিছু পিছু l বিকেলের পড়ন্ত আলোয়  সেই মেয়ের আর খরগোশের সারা মাঠ জুড়ে খেলাধুলা যেন এক স্বর্গীয় মায়া রচনা করেছিল l  ভাবছিলো সৎবাবা l আকাশের নীল আর মাঠের সবুজ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলো ওদের তীক্ষ্ণ হাসিতে, প্রলাপে, কোলাহলে l  যেন মাঠময় এক প্রবল হুল্লোড়, আনন্দযজ্ঞ রচনা করেছিল সেই বালিকা ও তার পোষা শশকশাবকটি l এতো আনন্দ ওই শিশুর মধ্যে? হিংসেতে ফালা ফালা হয়ে গেলো দৈত্যের বুক l তাই  ওই হাসি, ওই আনন্দ, ওই সুন্দরকে নিমেষে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিলো সে l যে শয়তান ভর করেছিল ওর উপর তাকে কে রুখবে ! ওদের সাথে ছুটতে আরম্ভ করে বাবাও  l প্রথমে কেয়া ভেবেছিলো, বাবা ওদের সাথে খেলাতে যোগ দিয়েছে l  কিন্তু একটু পরেই মুগলিকে নাগালে পায় ও l ওকি ! ওর মুখের ভাব অমন বদলে গেলো কেন l কি ক্রূর হিংস্র ওই মুখ l মুগলির পেছনের দুটো পা ধরেই এক টানে দুদিকে ছিঁড়ে দেয় ওর দেহ l রাক্ষস l আকাশ জুড়ে উড়ছিল মুগলির লোম আর প্রাণফাটানো আর্ত চিৎকার l কেয়া চিৎকার পেরেছিলো কিছু পরে l আর সে চিৎকার থামেনি ঘুমের ইঞ্জেকশান ছাড়া l কেয়ার মা গল্পটা জানতে পারেননি l বলা হয়েছিল মুগলি পালিয়ে গেছে কোথায় বলে কেয়ার কান্না থামছিল না, তাই ডাক্তার ইঞ্জেকশান দিয়েছেন ঘুমোবার l l তবে সেই রাতে চিকেন বলে বাবা দিব্য সার্ভ করেছিল মৃত শশকের স্ট্যু l কেয়া তখন গভীর ঘুমে l সাতদিন পর আবার সব ঠিকঠাক চলেছিল বোধহয় l মায়ের কেমন কেমন মনে হলেও বাবার মুখের উপর কিচ্ছু বলেনি আর l সময় সব ভুলিয়ে দিয়ে, আবার নিজের খাতে বইয়ে দিয়েছিলো জীবনকে l

এখনো স্বপ্ন দেখে কেয়া l মুগলিরl  চিৎকার করে কেঁদে ওঠে ঘুমে l অতনু পরম যত্নে ওকে জড়িয়ে ধরে l এ সব গল্প অতনু জানে না l  জানে শুধু কেয়া আর ওর ভেতর আটক হয়ে থাকা মানুষেরা l এই সব গপ্পো লুকিয়ে জমাট বেঁধে থাকে কেয়ার মনের গহীন অন্ধকারে l মাঝে মধ্যে লুকিয়ে বেরিয়ে আসে অনেকগুলো মানুষের মধ্যে l তারাও সেই সব গহন মনের বনে বাস করা আদীম জংলী মানুষ l তাদের কেয়া চেনে কখনো, আবার কখনো মোটেই চেনে না l আজ আবারো চিৎকার করে ওঠে কেয়া l মাসী রান্না করছে কিচেনে l শুনতে পায়নি l ঠিক তখনি এসে হাজির মিসেস  রোজা l ওদের পাশের বাড়িতে থাকা ক্যাথরিনের মা l আপদে বিপদে ওই মানুষটি পাঁচিলের ও পার থেকে দেখতেন সবই l মা পছন্দ করতেন না বলে মাথা গলাতেন না বড়ো l কাজরী বলতো, দরকার পড়লে রোজা মাসির বাড়ি দৌড়ে যাবি, ভয় কী ? কিন্তু মুগলির কথা যে কেউ জানে না, না কাজরী না রোজা মাসি l বাবা ভয় দেখিয়েছে ওই কথা বললেই মাকে মেরে ফেলবে বাবা ঠিক মুগলির মতো করেই l তখন কী হবে? মা ছাড়া আর কে আছে কেয়ার ! তাই সব কিছু চেপে থাকে ও, প্রবল ভয়ে, আতঙ্কে  l রোজা আন্টি বলে, মাই পেট, কি হয়েছে তোমার, কেন কষ্ট এতো? তখন শুধু কাঁদে কেয়াl রোজা আন্টি প্রেয়ার করে, বলে, জিসাস কে বোলো, তোমার ভালো করবেন উনি l কেয়া খাটের উপর বসে দুলে দুলে কেমন অন্য গলাতে মন্ত্র আওড়ায় l  এ সব কী মন্ত্র ও নিজেও জানে নাl মাঝে মাঝে ওর মনে আসে আপনিই l ও বলেই চলে, বলেই চলে একটানা l এমনি করেই কত্তজন যে আসে ওর মধ্যে, পেগি লু, ফুলবসিয়া, ইমন, নাগাপ্পা, আরো আরো কত কত ছায়ামানবীরা l তারা কেউ অভয় দেয়, কেউ ভয় দেখায়, কেউ ভর্ৎসনা করে, কেউ গাল পাড়ে, কেউ দুয়ো দেয়, কেউ আদর করে l আর এই সব জীবন একসাথে বাঁচতে বাঁচতে ক্রমশ, নিজেকে, নিজের অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলতে থাকে কেয়া l

একটা ঘরের মধ্যে অনেকদিন পড়ে থাকে কেয়া l অতনুর ফোন বেজে যায় l কখনো মাসি খাবার দিয়ে জোর করে ডেকে খাওয়ায় l অন্য অনেক দিন আবার ভালোই l আগে মা থাকতে মায়ের কাছে যেত দেখা করতে l কিছুটা স্বস্তি হতো l মা মারা যাবার পর যাবার জায়গা কই l এখন অনেক সময় যখন বাজারে যায় কাজরী থাকে সাথে সাথে l বক বক করতে থাকে l মাথার মধ্যে না প্রকাশ্যে কেয়া জানে না l তবে রাস্তাঘাটে কেউ কেউ অবাক হয়ে তাকায় বৈকি l হয়তো কাজরী কোনো  ঘুড়ি ধরছে ঢিল লঙ্গর করে l  আর ঘুড়িটা এসে গেছে প্রায় হাতে l  হাততালি দিয়ে উঠেছে কেয়া l বাসে উঠে অমন  হয়েছিল একবার l এক গাদা লোকের অদ্ভুত দৃষ্টি l কী লজ্জা কী লজ্জা l বাস থেকে নেমে তবে লোকের কৌতূহলী চোখ এড়িয়েছে l আবার কখনো এমন সব জায়গা থেকে ফোন করে ডেকেছে অতনুকে নিজেও জানে না, কেন সেখানে পৌঁছলো, কী ভাবে l অতনু নিজেও বুঝতে পারেনা l বহুদিন বলেছে, কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কথা কেয়া শোনেনি l

তবে সেদিন ভারী বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো l ভাগ্যিস ঘুম ভেঙেছিল অতনুর l কেয়া পা টিপে টিপে বৃষ্টির ঘরে ঢুকেছে l হাতে ধারালো  কাঁচিটি l বিছানার কাছে যেতেই, এক লাফে অতনু অস্ত্রটি কেড়ে নেয় হাত থেকে আর সাথে সাথে প্রায় অজ্ঞান কেয়াকে ধরে ফেলে l কেয়ার গলা নয়, অন্য কে একজন হিসহিস  করে বলছে l  কেন ধরলে আমাকে l আমাকে যে দেখতেই হবে l ওর পেটের ভেতর সাপ আর কেঁচোগুলো লুকিয়ে আছে কি না ? অতনু পরদিন আর দেরি করেনি l নিয়ে গিয়েছিলো কেয়াকে চিকিৎসার জন্য l মাসী বলেছিলো, এ ভূতে পাওয়া কেস দাদা l আমাদের গ্রামেও হয়েছে l অতনুর বিজ্ঞানমনস্ক মন ভাগ্যিস এসবে পাত্তা না দিয়ে উচিত কাজ করেছিল l সাইকো এনালিসিস এ উঠে এসেছিলো সাপের গপ্পো l একদিন দুপুরে বাগান খেলছিল কেয়া ; হঠাৎ সৎ বাবা তাকে ঠেলে ফেলে দেয় কুয়োর ভেতর l শুকনো কুয়ো, অনেক পাতা পড়ে থাকায় তেমন লাগেনি ওর l তবে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলো কেয়া l কুয়োর ভেতর পড়ে থাকা কেয়ার চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি l আর একটু পরেই বাবা ওর উপর ঢেলে দিয়েছিলো অগুনতি সাপ আর কেঁচো l আদপে বিষাক্ত সাপ নয় l তবু শিশুর ভীতি আর চিৎকার উপভোগ করাই ছিল ওই শয়তানের একমাত্র বিনোদন l কেমনভাবে কুয়োর থেকে উদ্ধার হয়েছিল ও ডাক্তাররা জানতে পারেননি l গল্পটা এই অবধি ডাক্তারদের জানিয়েছিল কেয়ার অন্যতম ‘সাহসী সেলফ’, কাজরী l কেয়ার মা ও বাবার খুব সম্ভবত: এর পরই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় l মফ:স্বল থেকে কলকাতায় চলে আসেন কেয়ার মা, মেয়েকে নিয়ে l

কেয়া এখনো চিকিৎসাধীন l ডাক্তাররা এখন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ওর সব সেলফ গুলোকে হটিয়ে দিয়ে, ওর নিজের ব্যক্তিত্বকে গড়ে তুলতে, সাহসী করে তুলতে, জীবনকে মোকাবিলা করার যোগ্য করে তুলতে l আধুনিক মনো:বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার ভিত্তিতে, এখন কেয়ার উপর থেকে বোঝাটা নেমে গেছে অনেকটাই l

তবু অনেক গোধূলি বেলাতে ও ফুঁপিয়ে ওঠে …. তোমরা কি কেউ বলতে পারো নিজের পোষা খরগোশের মৃত্যুকালীন বুকফাটা চিৎকার শুনতে কেমন লাগে? কেউ জানো তোমরা ?

এ সব কথা নিজের গলাতেই বলে কেয়া এখন l

আর বৃষ্টি? মায়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দেয় একমনে l

**(পৃথিবীতে অনেকে মানুষ এই Multiple Personality Disorder /  Dissociative Identity  Disorder রোগে আক্রান্ত l সেই রোগের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত এই কাহিনী l এই রোগের অন্যতম কারণ একটি শিশুর বিপন্ন শৈশব l আশার কথা, এ রোগের নিরাময় রয়েছে চিকিৎসা শাস্ত্রে l )

©অপর্ণা গাঙ্গুলী

প্রকাশিত – রেওয়া পত্রিকা, ২০১৮, বিপন্ন শৈশব সংখ্যা

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page