কবিতা।। চৈতন্য শর্মা
ভালোবাসা : এক ঘোর বিস্ময়
কেন জানিনা! আজ ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে!
এ কি বিস্ময়, নাকি বিরহের ঘোর
ভালোবাসার জাদুতে শায়িত কোন সে ঘুমচোর
আজ চুপিসারে আমার মনের জানালায়।
প্রহরীর ন্যায় বিস্ফারিত চোখে
চেয়ে আছে নাকি আমার দিকে? বুঝিনি তো!
এ কি কল্পনা নাকি জলের আলপনা
বুঝবার চেষ্টাও করবো না কোনোদিন।
যদি জানতে পারে, বুঝতে পারে সে
যদি বেঁকে বসে আমার হৃদয়ের খড়খড়িতে
পালাবে কি এই পথ দিয়ে? জানিনা তো!
সাধ্যাতীত প্রচেষ্টায় আঁটকে রাখবো তোমায়
রাঙিয়ে দেব তোমার হিয়া
আমার রঙিন গহিন জলের ধারাপাতে।
তুমি কি এখনো চুপ করে থাকবে
নাকি সায় দেবে আমার কথায়,
এ কথা আগে ভাবিনি তো!
কেন জানিনা!
আজ যদি ভালোবেসেই ফেলি তোমায়,
তুমি কি লাজে রাঙা হয়ে উঠবে?
নাকি সমুদ্রের সফেন ঢেউ স্বরূপ
আছড়ে পড়বে আমার হৃদমাঝারে!
সখী বলে ভেবেছি যাকে, স্থান দিয়েছি আমার মনে
আজ বড়োই দেখতে ইচ্ছে করছে তাকে
সত্যি করে বলো, কবিতার ভিড়ে আমায় দেখনি তো!
পুরনো স্মৃতি
ঝলসানো ভুট্টার মত তোমার প্রেম
আজ আমার ঠোঁটে নিবদ্ধ।
চাইছে লেগে থাকতে গায়ের সাথে
তবু প্রতি কামড়ে যেন স্তব্ধ।।
কবিতার মারপ্যাঁচে কাছে পেতে চায় তোমাকে
বারে বারে নাড়া দাও শেষ পংক্তিতে
আর বাড়িয়ে তোলো ট্রমাকে।।
অষ্টমীর চাঁদ করে জ্যোৎস্নার সাথে দুষ্টুমি
ধরা পড়ে অহেতুক দৃষ্টি নিক্ষেপণে
বাদ দাও সবই আমার পাগলামি।।
সহস্র দিন পিছিয়ে গিয়েও তোমায় লাগে কত চেনা
ক্ষয়িষ্ণু মেঘে আজও বৃষ্টি হয় বেড়ে চলে কাঙালপনা।।
একটি ভোরের উপলব্ধি
ভোরের বাতাসে এগিয়ে চলেছি
আমরা বাড়ির অভিমুখে
হাওয়ায় ওড়ে আমাদের সৌভাগ্য
নতশিরে গ্রহণ করি আশীষ।
দূরের মসজিদে আযান ধ্বনি শোনা যায়,
ছাপিয়ে যায় আমাদের কণ্ঠস্বরকে।
সৌহার্দ্যের মালা পরাই আপনারে, সজ্ঞানে।
নিস্তব্ধ মৃত্যুপুরীর ঘুম ভাঙে,
ধুলো ওড়ে পথ-মাঝে।
আরো একবার অতর্কিতে
হানা দেয় মনুষ্য সৃষ্ট সভ্যতা
ভেসে বেড়ানো মৃদু নিষ্পাপ বাতাসে।
নির্বাক
তোমার অবসাদ স্পর্শ করে হারিয়ে যাওয়া
ঘাসফড়িং আমার বইয়ের তাকে এসে বসে।
কঠিন অঙ্কের হিসেব অনুযায়ী আগামী এক
বছরের পর ভাবনারা ডানা মেলে যাবে মেঠো
পথ ধরে। যে যার নিজের দেশে ফিরে আসে
কালের নিয়মে। ধরা ছোঁয়ার বাইরে আড্ডা
দেয় আমাদের কোলবালিশ। হাত পাখার
সাবলীলতায় আমরা জ্বর মাপি কপালে
পরিচিত হাতের রেখায়। তারপরে তোমার
চোখ ভর্তি দুঃখের সাগরে ডুবে গিয়ে ভেসে
উঠি প্যারালাল ইউনিভার্সে। যেখানে সত্যি
মিথ্যের আদল ফুটে ওঠে আপেক্ষিকতার
সূত্র ধ’রে, পৃথিবীর বাধানিষেধের বাইরে।
অস্তিত্ব
হাসপাতাল।
লেবার রুম।
দু’জন মা, পাশাপাশি।
প্রসব যন্ত্রণা সহ্য ক’রে
একজন নতুন প্রাণ
আনল পৃথিবীতে।
অপরজন হেরে
গেল জীবনযুদ্ধে।
একই ঘর।
একসাথে রচিত
হ’ল দুই আখ্যান।
ভাঙা ও গড়া।
পালাবার ইচ্ছে
দু’চোখে ঘুমহীন শুন্যতা আমাকে গ্রাস করে চলেছে।
এথিক্সের চড়াও পাহারা অগ্রাহ্য অহরহ।
বুকের ভেতরে ঝড় উঠছে, লালাভ আগুন জ্বলে
শিরায় শিরায় অন্য পাড়ায়, অন্য শহরে।
লকলক করে ওঠা তোমার জিভে আমি স্বাদ পাই
অমরত্বের প্রত্যাশিত খুশির মুহুর্ত।
পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আটকে কলমের কালিতে।
যদিও অন্যরকম অনুভূতি ব্যক্ত করার
চেষ্টায় মেতেছি আমি আজকাল।
এই একঘেয়েমির ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি পেতে চাই।
আর সেই ঐতিহাসিক রায়ে ছেদ পড়তে পারে
তোমার হৃদয়ে বন্দিদশার অবগুণ্ঠন।