#হোক_প্রতিবাদ আপনিই তৃতীয়পক্ষ
সৈকত ঘোষ
যে কলম প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে আমি মনে করি সে কলম মৃত। তাকে হয় ক্রিমেটোরিয়ামে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত নয়তো সুদৃশ্য মিউজিয়ামে
একটা স্লো-পয়জনিং চলছে। একটা জাতিকে শেষ করার দুর্দান্ত পরিকল্পনা চলছে। আর আমরা বগল বাজাচ্ছি, হাততালি দিচ্ছি।
শাবাশ বাঙালি, শাবাশ
আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো নিয়ে রীতিমত সিন্ডিকেট চলছে। ব্যবসা চলছে। অথচ আমরা চুপ!!!
আমাদের প্রজন্মের কথা ভাবুন,
খেলা, মেলা, সিবিআই, ইডি আর দেদার উৎসবের বাইরে কী আছে আমাদের সামনে?
টাকা উড়ছে, কিন্তু আমাদের পকেট গড়ের মাঠ!
মুঠো মুঠো ট্যালেন্ট, কিন্তু মেলে ধরার জায়গা নেই।
জাস্ট নেই, নেই আর নেই…
লাখ লাখ শিক্ষিত মেধাবী ছেলে মেয়ে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে! কেউ পি এইচডি ডেলিভারি বয়, কেউ এম এ চায়ের দোকান, কেউ বি টেক টিকটকার, কেউ এম এসসি শাড়ি গয়না ব্রাইডাল। কি যুগ পড়লো, সত্যি!
একবার ভাবুন, ৭০বছরের একটা লোক যার চার দিকে চারটে বান্ধবী! শিক্ষাকে বেচে দিয়ে, একটা জাতির মেরুদণ্ডকে বেচে দিয়ে, একটা গোটা প্রজন্মের চাকরির স্বপ্নকে বেচে দিয়ে কী কালারফুল জীবন মাইরি!
ওহ, লাভলি!
ঘনিষ্ঠের বাথরুম থেকে শান্তিনিকেতন, টাকের চুল থেকে কয়েকশো বেনামী অ্যাকাউন্ট, নিট সম্পত্তিতে ধনপতি পালকেও বলে বলে বিট। এরাই আবার আমাদের কি যেন বলে— “জাতীয় সম্পদ” মানুষের প্রতিনিধি! কাকে ছেড়ে কার দিকে তাকাবেন, সবাই তৈরি ছেলে, সবারই প্রচণ্ড খিদে। চাকরি জমি কয়লা গোরু সামনে যা পেয়েছে খেয়ে নিয়েছে। এ আর তেমন দোষের কী!
কী দারুণ খেলা হচ্ছে তাই না!
ক্লাবগুলোকে ফুর্তি করার জন্য কোটি কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে আর শিক্ষিত যুবক যুবতীরা চাকরি চাইলেই তাদের গায়ে ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে “দেশদ্রোহীর”।
বলতে পারেন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো আমরা!
ভয় করে, অসহায় লাগে। তাহলে এটাই কী ভবিষ্যৎ, এটাই কী ভবিতব্য!
কোভিড পরবর্তী পৃথিবীটার কথা ভাবুন, যেখানে এমনিতেই গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা বেহাল। যেখানে মাসে দশ হাজার টাকা উপার্জন করতে রক্ত জল হয়। সেখানে এ কোন প্রতিযোগিতা চলছে! কারো পঞ্চাশ, কারো একশো, কারো দেড়শো! কোটি মশাই কোটি! একবার ভাবুন এই টাকাগুলো দিয়ে কতো শিক্ষিত বেকারের চাকরি দেওয়া যেত…সময় নিন। একটু কষ্ট করে অঙ্ক কষে ভাবুন।
আপনার ঘরের ওই শিক্ষিত বেকার ছেলে মেয়ের দিব্যি। এর পরেও চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন! ফেসবুকে রিলস বানাবেন! সন্ধেবেলা চা খেতে খেতে নিউজ চ্যানেল খুলে কোটি কোটি টাকা আর এইসব মহাজাগতিক রত্নদের বান্ধবীদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হায় বাঙালি হায় করবেন! তারপর আবার বাসে ট্রেনে মেট্রোতে গুজগুজ ফুসফুস কিংবা বড়জোর রবিবার দুপুরে মাংস ভাত খেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটো মিম শেয়ার করে দু-ঘন্টা হ্যা হ্যা হি হি হো হো! ভাবুন ভাবুন, ভাবা প্রাকটিস করুন আপনার প্রতিবাদের ভাষা এতটাও ঠুনকো নয়…
বড়ো দেরি হয়ে যাচ্ছে স্যার, একটা গোটা প্রজন্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে। রিয়ালিটিতে আমরা শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের চেয়ে খুব একটা ভালো অবস্থানে আছি কি? এর পরেও দল মত নির্বিশেষে এই পচে যাওয়া সিস্টেমের বিরুদ্ধে আমরা সাধারণ মানুষ পথে নামবো না! এর পরেও বলবো যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে আর যা হবে ভালোই হবে টুম্পা! এখন একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাক…
** সম্পূর্ণ মতামত লেখকের। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও প্রকার দায়ী নহে।