গুচ্ছ কবিতা।। শানু চৌধুরী
পোয়াতি বেড়াল
——————
ছায়াদের ভয় পেলে,
পোয়াতি বেড়ালগুলো পালিয়ে যায়
পাকা ভুরুর নিচে যে সাবেক তীক্ষ্ণতা
তার ভেতর বিদ্যুৎ চমকায় এখন…
মানুষের রূপ দেখি,দেখি ভাঁটার মতো লাল চোখ
তুলে আছে মেয়ের বুকে!
এইতো কয়েদখানা!
কুৎসিত হতে গিয়ে, হয়ে গেল রানী
এত রোদ কেন নিয়ে এলে তুমি?
চিলের মতো কেন ডোবালে ঠোঁট?
কষ ভেঙে পড়ে এখন, পাকা করমচার গায়ে
লাল টুসটুসে হয় তাদের গড়ন
এদিকে তুলনা মুছে গেলে,দেখি
ঝরে যায় তামাম বিবেক…
তোমার গসপেল
——————
মানুষের চরাচর থেকে ধুলো উড়ে গেলে
গীর্জার ঘন্টা শোনা যায়
আমাদের যত আতসের ভার কাচ হল আজকাল
তুমি তো বেদনাময়, তাই তোমার পাশে কেউ নেই
ছোট্ট কুটিরের থেকে চেনা আলো,পূর্বপুরুষের বীজ
ছড়িয়ে গেছে গথেদের গল্পলোকে
এত বর্বর! যুদ্ধের মতো ভঙ্গিমায়
ছুঁয়ে আসে সরল ব্রতচারিণীর ঝাঁক
আমি তো দেখিনি,সাদা পৃষ্ঠায় তোমার গসপেল
তবু উড়ে যায়, চেয়ে থাকে সমস্ত তহসিল
যদি প্রসূতিসদনে প্রবেশের আগে দেখা যায়
সময়কালের আগে পেরেকঠোকা শুশ্রূষায়
চেয়ে থাকা বাতাবিফুল…
বাদুড়তলায়
————-
বিষাক্ত ঢিলে তার ক্ষত হল সকাল
কাচ গড়িয়ে যাওয়ার আগে কতকাল,
লেখায় পড়েছিল সামান্য ধুলোবালি
মানহানি থেকে ক্রোশ দূরে টিমটিম করে
লেঠেলের সামান্য বাতি,দুলে চলে কারো
অশ্বাভ লাল ব্যথা অথবা অভিমান…
কে কবে ফুরিয়ে যায় বোঝে গৃহস্থ কাশি
জমা কফ ভেদ করে যখন জাগে শেষ?
আহার ক্ষয়ে গেলে,মুখ তার পচে গলার ব্যথায়
আমরা ছুটি, দেখি জবার মতো আদি, তার আভা
তুমি কি জানো, সে খুব জ্বর হলে ভ্রমরকে ডাকে
ক্ষত চাক টেনে তোলে কুরূপ আশায়
নফর শ্বাস নেয় যখন বাদুড়তলায়…
হাঁপানির জড়িবুটি ছেয়ে যায়,রোদ পড়ে
যখন তার জিভের তলায়…
ডাইনির কারসাজি
——————–
মানুষের বচসা থেকে উড়ে এল কটুস্বাদ
একলা চলতে গিয়ে হোঁচট খাওয়া শ্যামল
ভেঙে গেল চাঁদের মুন্সিয়ানা মাখা জলে
সারাদিন ওড়না চাপা মুখে ঠুনকো লাগে
আর গান হয়ে যায় কারো কারো লজ্জা
বাড়ি ফিরি,শেষ হয়ে গেলে প্রকৃতির রাম
তুমি তো দ্যাখোনি, কুঠারের আগে পুড়ল
সমস্ত চোরাই কাঠের আগুন ও ছাই
সেই গোপন রমণী, মন্দিরের ফুটিফাটা থেকে
কুড়িয়ে এনেছিল পুংলিঙ্গের সংবেদন
আমরা অহেতুক চামড়া সরিয়ে বেছেছি
অভিজ্ঞতার চিরায়ত বিষ ও বাদ্যযন্ত্রের জোৎস্না
তবু ভাবি এত শিশু কি ভিনগ্রহের,নাকি আমার
দেরাজের ভিতর লুকিয়ে থাকা ডাইনির কারসাজি
জানি মেলাকর ছুটে যাবে, লাল পাথরের প্রাসাদে
দীক্ষিত রাতে ছুটে আসবে করবী রঙের সভ্যতা
তবু কেউ জানে না, সবুজের আগে সরস ঢুকলে
মানুষ ফসলের মেজাজ বদলায় না…
হরিণের কলঙ্ক
——————–
ভেঙে পড়া তোমার কাছে হাস্যকর লাগতে পারে
মাছের কলাকৌশল ডিঙোতে কাঁটা লাগে পায়ে
মানুষ তবু মাছ খায় যেভাবে কিছু লোক ভালোবাসে,
হরিণের কলঙ্ক আর কারো কারো কান্নার মেহফিল
তুমি হোরকে ভালবাসো,ভালবাসতে গিয়ে দেখো
কেউ কান ভরে দিয়েছে তার নামে প্রকৃতিতে।
এসব হকের প্রাদুর্ভাব, খুব নিজের ভাবে মানুষ।
আজকাল খুব কাণ্ড করেছে সেই অশ্বাভ মেয়ে
তবু বলি,তুই আটকে থাকিস না। সীমূমে ছেয়ে দিস,
এই সমাজের যত বিকল খড়।ফাটিয়ে দিস,স্বচ্ছ কাচ
আপেল ভাঙার ছলে। এত ফুলমালা নিয়ে মানুষ,
কোথায় গেল? রাতের আর দিনের গৌরে কি আছে কোনো মুখ?
তুমি লতপত করছো, একটা হেয়ালি করা পালকের মতো।
যেখানে ওষুধের শিশি ফুটিয়ে তুলেছে মরা বুদবুদ।
সিয়েনার ড্রেসিং টেবিল
——————————–
স্কুল বাড়ির কাছে পড়ে আছে মেথি ঘাস
আমাদের সব হার জড়তা ভুলে, চলে গেল- মুকেশের ঘরে
ফুল তবু রূপ নয়,
সেরকম,
কলঙ্ক-পড়া পেতলের থালায়,যেমন- দুধের ফেনা
উপোস করো,দীর্ঘ ডানার আগে ছিঁড়ে গেছে- অন্ধ চোখ
মানুষ আর কাজে লাগায় না সেসব
সে তো পুত্রবতী ছিল,বিকেল হলে তার ঘাড়ে খুব যৌবন লেগেছিল
এখন শুধু উলুরবে ধ্বনি ছিঁড়ে যায়,
যেখানে প্রয়োজনীয় ভুলের আগে বসেছিল- সিয়েনার ড্রেসিং টেবিল
বিজোড় চটি
————–
রোদ ঘিরে দিলে গম পাকে না
ওদিকে সমস্ত লণ্ঠনের আদলে,
ঝুলে থাকে স্বপ্ন নামের নিশ্বাস
তোর বাচালতা থেকে যেই, পালাতে যাই
দেখি দু’শো দশ দিনের রোগা তুষার
লেপ্টে আছে পাতলা হয়ে, চাষের শরীরে
বিজোড় চটি, জল জমা ঘরে
মরা সাপের খোলস ভাসছে এখন
ডিম খেয়ে পুষ্ট যেমন অভিশপ্ত সংসার
তুই কি ছুটে আসিস, নাকি টইটম্বুর পেটে
ঢুকিয়ে রেখেছিস কারও খেলনা-বাটি?
সে খুঁজে বেড়ায়,লুটিয়ে যায় তার হলুদ উঠোন
আমরা অবাক হবো বলে,যে চোখ দিয়ে পুঁজ বের হল
পেঁচা প্রসবের সাদায় দেখি মিশে গেল সেই সব গড়ন
যশোরের রূপ
—————
যশোরের রূপে তার সুর খুলে গেছে
ভীতুদের সাথে থেকে মোছে তাই রোদ
আমাদের সীমা নেই নেই কোনো সাপ
বিষধর যুগ থেকে ছেঁকে নেবে গান
তোমাদের ঘরে ছিল ধসে পড়া মাটি
তার কথা ভেবে কবি পুষেছিল ধান
কাজ থেকে ছুটি নিলে মড়া পোড়ে ঘাটে
আমি হই সেই দেশ ডুবুরির শোকে
পৃথিবীর ভয় হয় গলা উড়ে গেলে
সারাদিন আলো হয়ে ফোটে শব ঘ্রাণ
পরীদের ঘর নেই আছে তবু ডানা
চোখ ভিজে গেলে জেনো রাখা আছে ধূপ
পাথরের দাগ আর পাতার ডাগরে