কবিতা।। পুরানো সুহানা ।। ঋষি সৌরক
ছ’ভাই-বোন মাঝখানে সজাগমাত্র লণ্ঠন
কমজোর শিকারের মত তার ধুকপুক ঘিরে আছে
ছজন- রসুই ফলিত বেলনা-চাকীর চিটপটী আওয়াজ
লঘু শব্দগ্রন্থনায় মুড়েছে আবহ,সবাই একসাথে
নামতা পড়ছে আর দুলছে,সেই দোলনের ভেতর
সাত-পাঁচে গড়িয়ে পড়ছে মাহেন্দ্রশৈশব আধো
আধো ভাবলেশহীন ছোঁয়াছুঁয়ি মেখে নিয়ে শারদসন্ধ্যার
উচ্ছ্বলতা বিহ্বলতা আর টিমটিমে বিশ্বাসের আলোসুখ
বাবাদের বড় হয়ে ওঠা শুনি ছবির মত ঠাম্মার মুখে
আর শুনি সেইসব হাস্যকর আলোয় বাবাদেরো ভুল হতো অঙ্কে
#
পুরোনো মলাট থেকে ঘোর ছুটে আসে ছুটে আসে জটিল বয়স
বাবাদের বৃত্তাবয়ব ছিটকে ছিটকে এক-একটা বৃত্তের ঠিকানা বড় হয়
সেইসব সন্ধে মাদকতা ফুরিয়ে শহুরে ব্যাস্ততায় রিয়্যালিটি শো-ক
গ্রাম ছাড়া পা’এ পা’এ আমাদের হুহু ভবিতব্যের পাণ্ডুলিপি ডিঙ্গিয়েছে
সংরক্ষণ মেদুর শীতে সংরক্ষণ মেদুর আলোয় সমবেত মন্ত্রমুখরতা
অতিকায় যুদ্ধস্তবসম সাবধানরোল সিংহের একান্ত গর্জনে শ্বাস ওঠে
সমস্ত শরীরকে টেনে আনে শরীরের কাছে ঘর্মাক্ত করে সরীসৃপকেশর
এসব সন্ধিগত প্রাচীন-পুরোনো পথ এসব ফ্যান্সিরাঙ্গা ছেলেখেলাধুলো
সমস্ত শরীর ও মন সমতল আসক্ত উঁচু-নীচু ভূ-স্কেপবিহীন নিটসরল
অন্ধকার থেকে ঢিল ছুটে এসেছিলো আর লণ্ঠনের কমজোর আলো
আমাদের হাত ছেড়ে শরীরে শরীর শরীরে অভেদ মিশিয়েছে অন্ধকারে
#
তারপর অন্ধকারের মধ্যে মিশেছে বাবা-মিশেছে মা’ও
আলাদা আলাদা অন্ধকার তবু কোথাও যেনো একরকম
গভীরতা ছুঁতে ছুঁতে শেষ গভীরতায় অন্ধকার ফিকে সসীম
সেখান দিয়েই দৌড়ে যাওয়া পড়ে যাওয়া রোলিং স্ক্রিন
অজস্র বিষধর সাপে ছেয়ে গেছে কৃষ্ণকালো প্লট হিসহিসানি
৯৯ থেকে ১ নেমে আসা সাপটার লেজের দিকে মুখ
একদিন অমোঘ ভাগ্যের অটল ধাক্কায় মুখোমুখি বাবা-মা
আমাদের জন্ম হোলো-আমাদের হোলো জন্ম গতঅন্ধকার
আলোতীব্র অমানিশ স্বচ্ছ কঠোর স্ফটিক ফালে ফাল
হ্রেষাক্ষম ফুটন্ত আলো নিজেদের নিজেদের চেনা না যাওয়া
প্রতিবেশীনির কোমল আবেশে দোলে আমাদের জন্মান্ধ শৈশব
আমাদের বাবা-মা’র সেইসব নষ্টসন্ধে আমাদেরি প্রতিবেশী দিন-রাত
#
বাবাদের কবিতালেখার বদ-অভ্যেস এখনো অন্ধকার থেকে প্রশ্রয় খুঁজে
নেয়,অন্ধকার থেকে দূরে রাখি বাবাকে দূরে রাখি মা’কে দূরে রাখি
ঠাম্মার চনমনে আদরের গান কুয়াশার দমবন্ধ চাদর আর ঢিল ছোঁড়া
দূরত্বে অন্ধকার যার ওপারে এইসব কবিতা লেখা আর জটিল আমরা
স্বপ্নের কালো কালো নামতাজলে টুপ করে খসে পড়া আলোর সূঁচ
ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন –পুরোনো গাছেদের শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে তোলপাড় শুরু
অজস্র নির্বিকার শৈশব আর তাদের মনগড়া ভুল রাতের ফুলেদের
একসাথে গেঁজে যাওয়া দরজায় টোকা পড়ে ঘন ঘন ঘন ঘন সন্ন্যাসী
ঘূর্ণির মত উড়ে যায় সান্ধ্য সমাবেশ উড়ে যায় একটানা ভৈরবীনির্যাস
আমাদের ঠাম্মারা অনেক গল্পই জানে না আমাদের বাবাদের মতে
ভাঙ্গনের শব্দ এতোখানি নিউক্লিয় চিরন্তন হয়ে বসে আছে লণ্ঠনের বুকে