গুচ্ছ কবিতা।। তনুশ্রী বাগ
১.
এই অর্ধেক সন্ধ্যায় এসে নিরন্ন কষ্টের কথা মনে পড়ে যায়। চৈত্রদিনে পাহাড়ে রঙের আলোক যেমন শেখায় অড়হড় ক্ষেতের হলুদ, আমাকে তেমনই বলেছে গাছেদের গান, নির্জন জোনাকির পথে ব্যথাতুরা চাঁদ নাকি অন্নচিন্তা ছেড়ে শিশিরের কাছে সঁপেছে নিজেকে! ওই শ্রীকণ্ঠে তুমি তুলসীহার হও। ওই হাতে বিসদৃশ আমাদের মতো কররেখা নেই। ছিন্নশালফুলের অঝোর ব্যথা— ক্রন্দনে, আলোতে, সবশেষে উপশমে আসে; মহাকাল পার করে যে দেহ রচিত হয়েছে, কী উপায়ে অস্বীকার করি তাকে আজ? বিশুষ্ক শিরীষ গাছের নিচে দু-চারটি ডানার খসখস, ওগো জন্মযমুনান্তর মেয়ে, কপালের চন্দন ভুলে অথৈ পথে খুঁজছ কাকে? ধাম জানো? দেহের গোকুল। কুঞ্জে লিখিয়াছ ‘ক্ষমা, ক্ষমা’— ওড়ে দিন, দিনান্ত বকুল, ক্ষমাহীন নক্ষত্রের ছাই। পাশে হাতকল, ডিমের কুসুম, শিশুশিক্ষা নিকেতন।
২.
নীরব শিশির দেখে কথাগুলি খুঁজি
বিবাহের রেডিওতে
বেজে চলে কাজলাদিদির গান
লাল-লাল গোটা হাতের অক্ষর
বিপজ্জনক বলে, সেইবার কত আয়োজন
কত স্থির ওঠাপড়া, প্রভু, এই জীবনের;
দোষ কার
এমন বিভ্রম বুঝি সকলের ছিল
চৈতের সকালে শাপগ্রস্থ হিম, পথের কুসুমে
তারও ছিল যাওয়া। আসা।
৩.
জোর করে যে আসে না, ভালোবাসি
তাকে আমি। বিরহ দুপুরে পাখি ওড়ে
পিছু ফিরে চলে যায় শীত, যেন এইভাবে
যেতে হবে বলে শিকড়ের মতো গোঁয়ার আকাশ
কালো ছেয়ে আছে, অপরূপ ব্যথা, কলারটিউনে
একবার বেজে উঠেছিল ঠিক, ওইসব দূরে
স্পর্শহীন আলো
ঢেউ বাজে জলে।