রণক্ষেত্রে রণরঙ্গিনীঃ দ্রৌপদী চরিতের কম আলোচিত দিক।। ডঃ দেবব্রত দাস

মহাভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ‘দ্রৌপদী’। পঞ্চপাণ্ডবের ভার্যা হিসাবে তাঁদের সঙ্গে বনবাসে কষ্ট করা, কুরু-রাজপ্রাসাদে দুঃশাসনের হাতে অপমান, অজ্ঞাতবাস কালে কীচকের কাছ থেকে কুপ্রস্তাব লাভ- বিড়ম্বনা যেন দ্রৌপদীর সঙ্গে জড়িয়েই আছে। তাছাড়া, বর্তমান সময়েও ভারতে হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডে আর্থ সামাজিক কারণে এক পত্নীর বহু পতি অর্থাৎ Polyandry প্রথাকে ‘দ্রৌপদী-প্রথা’ বলেই চিহ্নিত করা হয়। এহেন দ্রৌপদী যে কুরুক্ষেত্র রণাঙনে, রণরঙ্গিনীরূপে কুরু পাণ্ডবের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যকে পরাজিত করেছিলেন, সে তথ্য খুব কমই আলোচিত হয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দ্রৌপদি ও তাঁর নারী বাহিনীর যোগদান জানতে গেলে মূল বাংলা পুঁথির উপর নির্ভর করতে হয়। আর এই কাজটিই করেছেন ড. অনুপ কুমার সাঁতরা, যার দ্বারা আমাদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।

বিশ্বভারতী, রবীন্দ্রভবন লিপিকা পুঁথিশালার টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট অনুপকুমার সাঁতরা আকর হিসাবে মূল বাংলা মহাভারতের পুঁথিগুলি বিশ্লেষণ করে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে যোদ্ধারূপে দ্রৌপদীকে চিত্রিত করেছেন তাঁর গ্রন্থ ‘দ্রৌপদীর যুদ্ধঃ – বীরাঙ্গনা নারী’তে।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে চক্রব্যুহ রচনা করে অন্যায়ভাবে অভিমন্যুকে বধ করা হয়। অভমন্যুর মৃত্যুর খবরে পাণ্ডব ও যাদব রমনীরা শোকাকুলা হয়ে পড়লেন। এরপরেই দ্রৌপদী তাঁর নিয়ন্ত্রনাধীন পাণ্ডব-যাদব রমনীদের নিয়ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে কৌরবদের উচিৎ শিক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন। পাণ্ডব- যাদব পক্ষীয় মহিলাবাহিনীতে তিন শ্রেণীর নারীরা অংশ নিয়েছিলেন।

(ক) সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর নারীঃ- দ্রৌপদী, সুভদ্রা, উত্তরা, রুক্মিনী, সত্যভামা, প্রভাবতী।

(খ) মধ্যম শ্রেণীর নারীঃ- জাম্ববতী, রেবতী, চন্দ্রাবতী, গুণবতী, ঊষা, দেবকী, রতি, লগ্না, কালিন্দী, লীলাবতী।

(গ) প্রান্তিক শ্রেণীর নারীঃ- মিত্রাবৃন্দা, দারুকদুহিতা, চিত্ররেখা।

দ্রৌপদী তাঁর নারী বাহিনীকে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করলেন যে অন্যায় যুদ্ধে অভিমন্যুর হত্যাকারী চক্রব্যুহ-রচয়িতা কৌরবপক্ষীয় উচিৎ শিক্ষা দেবেন।

যুদ্ধে দ্রৌপদী পরাজিত করেন দ্রোণাচার্য, অশ্বত্থামা, দুঃশাসন, দুর্যধন ও দণ্ডধরকে। সুভদ্রা পরাজিত করেন জয়দ্রথকে। এইভাবে, ডঃ সাঁতরা মূল বাংলা পুঁথি অনুসারে পাণ্ডব যাদব পক্ষীয় নারী বাহিনীর পরাক্রম দেখিয়েছেন, যা মহাভারত চর্চায় খুব কমই আলোচিত হতে দেখা যায়।

দ্রৌপদী ও তৎসহ অন্যান্য পাণ্ডব- যাদব- বংশীয় নারীদের যোদ্ধারূপে দেখিয়ে ডঃ সাঁতরা মহাভারতচর্চার একটি নতুন দিকের উন্মেষ ঘটিয়েছেন। ‘দ্রৌপদীর যুদ্ধঃ- বীরাঙ্গনা নারী’ গ্রন্থটির প্রকাশক আত্মজা পাবলিশার্সের কর্ণধার অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়। বইটির বহুল প্রচার কাম্য।

দ্রৌপদীর যুদ্ধঃ বীরাঙ্গনা নারী, অনুপকুমার সাঁতরা; আত্মজা পাবলিশার্স, ৯০/৬এ মহাত্মাগান্ধী রোড, কলকাতা-৭০০০০৭

পৃষ্ঠা-৭০

মূল্য-২০০টাকা  

 

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page