উপন্যাস।। আকাশ ভাঙে যখন ।। সৈকত ঘোষ

|| প্রথম পর্ব || 
কফি খাবে?
বিছানা থেকে উঠে গাউনটা জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো রাত্রি।
ব্ল্যাক, উইথ ইউ মাই সুগার। কোলবালিশটাকে আর একটু টাইটলি জড়িয়ে, ছোট্টো করে চোখ টিপে আদুরে গলায় বলল অংশু।
তুমি না রিয়েলি…পারো বটে। রস আর ধরে না।
এক ঝটকায় রাত্রির হাতটা ধরে অংশু।
কি করবো বলো, আমি তো আর মদন তাঁতি নই…
যে চোখে চোখেই তাঁত বুনবো!
অংশু, ছাড়ো প্লিজ। সব সময়…
শরীর ছাড়া কি দিন বদলের গান লেখা যায়!
আমার কথা নয় শিলুদা বলেছে গুরু
বালামোর একটা লিমিট থাকে।
জানি তো, বাট আমি তো আনলিমিটেড…
বলেই হো হো করে হেসে ওঠে অংশু।
ট্রু আর্টিস্ট বলে কথা, শরীরের ভাঁজে ভাঁজে আমি আবিষ্কার খুঁজি বুঝলে।
তোমার এইসব নষ্টামি আমার জানা আছে। হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে যায় রাত্রি।
        এই শোনো না, কাল কি অফিস না গেলেই নয়? তাহলে রাতে বাইরে কোথাও ডিনার করতাম। তারপর একটা চুমু লং-ড্রাইভ আর তারপর রাতে তোমার এখানেই…
বিছানায় আধশোয়া হয়েই জিজ্ঞেস করল অংশু।
ওর সারা শরীরে এখনও শরীর খেলার নেশা জড়িয়ে রয়েছে। দু-চোখে ভরপুর মায়া। একটা অদ্ভুত ভালোবাসা ভালোবাসা গন্ধ। এই মুহূর্তে অংশুকে খুব ছুঁতে ইচ্ছে করে রাত্রির। আসলে অংশুর মধ্যে একটা বাঘ সবসময় ঘুমিয়ে থাকে। ছুঁয়ে দিলেই সে হালুম করে ওঠে। উলটে পালটে কামড়ে ছিঁড়ে খেতে চায়। এই ওয়াইল্ড ব্যাপারটা খুব ভালো লাগে রাত্রির। আদরের সময় পুরুষ যদি না বাঘ হতে পারে তবে সে কেমন পুরুষ! বিন্দু বিন্দু করে নিজেকে পুরোটা ওর সঙ্গে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। এ এক অদ্ভুত নেশা, এর চেয়ে সুন্দর এর চেয়ে সুকুন আর কী হতে পারে। এসব ভাবতে ভাবতেই দু-কাপ ব্ল্যাক কফি নিয়ে ঘরে আসে রাত্রি। গাউনটা খুলে অংশুর ঠিক মুখের কাছে এসে দাঁড়ায়।
মুগ্ধ বালকের মতো অংশু তাকিয়ে থাকে। ডুবে যায় রাত্রির নিটোল শরীরী ভাস্কর্যে।
অ্যাই ধরো
কি?
বাল।
বলে ধোঁয়া ওঠা গরম কফির কাপ অংশুর দিকে এগিয়ে দিল রাত্রি।
সঙ্গে সঙ্গে অংশু পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো রাত্রিকে। রাত্রির শরীরে কোথাও কোনও সুতো নেই। এই লাবণ্যময়ী বন্যতা বড়ো প্রিয় অংশুর। তোমার হাতের কালো কফির যে কি মহিমা। না খেলে সত্যিই জীবনটা অপূর্ণ থেকে যেত। এই মুহূর্তটার জন্য আমি মরে যেতেও রাজি।
          সেই, ওরম মনে হয়! যত্তসব আদিখেল্লা।
মুখে যাই বলুক, মনেমনে অংশুর এই হাফটিকিট কবিত্ব বেশ এনজয় করে রাত্রি। অংশুর এই ছোঁকছোকানিতে এক অদ্ভুত প্যাশন আছে। ধিকিধিকি আগুন আছে। ঠিক যেন সন্ধ্যের ফ্যান্টাসি কড়া নারে দরজায়। দমকা হাওয়ায় খুলে যায় ইচ্ছের সবকটা দরজা জানালা। আর তারপর শুরু হয় সে আদিম খেলা। অংশুর সাথে এ শরীর খেলায় যেন বারবার নিজেকে নতুন নতুন ভাবে আবিষ্কার করে রাত্রি।
একে কি প্রেম বলে?
না খিদে!
অংশুর কাছেও এর কোনও উত্তর নেই। শুধু মুহূর্তের উষ্ণতায় গলতে থাকে দুটো শরীর।
মাঝে মাঝে অংশুকে নিষ্পাপ শিশুর মতো মনে হয়, যখন অপার মুগ্ধতায় ও রাত্রির স্তনদুটো নিয়ে খেলতে থাকে। শরীরে আকাশ ভাঙে তখন।
কথা হারিয়ে ফেলে রাত্রি। শুধু অনুভবের আঁচে সেঁকে নেয় নিজেকে।
রাত্রির সারা শরীরে সমুদ্র এঁকে দেয় অংশু। রাত্রির গভীরে আরও গভীরে প্রতিষ্ঠা করতে চায় নিজেকে। ঝিম লাগা চুম্বনে যেন ঝপ করে সব আলো নিভে যায়। ব্যথার শহরে বেজে ওঠে  প্রেমের ভায়োলিন। রাত্রি ভালোলাগায় কেঁপে কেঁপে ওঠে। চিবুক গলা নাভি হয়ে অংশু আরও তলিয়ে যেতে থাকে। তারপর রাত্রির দুই পায়ের ফাঁকে এক অদ্ভুত সূর্যাস্ত ওকে মাতাল করে দেয়। ক্লিটোরিসে জিভ দিয়ে পাগলের মতো চাটতে থাকে অংশু। তুফানি দস্যুর মতো শুষে নিতে চায় সমস্ত আগুন। তারপর রাত্রিকে কোলে তুলে নেয়, দেয়ালের সঙ্গে সাটিয়ে ধরে, ভাঙতে থাকে একটার পর একটা ঢেউ। অংশুর এই অ্যাগ্রেসিভনেসটা দারুণ ভাবে উপভোগ করে রাত্রি।
মুখে বলে ফাক মি লাইক আ বিচ। আই ওয়ান্ট ইউ মোর লাইক দিস…
         ওদিকে কফিটা ঠান্ডা জল হয়ে গেছে। ঘন্টা খানেক এক নাগাড়ে ঝড়ের পর একটা শান্ত শীতল হাওয়া। রাত্রির খোলা পিঠে তখন আঙুল বোলাচ্ছে অংশু। এ আঁকিবুকি খেলায় কোনও ভাগফল নেই, নেই কোনও ভাগশেষ। অংশু উঠে ব্যালকনির দিকে যায়। আসলে এখান থেকে আকাশ দেখা যায়। দু-হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখা যায় স্বপ্নকে। একটা সিগারেট ধরিয়ে একমনে আলো আঁধারি শহরটাকে দেখে অংশু। মাথার ভিতরটা কেমন যেন দপদপ করছে। আজকে রাতের মধ্যেই একটা নতুন ছক কষতে হবে, একটা নতুন অঙ্ক। একদম হাটকে একটা কনটেন্ট চাই।
ধরো,
রাত্রির ডাকে পেছন ফিরে তাকায় অংশু। ততক্ষনে কফিটা গরম করে নিয়ে এসেছে রাত্রি।
অংশু কাপটা হাতে নিয়ে একটা সিগারেট এগিয়ে দেয় রাত্রির দিকে। রাত্রি পাশে রাখা মোড়াটার ওপর বসে।
কি ভাবছো? নতুন কিছু আইডিয়া পেলে?
সেটাই ভাবছি কি করা যায়…একটা মাটির গল্প চাই বুঝলে, যেটা সবাইকে নাড়িয়ে দেবে। পুজোর আগে চ্যানেল চাইছে অন্তত গোটা তিনেক এপিসোডের একটা চমকদার স্টোরি করতে…
আরবান গল্প, বনেদি বাড়ির পুজো এসব সেম রিপোটেশন দেখতে দেখতে লোকজন ক্লান্ত।
রাত্রি একটা কফির সিপ নেয়। তারপর ধোঁয়াটা রিংয়ের মতো আকাশের দিকে ছেড়ে বলে
একটা দারুণ কনসেপ্ট আছে, এক্সিকিউট করতে পারো…
অংশু ওর দিকে তাকায়।
এই জন্যই তো তোমার কাছে আসি। তুমি হোচ্ছ গিয়ে আমার আইডিয়ার খনি।
আবার শুরু করলে…
ওকে বলো, আমি চুপ করে শুনছি
চলো বেরিয়ে পড়ি। কাল অফিস বাঙ্ক মেরে দেব।
তাহলে চলো কোথাও একটু বসে বিয়ার খেতে খেতে ডিসকাস করা যাবে। আজ তো বাহনও এনেছি, সো নো চাপ…
রাত্রি হাসে।
এই হাসির মানে জানে অংশু।
ওর বস অরিত্রকে ফোন লাগায়
গুরু, স্টোরি পেয়ে গেছি। হ্যাঁ, একদম কারেক্ট আছে। শোনো না দিন তিনেক একটু ডেভেলপ করতে সময় লাগবে। অফিস আসবো না। তুমি একটু ম্যানেজ দিয়ে দিও প্লিজ। আরে চাপ নিও না নেক্সট উইকেই শ্যুটে চলে যাবো…সবই তো বোঝো। ওদিকটা একটু সামলে দাও, আমি তো তোমাকে হিট দেব। বলছি তো ফাটাফাটি কনটেন্ট…
রাত্রি হ্যাঁ করে এতক্ষণ অংশুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। বোঝার চেষ্টা করছিল ফোনের ওপারে অংশুর বসের এক্সপ্রেশন।
এই গল্পটা রাত্রির খুব চেনা। এটা হলো অংশুর পেটেন্ট সিগনেচার।
ফোনটা রাখার পর আরও একবার অংশুর দিকে তাকায় রাত্রি। লাস্ট পাফটা নিয়ে ব্যালকনির রেলিংয়ে সিগারেটটাকে বার দুই ঘসে। তারপর দু-আঙুলের নিশানায় শূন্যে ছুঁড়ে দেয়। এর মধ্যে একটা পৈশাচিক সুখ আছে। ধোঁয়াটা অংশুর মুখের ওপর ছেড়ে বলে
চুতিয়া শালাহ…
ক্রমশ…
ইলাস্ট্রেশন- গুগল 
শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page