ভাদু ভদ্রাবতী।। ডঃ আদিত্য মুখোপাধ্যায়
কাশীপুরের রাজা গো
সে করে ভাদুর পুজো
কে এই ভাদু? কাশীপুরের রাজা কেন এই ভাদুর পুজো করেন? সমগ্র রাঢ় -বাংলাতেই ভাদু পুজোর প্রচলন আছে। ভাদ্র মাসের প্রথম দিনটি থেকেই শুরু হয়ে যায় ভাদু পুজো। মাসের শেষদিন বিসর্জন। শেষের আগের দিন জাগরণের নিশি। ভক্ত কন্যাদের কষ্টের রাত।
ভাদুকে নিয়ে তিনটি গল্প আছে। তবে সবখানেই তাকে রাজকন্যা বলা হয়েছে। যদিও পুরুলিয়ার কাশীপুর রাজের কথাই বেশি এসেছে গল্পে,গানে।
কাশীপুরের রাজার বিটি
বাগদিঘরে কী করো,
হাতের জালি কাঁখে লয়ে
সুখসায়রে মাছ ধরো।
এই কাশীপুর রাজার এক সর্বগুণ সম্পন্না কন্যা নাকি বিয়ের দিনই মারা গিয়েছিল। অন্যত্র পাই, রাজকন্যার বিয়ের রাতেই নাকি আসার পথে বরকে আক্রমণ করে ডাকাতদল। বরকে হত্যাও করে তারা। এই শুনেই রাজকুমারী আত্মহত্যা করে। আর একটি গল্পে আছে,বিয়ের রাতে শুধু আত্মহত্যার কথা। এই রাজকুমারীর নাম ছিল ভদ্রেশ্বরী ভদ্রাবতী। তাকে সবাই আদর করে ভাদু বলেই ডাকত। সে ছিল খুব জনপ্রিয়। ধনী ঘরে জন্মেও দরিদ্রদের ঘরে ঘরে তার যাতায়াত। গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসে। রাজাও তখন কন্যাকে জনমানসে বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট হন। বাগদি বাউড়িদের মতো মানুষেরা আদরের ভাদুর পুজো করতে শুরু দেয়। বীরভৃমে ভাদুগানে হেতমপুরের রাজকন্যাও বলা হয় কোথাও কোথাও।
তারপর থেকেই ভাদু মূর্তি গড়ে সারা ভাদ্রমাস চলে ভাদু পুজো।
মূলত কুমারী ভাদুর পুজো করে গানে গানে বাউড়ি-বাগদি-লেট-মালদের ঘরের কুমারী মেয়েরা।তবে পরবর্তীকালে ভাদু মূর্তি গড়ে তাকে কোলে নিয়ে আর একটি ছোট্ট মেয়ে,কখনও কখনও নারীর সাজে পুরুষ ঝুমুর নাচের মতো একটি নাচ দেখায়।দলের আর সবাই বাঁশি-কাঁসি-ঢোল বাজিয়ে একটি সুন্দর লোকগান পরিবেশন করে। তাতে কিছু আয়ও হয়।
ভাদ্র মাস এমনিতেই বসে থাকার মাস। কাজ থাকেনা হতে। তারপর এই করোনার কালে তো সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও করুণ।
ভাদু এখন কৃষিলক্ষ্মী। মানবী দেবী।
তবে তার মৌলিক গানগুলি লোকসংস্কৃতির বিশিষ্ট উপাদান। এগুলি এখনই সংরক্ষণ করা দরকার।না হলে পাঁচমিশেলি হয়ে পড়লে সঠিক ভাদুগানটিই আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
ভাদু চায় ম্যাক্সিজামা
তুমরা কেহু মানা করোনা,
জামা পরে যাবে ভাদু
রামপুরহাটে সিনেমা।
বীরভূম পুরুলিয়া বাঁকুড়া বর্ধমান হুগলি মুর্শিদাবাদের অতি সমান্য অঞ্চলে ভাদু পুজো, ভাদু গান এখনও কোনমতে টিকে আছে
গ্রামীণ নারীর অবরুদ্ধ সঙ্গীত হিসেবে।যদিও সব হিসেব এখনই আর মিলছে না।