অতীতের পুজোবার্ষিকীর কথা
পিনাকী চৌধুরী।। একবিংশ শতাব্দীর এই চরম গতিময় যুগেও বোধহয় পুজো আর পুজোবার্ষিকী সমার্থক । বস্তুতঃ এই প্রতিবেদক এখনও বছরভর অপেক্ষা করে থাকে পুজোবার্ষিকী কখন ঘরে আসবে ! সত্যি, নতুন সেইসব বইয়ের পাতা উল্টালেই মন মাতাল করা গন্ধ আজও আমাকে আচ্ছন্ন করে ! উপরি পাওনা হিসেবে বিদগ্ধ লেখকদের উপন্যাস, গল্প তো রয়েছেই !
তথ্য বলছে আজও সারা বিশ্বে কমবেশি প্রায় পাঁচ হাজার শারদীয়া পত্রিকা ( বাণিজ্যিক, অবাণিজ্যিক এবং সাময়িক পত্রিকা ) প্রকাশিত হয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে । তবে এই সংখ্যাটা ম্যাগাজিন ও ই ফরম্যাটে মিলিয়ে । তবে এই ২০২১ সালে পুজোর প্রায় আড়াই বা তিন মাস আগে এসেও আজ আমার বলতে দ্বিধা নেই যে , সাহিত্য সমৃদ্ধ, বাহুল্য বর্জিত গল্প , প্রবন্ধ আজ পুজো বার্ষিকীতে ভীষণ ভাবে অনুপস্থিত ! পরিবর্তে থাকে রগরগে লেখা এবং অনেকক্ষেত্রেই সেই লেখাগুলো যেন টেনে হিঁচড়ে বড় করে পাঠকদের সামনে উপস্থাপিত করা হয় ।
কলকাতার প্রথম পুজো বার্ষিক প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে , যদিও সেই ধারণাটি সর্বজনীন হয়ে উঠতে বেশ কিছুটা সময় নিয়েছিল। আসলে তদানীন্তন সময়ে ব্রাহ্ম কুলপতি কেশবচন্দ্র সেন ‘সুলভ সমাচার ‘ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। তবে ১২৮০ বঙ্গাব্দে দুর্গোৎসবের সময় সেই পত্রিকার সঙ্গে একটি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। নামটিও ছিল বেশ অভিনব ‘ ছুটির সুলভ ‘ ! বাস্তবে এই পত্রিকা বাংলায় প্রথম পুজো বার্ষিকী । ভাবছেন তো এর দাম কত ছিল ? বিনিময় মূল্য মাত্র ১ পয়সা ! তবে বিশেষ শারদ সংখ্যার ভাবনাটি কিন্তু ছড়িয়ে পড়তে আরও চল্লিশ বছর সময় লাগে।
১৯১৩ সালে পুরো মাত্রায় প্রকাশিত হয় শারদ সংখ্যা। সৌজন্যে- সাময়িক পত্রিকা ভারতবর্ষ । এর মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ২০০ এবং লেখকসূচিতে ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মত স্বনামধন্য লেখকরা ! সময় থেমে থাকেনি ! তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল ! ১৯২৬ সালে আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠী পুজো বার্ষিকী প্রকাশ করে , যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৫৪ এবং বিনিময় মূল্য ছিল মাত্র ২ আনা ! বস্তুতঃ তারপর থেকেই যেন পালে হাওয়া লাগল ! হু হু করে বাড়তে থাকে পুজো বার্ষিকীর একচেটিয়া আধিপত্য ! সেই সময় ১৯৩৯ সালে প্রথম পুজো উপন্যাস ছাপা হয়। তদানীন্তন সময়ে বিদগ্ধ লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শহরতলী ‘ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অপর এক বিখ্যাত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘ ভয়ঙ্কর সুন্দর ‘১৯৭৯ সালে শারদীয়া আনন্দমেলায় প্রকাশিত হয়। আজও যেন অকাল বোধনের ফ্লেবারটিকে আরও বাড়িয়ে দেয় বিভিন্ন শারদ সংখ্যা !