অন্য আঙ্গিকে কাজী নজরুল ইসলাম

পিনাকী চৌধুরী

দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ১২২ তম জন্মজয়ন্তী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জৈষ্ঠ্য বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া তে কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। বাস্তবে শৈশব থেকেই নিদারুণ দারিদ্র্য তাঁকে গ্রাস করে। কখনও লেটো দলের বাদক, কখনও আবার রেল গার্ডের খানসামা , তো কখনও আবার রুটির দোকানের কর্মচারী হয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন । তবে এইবছর করোনা আবহে নজরুল জন্মজয়ন্তী অনলাইনেই পালিত হচ্ছে।

কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য জগতে কিন্তু উল্কা সদৃশ উত্থান ! বলা ভাল, নজরুল ইসলামের কবিতা গুলো কিন্তু স্ফুলিঙ্গের আকারে বাংলা কাব্য জগতে প্রতিভাত হয়েছে।

দাসত্বের শৃঙ্খলে বদ্ধ জাতিকে শোষণ ও উৎপীড়ন থেকে মুক্ত হবার ডাক দিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘বল বীর বল উন্নত মম শির,…যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না -বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত!’

কবি নজরুল ইসলাম সব ধর্মের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে মানবতার জয়গান গেয়েছেন। তাঁর একটি কবিতার বিখ্যাত একটি লাইন ছিল – ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।’

রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা চেয়েছিলেন তিনি।

নজরুল মনে করতেন স্বাধীনতার পথে প্রধান বাধা সাম্প্রদায়িক সংঘাত। সেইজন্য তিনি দুর্গম গিরি কান্তার মরু গানে বলেছিলেন – হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন? কাণ্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার। উপমহাদেশের রাজনৈতিক নেতারা, প্রধান যে সমস্যা- সাম্প্রদায়িক সমস্যা সেইদিকে মনোনিবেশ করেননি বলেই ভারত টুকরো হয়েছে।”

নবযুগ নামে একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৯২০ সালে। অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন এ.কে. ফজলুল হক। এই পত্রিকার মাধ্যমেই নজরুল ইসলাম নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন।

যে রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে একটা নতুন যুগের জন্ম দিয়েছিলেন বলে বলা হয়, সেই রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই নজরুল বাংলা সাহিত্যে আরেকটা যুগের সূচনা করেছিলেন।

নজরুল ছিলেন সব ধর্মীয় চেতনার ঊর্ধ্বে। অন্তরে তিনি না ছিলেন হিন্দু না ছিলেন মুসলিম। তাঁর একটি কথাতেই এটা ছিল পরিষ্কার- ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত খেলছো জুয়া’।

তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটকও রচনা করেছিলেন। বাংলা ভাষায় একটা নতুন প্রাণ নতুন তারুণ্য নিয়ে এসেছিলেন। সৃষ্টি করেছিলেন নিজস্ব ভাষার, যে ভাষার মধ্যে তিনি দেশজ বাংলার সঙ্গে সফলভাবে ঘটিয়েছিলেন বহু আরবি ও ফারসি শব্দের সংমিশ্রণ।

পরবর্তী সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের গান অনেকটাই ভিন্ন ভাবধারার পরিচয় করায়। অনেকটাই সুরপ্রধান সেই গান কাব্যগ্রন্থকে সমৃদ্ধ করে সুরের লহরীকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা করেছিলেন এবং অধিকাংশ গানে নিজেই সুরারোপ করেছিলেন যেগুলো এখন “নজরুল গীতি” নামে বিশেষ জনপ্রিয়।

গজল, রাগপ্রধান, কাব্যগীতি, উদ্দীপক গান, শ্যামাসঙ্গীত, ইসলামী গান বহু বিচিত্রধরনের গান তিনি রচনা করেছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে নজরুল ইসলাম কারাগারেও বন্দি হয়েছিলেন।

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page