জার্মানির রহস্যময় এই হোটেলের কথা জানেন কি?
রহস্যে মোড়া হোটেল। এই হোটেলটি জার্মানির বাল্টিক সাগরের দ্বীপে অবস্থিত। যা প্রায় ৭০ বছর ধরে অব্যবহৃত। যেখানে রয়েছে ১০ হাজার বেডরুম। কিন্তু কোন অজানা কারণে এটি ব্যবহৃত হয়নি? কেনই বা এভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তা আজও ধোঁয়াশায়।
হোটেলের রুম থেকে সুন্দর বাল্টিক সাগরকে উপভোগ করা যেত। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত এই হোটেলটি তৈরি করা হয়েছিল। জার্মানির নাৎসি বাহিনী এটি তৈরি করেছিল শক্তি জাহির করতে। যার উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিকদের অবসর কাটানো। যেখান থেকে তারা নাৎসি কর্মকাণ্ড প্রচার করতে পারেন।
স্থানীয় মানুষেরা এই হোটেলটিকে ‘প্রেরাকে কলসাস’ নামে ডেকে থাকেন। তার কারণ এই হোটেলটি স্মৃতিসৌধের মতো আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ৮টি আলাদা আলাদা ভবন নিয়ে গড়ে উঠেছে হোটেলটি। যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটারেরও বেশি। ১৫০ মিটার দূরেই সমুদ্র সৈকত।
জানা গেছে যে, ৯ হাজার শ্রমিক টানা ৩ বছর ধরে এই হোটেলটি তৈরি করেন। এই হোটেলের মধ্যে সিনেমা হল, কনফারেন্স হল এমনকি সুইমিং পুলও রয়েছে। এছাড়া একটি জাহাজও রয়েছে এখানে।
জার্মানির শাসক হিটলার বরাবরই ছিলেন উচ্চাভিলাষী। হিটলার চেয়েছিলেন, হোটেলটি ২০ হাজার বেডরুম নিয়ে তৈরি হোক।যা হবে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ হোটেল। তবে পরে ১০ হাজার বেডরুমের তৈরি করা হয় হোটেলটি। হোটেলের ভেতরে ডিজাইন ও সুযোগ-সুবিধা ছিল অত্যাধুনিক। এই হোটেলের সঙ্গেই তৈরি করা হয় সামরিক হাসপাতাল।
সেইসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। আর হেইল হিটলারের মনও যায় বদলে। কিন্তু হোটেল নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে ছিল তখন। এখানে নিযুক্ত থাকা শ্রমিকদের হিটলার পরবর্তীতে ভি-উইপন্স তৈরির কাজে লাগিয়ে দেন। এরপরে জার্মানির পূর্ব থেকে আসা শরণার্থীদের রাখা হয়েছিল সেখানে।
যুদ্ধ শেষের দিকে হোটেলের একাংশ পূর্ব জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য সামরিক ফাঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯৯০ সালে জার্মান আবার একত্রিত হওয়ার পর কিছুটা অংশ বুন্দেসয়েভরের মিলিটারি টেকনিক্যাল স্কুল এবং পরে বালকান আশ্রয়প্রার্থীদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই হোটেলটিকে।
এরপর ২০১১ সালে হোটেলের এক অংশে ৪০০ শয্যাবিশিষ্ট যুবকদের ছাত্রাবাসে তৈরি করা হয়। ৩০০ শয্যার হলিডে রিসোর্ট চালু করা হয় এরপর। এই রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে টেনিস কোর্ট এবং একটি ছোট শপিং সেন্টারও। কিন্তু এত বছর পর আজও পর্যটনবান্ধব হোটেলের তকমা পায়নি হোটেলটি। বাল্টিক সাগরে ঘুরতে গেলে অনেকেই এই হোটেলটি ঘুরতে যেতে ভোলেন না।