লকডাউন এবং বইপাড়ার দীর্ঘশ্বাস

লিখছেন বুলবুল ইসলাম 

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর কারণে প্রথমবার সকাল ৭-১০টা ও ৩-৫টা এবং দ্বিতীয়বার সকাল ৭-১০টা ও ৫-৭টা পর্যন্ত দোকান বাজার খোলার সুযোগ দিয়ে শহরের অন্যতম লাইফলাইন লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেন নতুন নির্বাচিত সরকার, এরপরের অধ্যায়ে পুরোপুরি লকডাউন শুরু হচ্ছে ১৫দিনের জন্য।

রাজ্যের সকল ধরণের ব্যবসার সঙ্গে বইপাড়াও মারাত্মক অনিশ্চয়তার মুখে পড়লো এই নির্দেশে,অনেকে বলছেন লকডাউন ছিল আবশ্যিক,কিন্তু প্রয়োজন ছিল পরিকল্পনামাফিক লকডাউন।

প্রথমবার যখন ৩-৫টা ও পরবর্তীকালে যখন ৫-৭টা দোকান খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তখন থেকেই বইপাড়া প্রায় হ্যান্ডিক্যাপ হয়ে পড়েছিল কারণ ওই নির্দিষ্ট ঘন্টা ২ এর জন্য বইপাড়ার কাজের সময়সীমা বাস্তবসম্মত নয় তেমনি লোকাল ট্রেন বন্ধের ফলে বইপাড়া আরও বিপদে পড়া শুরু করল। তার ফলে পরিকল্পনা বিহীন লকডাউনের জন্য সাধারণ ছোট বই বিক্রেতাসহ প্রকাশক ও প্রকাশন ও বইবিক্রেতা কেন্দ্রিক রুটি রুজির অসংখ্য মানুষ পড়লেন চরম বিপদে,এমনিতেই গত বছরের লকডাউন ও আমফান এর ঝড়ে বইপাড়া মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। সরকারি কোনো সাহায্য ছাড়াই বইপাড়া সাধারণ বইপ্রেমী পাঠক-পাঠিকা,লেখক-লেখিকা শিল্পী বুদ্ধিজীবীদের সাহায্য ও সহায়তার মাধ্যমেই একটু একটু করে জেগে ওঠার চেষ্টা করছিল।

কিন্তু বাস্তবিকভাবে তেমনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ বইপাড়া প্রায় পায় নি বললেই চলে,কারণ নতুন বই প্রকাশের যে ঢেউ কলকাতা বইমেলাকে কেন্দ্র করে দেখা যেত এবছর তাও যেমন হয়ে ওঠেনি তেমনি সরকারি কোনো প্রকল্প বা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বইপাড়া ছিল ব্রাত্য।

সাধারণভাবে প্রতি বছর যে সংখ্যায় নতুন বই প্রকাশ পায় তার ৫%নতুন বই এবছর দেখা যায়নি,বেশ কিছু বড় ও মাঝারি প্রকাশকরা কিছু নতুন বই প্রকাশ করতে পেরেছেন ঠিকই কিন্তু সেটাও অন্যান্য বারের তুলনায় অত্যন্ত কম,কলকাতা বইমেলাকে কেন্দ্র করে যে বাজার তৈরি হয় প্রতি বছর, এবছর সেটাই গড়ে ওঠেনি কারণ কলকাতা বইমেলাই এখনো হয় নি।তার সঙ্গে অনলাইন এর মাধ্যমে পাঠক পাঠিকার হাতে বই পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা সম্মিলিতভাবে না হলেও বিক্ষিপ্তভাবে করা গেলেও সেটা পুরো বইপাড়ার বাজার এর তুলনায় খুবই কম,তার সঙ্গে স্কুল কলেজ প্রায় বন্ধ,সবই চলছে প্রায় অনলাইন এর মাধ্যমে, এর ফলে স্কুল কলেজের বই বিক্রয়ের অবস্থাও অস্বাভাবিকভাবে কমেছে,এই অবস্থায় এত বিপুল সংখ্যার মানুষ যে বইপাড়াকে কেন্দ্র করে জীবন জীবিকা গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা বিপদে পরে অশনি সংকেত দেখছেন,তার উপরে মরার উপরে খাঁড়ার ঘা এর মত লকডাউনের ধাক্কায় পৃথিবী বিখ্যাত আমাদের গর্বের বইপাড়া যেন ভেন্টিলেশনে।
অথচ সারা রাজ্যের শিক্ষা সংস্কৃতির প্রাণভোমরা কিন্তু এই বইপাড়াই,মহামারীর সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে যদি আমাদের মস্তিষ্কের অন্যতম অক্সিজেন শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব না দেওয়া হয়,বুদ্ধির চাষের জমির প্রতি যদি রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার এর মাধ্যমে কোনো গঠনমূলক ভূমিকা ও পরিকল্পনা দ্রুত না তৈরি হয় তবে প্রায় নির্জীব বইপাড়া থেকে প্রিয় কলেজস্ট্রিটকে আবার আগের পরিবেশে ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে উঠবে..

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page