ছদ্মনামের আড়ালে
পিনাকী চৌধুরী।। এ যেন ঠিক নিজের আসল পরিচয় গোপন রেখে অন্য নামে নিজেকে মেলে ধরা! তবে অষ্টাদশ শতাব্দীতে সংবাদ পত্র এবং বিভিন্ন সাময়িক পত্রিকায় প্রথম ছদ্মনাম ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। তবে তা ছিল মূলত রাষ্ট্রশক্তি এবং অবশ্যই রাজনৈতিক শক্তিগুলোর থেকে বাঁচবার অছিলায়। এই প্রসঙ্গে বলি, ছদ্মনাম যে শুধুমাত্র বিভিন্ন স্বনামধন্য লেখকরাই ব্যবহার করেন তা নয়, বরং আজকাল বহু অভিনেতা, অভিনেত্রী এবং অবশ্যই ইন্টারনেট হ্যাকারদের প্রধান আশ্রয়স্থল হিসেবে এই ছদ্মনাম ব্যবহৃত হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৈশোর কালে ‘ ভানুসিংহ’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। এছাড়াও কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘ অনিলাদেবী ‘ এই ছদ্মনামেই বিখ্যাত ছিলেন। মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায় স্বনামধন্য লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন ‘ শংকর’ নামে । আর গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী তো ‘ মিঠুন চক্রবর্তী ‘ নামেই তামাম ভারতবর্ষকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে দীপক চক্রবর্তী রাতারাতি ‘ চিরঞ্জীত ‘ নামেই স্বনামধন্য হলেন। চুমকি রায় হলেন ‘ দেবশ্রী রায় ‘! রীণা দাশগুপ্ত পরিচিত হলেন অপর্ণা সেন নামে। অন্যদিকে বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা অক্ষয়কুমারের আসল নাম রাজীব ভাটিয়া। অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় উত্তমকুমার নামেই বাঙালির আইকন হলেন। এছাড়াও কেদারনাথ ভট্টাচার্য কুমার শানু নামেই বিখ্যাত গায়ক হিসেবে সুপরিচিত হলেন। জানেন কি লঙ্কেশ্বর রাবণের আসল নাম দশগ্রীব ! আরও তাৎপর্যের বিষয় হল রাবণ নামটি কিন্তু দিয়েছিলেন স্বয়ং শিব ! এরকম ভাবেই তালিকা আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।
যাইহোক ইদানিং ইন্টারনেটের ব্লগেও আজকাল অনেকেই ছদ্মনাম ব্যবহার করে কোনও স্পর্শকাতর বিষয়ে অথবা রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে মতামত পোষণ করেন। তবে আজকাল বিখ্যাত মানুষ ব্যাতিরেকে অতি সাধারণ মানুষও, এমনকি অনেক সন্ত্রাসবাদী ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। এছাড়াও অনেক প্রতিবাদী কন্ঠস্বর ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে পিতৃদত্ত পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মনাম ব্যবহারকারীরা বাকি জীবনটা অন্য নামেই কাটিয়ে দেন ।